অন্যান্য কলকাতা 

জন্ম শংসাপত্রের অভাবে হাজার হাজার মাদ্রাসা পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ! মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ চাইছে বাঙালি মুসলিম সমাজ

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরি : ২০২৫ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমে যারা দশম শ্রেণি পরীক্ষা দেবেন তাদের নবম শ্রেণির রেজিষ্ট্রশন প্রক্রিয়া অনলাইনে শুরু হয়েছে । আর এতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি । কারণ এবারের রেজিষ্ট্রশন প্রক্রিয়ায় জন্ম-শংসাপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । মাদ্রাসা বোর্ডের অনেক পড়ুয়ার জন্ম-শংসাপত্র নেই , সংখ্যার বিচারে কয়েক হাজার হবে । এক্ষেত্রে এরকম সমস্যা তৈরি হতে পারে আগেই এই বিষয়ে বেশ কয়েক জন প্রধান শিক্ষক পর্ষদের দৃষ্টি  আকর্ষন করেছিলেন। সেই সময় পর্ষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, জন্ম-শংসাপত্রের জন্য আবেদন করলেই তা গ্রহণ করা হবে । আবেদন পত্রটির নকল কপি প্রমাণ হিসাবে জমা দিতে হবে । মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃপক্ষের এই ধরনের সিদ্ধান্তের কথা বলার আগে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে কথা বলে উচিত ছিল, তা করা হয়নি । ফলে হাজার হাজার পড়ুয়ার অভিভাবকরা নানাভাবে হেনস্থা এবং হয়রানির শিকার হয়েছেন । কয়েক জন দায়িত্বপ্রাপ্ত মাদ্রাসার শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট গ্রাম-পঞ্চায়েত কিংবা কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলারদের যোগাযোগ করলেও তেমন কোনো সুরাহা হয়নি ।

কারণ এই বিষয় যদি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এই সব সংস্থার সঙ্গে কথা বলে নিতেন তাহলে সমস্যা তৈরি হতো না । গরীব দুস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েরা শুধু জন্ম-শংসাপত্রের আবেদন করার জন্য কয়েকশো টাকা খরচ করেও অনেকেই জন্ম-শংসাপত্র পাননি ( সংবাদ পত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে জন্ম-শংসাপত্র) আবেদনও করতে পারেনি । এরফলে কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের শিক্ষাজীবন যে সংকটে পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । এদিকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা সুপার লেট ফাইন দিয়েও ১৮ আগষ্ট শেষ হয়ে গেছে । এই অবস্থায় ছেলেমেয়েরা আরও বেশি সংকটে পড়েছে । এর প্রভাব যে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর পড়বে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।

Advertisement

সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেও মাদ্রাসা বোর্ডের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আলাদা কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি । ফলে এই কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ! যদিও একটি সংবাদ মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বোর্ড সভাপতি বলেছেন, যারা জন্ম-শংসাপত্রের অভাবে রেজিষ্ট্রেশন করতে পারেনি তাদের জন্ম আলাদাভাবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে । তবে কী চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে তা এখনও ষ্পষ্ট হয়নি । যতক্ষণ না পর্ষদের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই রাজ্যের সংখ্যালঘু বাঙালি মুসলিম সমাজের মাদ্রাসার পড়ুয়ারা অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছে ।

এ প্রসঙ্গে সাতঘরা হাই মাদ্রাসা টিচার ইনচার্জ সেখ ইবাদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমাাদের মাদ্রাসার প্রায় ১৫/২০ জনের মতো ছাত্রছাত্রীর রেজিষ্ট্রেশন সময় মতো করা সম্ভব হয়নি ।অনেকে কাগজ পত্র নেই , জন্ম-শংসাপত্রের আবেদন করার মতো । অনেকে আবার এফিডেবিট করে কলকাতা পুরসভায় জমা দিতে গেলে তা নিয়ে রিসিভ করে নিতে চাইছে না । ফলে কঠিন সংকটে মধ্যে আমাদেরকে পড়তে হচ্ছে । যে কয়েক জন ছেলেমেয়ের রেজিষ্ট্রেশন করা এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়নি তাদের কয়েক জন মেধাবিও রয়েছে । তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কলকাতা পুরসভার মেয়র থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়ে সমস্যার কথা জানালেও কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি । তবে ব্যক্তিগতস্তরে কথা বলে ১৪০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মুহাম্মদ আবু তারিক সাহেবের অনেকটাই সহযোগিতা পেয়েছি বলেই আমাদের এখনও পর্যন্ত ১৮১ জন পড়ুয়ার রেজিষ্ট্রেশন করা সম্ভব হয়েছে । তিনি মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন যাতে পিছিয়ে পড়া সমাজের সব ছেলেমেয়ে নবম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন করতে পারেন তার সুব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য ।

এদিকে, ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের রেজিষ্ট্রেশন করতে গিয়ে জন্ম-শংসাপত্রের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না রাখায় বাঙালি মুসলিম অভিভাবকরা যেভাবে হয়রানি শিকার হয়েছে তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিতে আঘাত লেগেছে । এমনিতে নানা কারণে রাজ্যের বাঙালি মুসলিমদের বড় অংশ শাসক দলের প্রতি খানিকটা বিরুপ হয়েছে , এর ফলে সংখ্যালঘু সমাজে আরও খারাপ প্রভাব বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলার জনরব এর জেলা সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েতগুলি গঠিত না হওয়ার কারণে গ্রাম-বাংলার ছেলেমেয়েদের অবস্থা আরও খারাপ । দ্রুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ না করলে এই সমস্যা আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে । তাতে আর যাইহোক অস্বস্তিতে পড়বে তৃণমূল তথা মমতা সরকার ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ