Congress vs TMC : বাংলায় কংগ্রেস তৃণমূল জোট হলে আখেরে ক্ষতি হবে তৃণমূলের!
সেখ ইবাদুল ইসলাম: বিজেপি বিরোধী তথা মোদি বিরোধী জোট ইন্ডিয়া দেশজুড়ে সক্রিয় হয়েছে। আজ ১৭ ই সেপ্টেম্বর সমগ্র দেশ জুড়ে যখন বিজেপি বিশ্বকর্মা প্রকল্প চালু করছে। মোদি মন্ত্রী সভার ৭০ জন সদস্য দেশের ৭০ টি শহরে এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। দেশজুড়ে হিন্দুত্বের প্রচার অব্যাহত রেখেছে অভিনব কায়দায় এই কর্মসূচি চলছে। দেশের সংখ্যালঘু সমাজকে ভয় দেখিয়ে সন্ত্রস্ত করে দেশে সাম্প্রদায়িক প্রচারের লক্ষ্যে বিজেপি যখন এগিয়ে চলেছে ঠিক তখনই কংগ্রেস সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে হাজির।
আজ ১৭ ই সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদ দিবস এই দিনকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে হায়দ্রাবাদের স্বীকৃতির সাফল্যকে কংগ্রেস সামনে আনতে চাইছে। অন্যদিকে আগামী দুসরা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী আন্দোলন শুরু করতে চলেছে কংগ্রেস। ভারত জোড়ো যাত্রার মধ্য দিয়ে যে কংগ্রেস দল দেশজুড়ে সংহতি সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল তা এখনো দেশের মানুষের মনে টাটকা। মহাত্মা গান্ধীর পর এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথম অন্তত স্বাধীন দেশে এত বড় গণআন্দোলন গড়ে তুলেছেন রাহুল গান্ধী। আর এই গণ আন্দোলনের ফলেই কর্নাটকের মত আরএসএসের পরীক্ষাগারে আর.এস এস ধুলিস্যাৎ হয়েছে।
অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের একাধিক শরিক দাবি করছে যত দ্রুত সম্ভব আসন রফা কার্যকর করতে। ১৬ই সেপ্টেম্বর শনিবার দিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে একের বিরুদ্ধে একপ্রার্থী দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওয়ার্কিং কমিটির এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সমগ্র দেশ জুড়ে তার প্রভাব পড়ার কথা। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য রাজনীতির অংকের কাছে নিজেদের লাভ-ক্ষতির হিসাব মিলাতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে জোট ধর্ম পালন না করে আগ্রাসী মানসিকতা নিয়েছে তাতে যে এই বাংলায় জোট ভেঙ্গে যাবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কারণ তৃণমূল কংগ্রেসের সূত্রে আমাদের কাছে যে খবর এসেছে তাতে জানা যাচ্ছে মাত্র দুটি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে পারে তৃণমূল। এই ধরনের একগুয়েমি মানসিকতা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব চললে এই রাজ্যে যে বিজেপির সুবিধা হয়ে যাবে তার বলার অপেক্ষায় রাখে না। যদিও তৃণমূলের সঙ্গে এই রাজ্যে বিজেপির কোন তফাৎ নেই। কয়েক বছর আগেও যিনি বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে বসে, প্রতিদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে টার্গেট করে বিবৃতি দিতেন সেই ভদ্রলোক এখন আবার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি ভাবতে অবাক লাগে! যে দলের রাজনৈতিক আদর্শ এই জায়গায় টিকে রয়েছে সেই দলের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস কতটা থাকবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে!
এই প্রেক্ষাপটে যদি এআইসিসি দিল্লি থেকে জোর করে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসকে জোট করতে বাধ্য করায় সেক্ষেত্রে জোট হলেও তার আন্তরিকতা থাকবে না। আর এর ফলে এই রাজ্যে সুবিধা হবে বিজেপির। তৃণমূল নেতৃত্ব এটাই চাইছে মনে মনে কারণ এই দলটার একাধিক নেতার সঙ্গে বিজেপি দলটার যোগাযোগ যে রয়েছে সে ব্যাপারে কোন সংশয় থাকার কথা নয়। সুতরাং আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট যে হবে না সেটা এক কথায় বলে দেওয়া যায়। আর যদি জোর করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নিজস্ব যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট করতে বাধ্য করায় তাতে কিন্তু ক্ষতি হবে তৃণমূল কংগ্রেসের।
এই রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজের একটা বড় অংশ এখন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বাংলার জনরব এ কথাটি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসলেও তা কিন্তু মমতা সরকার কিংবা তার দলের নেতারা বিশ্বাস করছেন না। কিন্তু বাস্তব হলো এ রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজের ভোট ব্যাংকের প্রায় অর্ধেকটা তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে সরে গেছে। এই অর্ধেক মুসলিম ভোট বাম এবং কংগ্রেসের মধ্যে ভাগ হয়েছে বেশিরভাগ অংশটা কংগ্রেসের দখলে গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জায়গাটায় নজর দিয়েছেন তিনি ভাবছেন যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলে এই মুসলিম ভোটটা আমার সঙ্গে চলে আসবে। হিসাব বলছে তা সম্ভব নয় যদি কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট হয় সেক্ষেত্রে এই ভেঙে যাওয়া মুসলিম ভোট সিপিএমের দিকে বা বামেদের দিকে আর দক্ষিণবঙ্গে পুরো মুসলিম ভোটটাই চলে যাবে নওশাদ সিদ্দিকীর দিকে। ফলে যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে চাইছে কিংবা ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিয়েছে তা কোনোভাবেই সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কারণ মুসলিম ভোট ভাগাভাগি হলে আর কংগ্রেসকে যদি অপমানজনক শর্তে এই জোটে সামিল করা হয় তাহলে আর যাই হোক তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ২২ টা থাকবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। উলুবেরিয়া বসিরহাট থেকে শুরু করে ডায়মন্ড হারবার এর মত হেভি ওয়েট লোকসভা কেন্দ্র দখলে রাখা যে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে কঠিন হবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সুতরাং জোট ধর্মকে বজায় রাখার জন্য জ্যোতিবাবুর কায়দায় জোট ধর্ম পালন করতে হবে। যদি তা না করে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের ক্ষমতার ঔদ্ধত্য এ কংগ্রেসকে তাচ্ছিল্য করে তাহলে তার ফল ভুগতে হবে তৃণমূলকেই। কারণ মনে রাখতে হবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক পরামর্শদাতারা যাই পরামর্শ দিক না কেন এটাই স্পষ্ট হয়েছে নওশাদ সিদ্দিকীর মত একজন ধর্মনিরপেক্ষ বিধায়ককে দিনের পর দিন জেলে আটকে রাখার ফলে এবং আদালতের রায়ে জেল থেকে বের হওয়ার পরেও যেভাবে নওশাদকে প্রতিদিন হেনস্থা করা হচ্ছে তা এই রাজ্যের সচেতন নাগরিকরা ভালোভাবে মেনে নিচ্ছেন না। এর প্রভাব যে আগামী লোকসভা নির্বাচনে পড়বে তা নিয়ে কোন সংশয় নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল দেখে যদি তৃণমূল নেতারা উচ্ছ্বসিত হন তাহলে তাদের কাছে যে বিপদ আরো বাড়বে, সেটা বোঝাটাই হচ্ছে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।
তাই ইন্ডিয়া জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দিয়ে আসলে কোন লাভ তার দলের হবে বলে আমাদের মনে হয় না। এই রাজ্যের আসন সংখ্যা যদি তৃণমূল কংগ্রেসকে বাড়াতে হয় তাহলে সম্মানজনক শর্তে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যেতে হবে আর তা যদি না করে কংগ্রেসকে ভিক্ষা দেওয়ার মতো জোটে নেয়। তার ফল যে কত বিষময় হতে পারে সেটা বোঝা যাবে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের পরে।