সাগরদিঘী থেকে রানীনগর জনাদেশকে অগ্রাহ্য করার তৃণমূলের প্রবণতা, লোকসভাতে ইন্ডিয়া নয়, বিজেপি এগিয়ে থাকবে বাংলায়!
বুলবুল চৌধুরী: জনাদেশকে অগ্রাহ্য করার প্রবণতা বিজেপির মধ্যে প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে আর তার প্রভাব অনেকটাই পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের উপর। বাংলার রাজনীতির সংস্কৃতিতে দলবদলকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়। একটা সময় প্রবলভাবে যারা দল বদল করতেন তাদেরকে সাধারণ মানুষ ঘৃণার চোখে দেখতেন। আজ অবশ্য সবটাই পাল্টে গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে এই রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনেকটাই বদল হয়েছে। এই রাজ্যে সর্বপ্রথম স্বাধীনতার পর দলবদলকে কার্যত অভ্যাসে পরিণত করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস যেমন কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলবদলটা তাদের কাছে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
এদিকে এই প্রবণতার ফলেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তার এজেন্সি গুলোকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দিয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকারকে ফেলা হয়েছে, মধ্যপ্রদেশ সরকারকে ফেলা হয়েছে, কর্নাটক সরকারকে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ যেখানে স্বল্প গরিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধী দল সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে সেখানেই সরকারকে ভেঙে ফেলা হয়েছে বা ঘুরপথে বিজেপি সরকার গঠন করেছে। যা এক কথায় ভারতীয় গণতন্ত্রের কাছে লজ্জা বলে আমাদের মনে হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে মাওলানা আবুল কালাম আজাদরা এই সংস্কৃতি তৈরি করতে বলেননি।
এ যেন ক্ষমতার দম্ভে সাধারন মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে এই স্বাধীনতা তো দেশের মানুষ চাননি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কথায় কথায় বিজেপির সমালোচনা করেন কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য বিজেপির আদর্শকে তিনি তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালনা করেন। আর আমরা সকলেই জানি বিজেপির আদর্শ আরএসএসের আদর্শ। তাহলে ঘুরিয়ে যদি এ কথা বলা হয় গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সিস্টেমের মধ্য দিয়ে এদেশে আরএসএস যে নীতি প্রয়োগ করার চেষ্টা করে চলেছে তা থেকে কোনভাবেই ব্যতিক্রম নয় তৃণমূল কংগ্রেস।
তা না হলে ২০১১ তে ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে শুধুমাত্র একটি রাজ্যসভার আসনকে দখল করতে হবে এই ইচ্ছাকে সম্বল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল যেভাবে বামফ্রন্টের শরিক দলে ভাঙ্গন ধরিয়েছিলেন তা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়েছিল জনাদেশ নয় ক্ষমতার দম্ভই বড়। তারপর থেকে আর ফিরে দেখতে হয়নি আস্তে আস্তে কংগ্রেসকে শূন্য করা হয়েছে। এই রাজ্যে বামেদেরকে শূন্য করা হয়েছে বিরোধীদল হিসাবে বিজেপিও যে এই রাজ্যে ভালো নেই তা বলার অপেক্ষায় রাখে না। কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক সাগরদিঘী থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে যেভাবে যে কায়দায় দলে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস তা এক কথায় গণতন্ত্রের সমস্ত শিষ্টাচারকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদের একটি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করতে পেরেছিল বাম কংগ্রেস। আর এই পঞ্চায়েত সমিতির দখল নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যেভাবে মুর্শিদাবাদ রক্তাক্ত হয়েছিল তা কহতব্য নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের আগ্রাসী মানসিকতা প্রশাসনের একটা অংশের চাপ একটিমাত্র পঞ্চায়েত সমিতিকে বাম কংগ্রেসের হাতে ছাড়া যাবে না যে পণ তৃণমূল কংগ্রেস নিয়েছে তাও এককথায় বিজেপির আদর্শ বলে আমাদের মনে হয়েছে। এর ফলে আর যাই হোক এই রাজ্যের গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার মূল্যবোধ যে বিনষ্ট হচ্ছে তার বলার অপেক্ষায় রাখে না। অন্যদিকে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি দখলের লক্ষ্যে যেভাবে নির্বাচিত বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের লোভ দেখানো হচ্ছে তা এক কথায় জনা দেশকে অবজ্ঞা করা।
সব মিলিয়ে একথা স্বীকার করতেই হবে বাংলার রাজনীতি আকাশে কালো মেঘ ঘনীভূত। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে দল বদল হয়তো ঘটেনি কিন্তু তারা যেভাবে একের পর এক বিরোধী দলগুলিকে খতম করার চেষ্টা করেছিল তার ফলশ্রুতিতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই রাজ্য থেকে বামফ্রন্ট শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন গণ আন্দোলনের নেত্রী তিনি যেভাবে এই রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তম নেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন শুধুমাত্র তাঁর একাধিপত্ব আগ্রাসী মানসিকতা এবং ক্ষমতার লোভ এই রাজ্যের রাজনীতির আকাশকে যেভাবে কলুষিত করল আগামী দিনে আরও বড় সংকট মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিজেপি বিরোধী যে জোট তৈরি হয়েছে পশ্চিমবাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দলের ফলে এই জোট যে বড় ধাক্কা খাবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারণ মনে রাখতে হবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস যা করেছে তার ফল তাদের ভুগতে হবে। কারণ এখানে ইন্ডিয়া জোট কার্যকর হবে না এই কার্যকর না হওয়ার নেপথ্যে থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতার লোভ। অন্যদিকে কংগ্রেস এবং সিপিএমকে যেভাবে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে মমতা সরকার এবং তার দল শেষ করার চেষ্টা করছে আখেরে এই দলের কর্মীরা দলে দলে বিজেপির সমর্থক হয়ে যাবে। ফলে এই রাজ্য থেকে লোকসভা নির্বাচনে অনেক বেশি আসন যদি বিজেপি পায় তার জন্য দায়ী থাকবে স্বয়ং তৃণমূল কংগ্রেস।