ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা দশ হাজার টাকা করা হোক! কিভাবে সম্ভব? জানতে হলে ক্লিক করুন
সেখ ইবাদুল ইসলাম : আগামী একুশে আগস্ট কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম সমাবেশ করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত থাকবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর এদিন ইমামদের ভাতা বৃদ্ধির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। দুঃখের হলেও সত্য ২০১২ সালে ইমামদের ভাতা আড়াই হাজার এবং মুয়াজ্জিনদের ভাতা ২০০০ করার পর সময়ের বিচারে প্রায় ১১ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা বাড়েনি। মমতা সরকার ইচ্ছা করলেই এই ভাতা বাড়াতে পারতেন । না, মমতা সরকারের দয়ার দান এই ভাতা নয়। পশ্চিমবাংলার বাঙালি মুসলিম ইমামদের মনে রাখতে হবে এই রাজ্যে যে হাজার হাজার কোটি টাকার ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে শুধুমাত্র তার আয় যদি বাড়ানো হতো তাহলে ইমাম মোয়াজ্জেমদের ভাতা একজন সরকারি কর্মচারীর মতো দেওয়া যেতে পারত।
কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য বামফ্রন্ট সরকারের আমলে যা হয়নি, মমতা সরকারের আমলেও তা হয়নি। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যে ক্ষমতায় আছেন বাঙালি মুসলিমদের সিংহভাগ সমর্থনে। শুধু তাই নয়, এই রাজ্যে যে কোন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আসতে গেলে মুসলিম ভোটের উপর নির্ভর করতে হবে এটা এই রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। যে বিজেপি মনে করছে হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করে এ রাজ্যে তারা ক্ষমতায় আসবে সেটা ততক্ষণ সম্ভব হবে না যতক্ষণ না এ রাজ্যের দশ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী বিজেপির পক্ষে সমর্থন দেয়। সুতরাং এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2021 এ ক্ষমতায় আসার পর বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়কে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত করেছে, বঞ্চিত করেছে এবং শোষিত করেছে। আর ওয়াকফ সম্পত্তি বামফ্রন্টের আমলে লুট হলে তৃণমূলের আমলে হয়েছে পুকুর চুরি।
শুধুমাত্র কলকাতা কেন্দ্রিক ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি যদি সরকার সঠিকভাবে পরিকল্পিত মাফিক ব্যবহার করতে পারত তা থেকে যে আয় হতো তাতে এই রাজ্যের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দশ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া সম্ভব হতো। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না বিধানসভা থেকে শুরু করেই রাজভবন হয়ে রাইটার্স বিল্ডিং এবং কলকাতা শহরে একাধিক সরকারি অফিস রয়েছে ওয়াকফ সম্পত্তির জায়গাতে। কলকাতার অভিজাত কয়েকটি ক্লাব ওয়াকফ সম্পত্তির কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য ওয়াকফ বোর্ড এ বিষয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়নি। যার ফলে আয় বাড়ছে না।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন ১০০% হয়ে গেছে বলে যারা দাবি করে থাকেন তাদের কাছে সবিনয়ে আমাদের প্রশ্ন ওয়াকফ সম্পত্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা কি হয়েছে? যদি ব্যবহার করা না হয়ে থাকে তাহলে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়নের দশ শতাংশ কাজ হয়নি বলে চ্যালেঞ্জ রাখলাম। পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সমাজের যারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব রয়েছেন তাদের কজনকে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজ সংখ্যালঘু দফতর চেনেন এবং জানেন তা নিয়েও সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন রয়েছে।
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে ওয়াকফ বোর্ড এবং সংখ্যালঘু দফতর যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন তাহলে এই রাজ্যের ইমাম মোয়াজ্জেনদের ভাতা 10000 টাকা করে দেওয়া সম্ভব হবে। দিল্লি যদি পারে, কর্ণাটক যদি পারে কেরল সরকার যদি পারে পশ্চিমবঙ্গ কেন পারবে না ? এই প্রশ্নটা রাখলাম আগামী একুশে আগস্ট নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে যে সমাবেশ হবে তার আগে বাংলার জনরব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছে ওয়াকফ বোর্ডের আয় বাড়িয়ে এই রাজ্যের ইমাম মোয়াজ্জেমদের ভাতা দশ হাজার টাকা করা হোক। কিভাবে বাড়াবেন আর কিভাবে বাড়াতে পারা যায় যদি এই পরামর্শ দেওয়ার লোক মুখ্যমন্ত্রীর না থাকেন তাহলে আমাদের বলুন আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি ওয়াকফের আয় বাড়িয়ে দেখিয়ে দেবো এই রাজ্যের ইমাম মোয়াজ্জানদের ভাতা ১০০০০ টাকা করা যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলবেন রাজ্যের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ রাজ্যের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে ওয়াকফ সম্পতির আয়ের কোন সম্পর্ক নেই। ওয়াকাফ সম্পত্তির আয় বাড়ানোর জন্য দক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে। যদি দায়িত্ব দিতে পারেন তাহলে অবশ্যই এ রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে, না হলে সবই হবে রাজনৈতিক স্বার্থে,সবই হবে প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়িত আর হবে না।