কলকাতা 

Leaps and Bounds ED : লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ইডি আধিকারিক সংস্থার কমপিউটারে বসে মেয়ের হস্টেলে খোঁজখবর, কলকাতা পুলিশকে জানাল ইডি, অফিসের কাজে গিয়ে কেন ব্যক্তিগত কাজ করলেন আধিকারিক! নেপথ্য রহস্য?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : তদন্ত করতে ‍গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কাজ অন্যের কমপিউটার থেকে করাটা যে একজন পাবলিক সার্ভেন্টের পক্ষে শোভনীয় তো নয়ই বরং এক প্রকার প্রতারণা বললে কম বলা হবে না । সরকারি কাজে গিয়ে এই ধরনের কাজ করার জন্য ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে মেয়ের হস্টেলের খোঁজখবর নিতেই কমপিউটারে কাজ করা হচ্ছিল বলে সাফাই দেওয়া এক প্রকার অপরাধ । ইতিমধ্যেই আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশি চালাতে গিয়ে  ১৬টি ফাইল ওই সংস্থার অফিসে ডাউনলোড হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন ওই সংস্থার এক কর্মী।

ইডি তল্লাশি চালিয়ে চলে যাওয়ার পর সংস্থার কম্পিউটারে ১৬টি অচেনা ফাইল ডাউনলোড হয়েছে, অভিযোগ নিয়ে গত শুক্রবার থানায় গিয়েছিলেন লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের কর্মী চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর শুক্রবারই পুলিশ আলিপুরে সংস্থার অফিসে যায় এবং প্রাথমিক ভাবে তদন্তের পর সংস্থার দু’টি কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করে লালবাজারে নিয়ে আসে। চন্দনের অভিযোগ ছিল, ইডি আধিকারিকেরা ওই মাইক্রোসফ্‌ট এক্সেল ফাইলগুলি তাদের কম্পিউটারে ডাউনলোড করে দিয়ে গিয়েছেন। কারণ, সংস্থার অন্য কোনও কর্মী এই কাজ করেননি।

Advertisement

লালবাজারে অভিযোগ জমা পড়ার পর শনিবারই ইডির তরফে পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। তারা কমিশনারকে লেখা চিঠিতে এক আধিকারিকের কথা জানিয়েছেন। ইডির দাবি, লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের যে অফিসে গত সোমবার তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল তাদের দল, সেখানকার একটি কম্পিউটারে ইডির এক আধিকারিক নিজের মেয়ের হস্টেল সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। ওই আধিকারিকের মেয়ে সম্প্রতি শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছেন। সেখানকার হস্টেলের জন্য গত ১৪ অগস্ট আবেদনও জানিয়েছেন। ২৩ তারিখ থেকে তাঁর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। ইডি জানিয়েছে, যাদবপুরের হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর পর থেকে র‌্যাগিং নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন ওই আধিকারিক। তাই লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসের কম্পিউটারেও ওই কলেজের ওয়েবসাইট খুলে হস্টেল সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছিলেন। সংস্থার অন্য কর্মীদের সামনেই এই কাজ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইডি। ঘটনাস্থলে ছিল সিসি ক্যামেরার নজরদারিও।ইডির বক্তব্য, হস্টেল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়েই কোনও ভাবে ওই ১৬টি এক্সেল ফাইল ডাউনলোড হয়ে গিয়ে থাকবে। ওই কম্পিউটার তল্লাশির সময় বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। তাদের কোনও দুরভিসন্ধি ছিল না।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থায় প্রায় ১৮ ঘণ্টা তল্লাশি চালায় ইডি। ইডি সূত্রে খবর, এই সংস্থায় উচ্চ পদে কাজ করতেন নিয়োগ মামলায় ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তল্লাশির পর সংস্থার কর্মী চন্দনের মোবাইলও বাজেয়াপ্ত করা হয়। লালবাজারে চন্দন দাবি করেছেন, তল্লাশির সময় কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকেরা। সে সময়ই কিছু ফাইল তাঁরা ডাউনলোড করে নেন।

সোমবার সুজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন আরও দু’টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে একটি প্রকল্প এলাকা এবং লি রোডে সুজয়কৃষ্ণের মেয়ে এবং জামাইয়ের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। একযোগে তিন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়। বিষ্ণুপুর এবং লি রোডে তল্লাশির কাজ শেষ হলেও আলিপুরের অফিসে তল্লাশি গড়ায় ভোর পর্যন্ত। ইডি সূত্রে খবর, সুজয়ের সংস্থা এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গে লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। ইডির চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ২০২০-২১ সালের মধ্যে সুজয়কৃষ্ণের এসডি এন্টারপ্রাইজ়ের সঙ্গে লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডসের ৯৫ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে।

লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কর্মী চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে যেভাবে সাফাই দিয়েছেন ইডির এক আধিকারিক তাতে তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে । ইডির মতো ভারতের অন্যতম প্রথম সারির তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ । এখন ইডিকে প্রমাণ করতে হবে তারা ওই ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করেনি । কিন্ত পুলিশের তদন্তে কার্যত ডাউনলোডের কথা স্বীকার করে নিয়েছে ইডি । ফলে ইডির তদন্ত নিয়ে আবারও প্রশ্ন দেখা দিল ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ