মুসলিম মেয়েদের লক্ষীর ভান্ডার থেকে এক হাজার টাকা দেওয়ার বিধানসভায় দাবি জানালেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির অস্বস্তিতে শাসক দল
বাংলার জনরব ডেস্ক : তফসিলি জাতি উপজাতি সম্প্রদায়ের মহিলাদের মতই মুসলিম মহিলাদের লক্ষ্যের ভান্ডার প্রকল্পে এক হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব বিধানসভায় রাখলেন তৃণমূল বিধায়ক এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রাক্তন আই পি এস হুমায়ুন কবির। তৃণমূল বিধায়কের মুখে বিধানসভার অভ্যন্তরে একথা শুনে বেশ খানিকটা ঘাটে যায় শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা।
প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন প্রতীচী ট্রাস্টের একটি রিপোর্ট তুলে ধরে হুমায়ুন বলেন, ‘‘মুসলমান মহিলাদের অবস্থা আর্থিক ভাবে ভালো না। আমরা যখন পঞ্চায়েতের ভোট প্রচারে গিয়েছিলাম, তখন ওই ধরনের (মুসলমান) মহিলারা বলছিলেন, “আমরা তো ভোট দিই। আমরা ৫০০ টাকা পাচ্ছি, ওরা (তফসিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মহিলারা) ১০০০ টাকা পাচ্ছে।’’ জবাবে মন্ত্রী শশী বলেন, “ধর্মীয় ভাবে এটা করা হয় না। এটা প্রান্তিক মানুষদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী শুরু করেছেন। এই মুহূর্তে লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তার সংখ্যা ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৩ জন।” জবাবে হুমায়ুন আবার বলেন, “আমি বুঝেছি এটা ধর্মীয় ভাবে হয় না। অন্তত ওবিসি মুসলমান মহিলাদের ১০০০ টাকা করে দেওয়া হোক।” এমন প্রশ্নের পরেই তৃণমূলের মন্ত্রী এবং শাসকদলের বিধায়কদের প্রশ্নের মুখে পড়েন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক। বিধানসভায় হুমায়ুনের প্রশ্নের জবাবে শশী আরও বলেন, “উনি অন্য কোনও দলের থেকে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা শুনে থাকতে পারেন। এটা রাজনীতির ঊর্ধে উঠে নির্দিষ্ট মাপকাঠি অনুসারে সকলকে দেওয়া হচ্ছে।”
শশীর জবাব সম্পন্ন হলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় হুমায়ুনকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি অমর্ত্য সেনের রিপোর্টের কথা বলছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উল্লিখিত রিপোর্টটি আপনি টেবিলে জমা দেবেন।” সঙ্গে তাঁর আরও অনুরোধ “লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে আপনি যখন প্রশ্ন করছেন, তখন বাংলাতে করুন।” প্রসঙ্গত, অধিবেশনে ইংরেজিতে প্রশ্ন জমা দেন এবং প্রশ্ন করেন হুমায়ুন। তিনি নিজের এমন প্রশ্ন প্রসঙ্গে সাফাই দিয়ে বলেন, “রাজ্যে মুসলিম মহিলাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষার মাধ্যমে এই চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। সরকারের পক্ষে কখনোই জাতিভিত্তিক এই ধরনের সমীক্ষা করানো সম্ভব নয়।” এই সব সমীক্ষাতেই মুসলিম মহিলাদের আর্থিক দুর্দশার কথা প্রকাশ পেয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন।
তৃণমূল বিধায়কের এমন দাবি প্রসঙ্গে বিজেপি পরিষদীয় দলের সদস্য তথা ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, “তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন বাবু বিধানসভায় যে দাবি তুলেছেন তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এই সরকার বারবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করছেন এবং তাদের উন্নয়ন সরকার পক্ষ নিজেই চায় না। তাই যে প্রস্তাব তিনি সদনে তুলে ধরেছেন, সেই প্রস্তাব যদি এই সরকার মেনে না নেয়, তাহলে সংখ্যালঘুদের কাছে এই সরকারের আসল রূপ প্রকাশ পেয়ে যাবে। এবং তাদের যে কেবল ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা প্রমাণ হয়ে যাবে।” তাঁর আরও সংযোজন, “আমি মনে করি তাঁর (হুমায়ুন) তোলা দাবি যদি এই রাজ্য সরকার পূরণ না করেন, তবে তাঁর বিধায়ক পদ এবং তৃণমূল দল থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত।”