প্রচ্ছদ 

কৃতি ও মেধাবী বাঙালি মুসলিম সামিরুল ইসলামকে রাজ্যসভায় কেন পাঠালেন মমতা?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : বীরভূমের একই কৃষক পরিবারের সন্তান, সামিরুল ইসলাম অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৮৭ সালে জন্ম মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি হয়ে তিনি রাজ্যসভায় যাচ্ছেন। এত অল্প বয়সে তৃণমূল কংগ্রেস দলটা না করে কিভাবে তিনি মমতার মন জয় করলেন সেটাই এখন রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হ্যাঁ সামিরুল ইসলাম একজন সংগঠক। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের তিনি অন্যতম কর্ণধর। পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে তিনি কাজ করেন বিশেষ করে কোভিড এর সময় তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন। পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর শ্রেণীর সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করছেন এবং এদেরকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন।

একইসঙ্গে এনআরসি আন্দোলনের সময় সামিরুল ইসলাম এই রাজ্যের জনমানষে প্রথম পরিচিতি লাভ করেন। মেধাবী এই সন্তান রসায়ন এর অধ্যাপক। আগে ছিলেন হাওড়া জেলার শ্যামপুরের এক কলেজের অধ্যাপক, বর্তমানে তিনি দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের অধ্যাপক। তৃণমূল দল তিনি কোন সময়ই কোনোভাবেই করেছেন বলে দলের নেতারা মনে করতে পারছেন না। ডানপন্থী দলের রাজ্যসভার সাংসদ পদে মনোনয়ন পেলেও মনে প্রাণে সামিরুল ইসলাম একজন বামপন্থী।

Advertisement

আসলে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলাম এমন এক বাঙালি মুসলিম সন্তানকে সাংসদ পদে বা রাজ্যসভায় পাঠানো হোক যিনি কার্যত মানুষের জন্য করবেন, মানুষের স্বার্থে কাজ করবেন। তবে একথাঅস্বীকার করার উপায় নেই সামিরুল ইসলাম অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে বা তৃণমূল কংগ্রেসের একজন সাংসদ হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কতখানি কাজ করতে পারবেন সেটা ভবিষ্যৎ বলবে।

তবে এ কথা ঠিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতির বাইরে গিয়ে যেভাবে বাঙালি মুসলিম সমাজের একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীকে সামনে সারিতে তুলে আনলেন সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এটাই হয়তো মমতার যোগ্যতা। মমতায় পারেন খুঁজে বের করতে এখানেই মমতার সার্থকতা। একইসঙ্গে এটাও বলা যেতে পারে এই সামিরুল ইসলাম গত বিধানসভা নির্বাচনে নো ভোট টু বিজেপি বলে যে প্রচার হয়েছিল সেই প্রচার ভাগে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছেন এটা মনে করার কোন কারণ নেই। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম ফলাও করে বলতে চাইছেন নো ভোট টু বিজেপি প্রচার করেই নাকি সামিরুল রাজ্যসভায় যাচ্ছেন।

আসল কারণ সেটা নয়। আসল কারণ হলো সামিরুল রাজ্যসভায় যাওয়ার নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্য রাজনৈতিক অংক কাজ করছে সেটা খুব পরিষ্কার এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজের কাছে বার্তা দেওয়া। কয়েকদিন আগে আমাদের এক ইউটিউব চ্যানেলে আমরা দাবি করেছিলাম যে বাঙালি মুসলমান সমাজের সার্বিক উন্নতি করতে হলে এই সমাজ থেকেই নতুন নতুন নেতৃত্বকে তুলে আনতে হবে একই সঙ্গে এটাও দাবি বলেছিলাম যে বাঙালি মুসলমান সমাজের সার্বিক উন্নয়নের দিকে নজর না দিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কমিটেড ভোটকে হারাবে।

এই কমিটেড ভোট ব্যাঙ্ককে পুনরুদ্ধারের লক্ষেই এমন একজনকে তিনি রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যিনি প্রথম কথা নতুন মুখ দ্বিতীয় কথা হল তিনি বাঙালি মুসলমান। এবং শিক্ষিত বাঙালি মুসলমান। এতদিন পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ করে বিধায়ক যাদেরকে করেছেন তাদের চেয়ে অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি বাঙালি মুসলিম সমাজের ছিল তাদেরকে তিনি করেননি।

যাই হোক শেষ বিচারে এ কথা বলায় যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এই সিদ্ধান্তে এ রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজের কতটা সার্বিক উন্নতি হয় সেটাই এখন দেখার। একইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিন দিন যেভাবে বাঙালি মুসলমান সমাজের কাছে  বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন সেটা পুনরুদ্ধার করতে পারেন কিনা তা দেখার বিষয়। যদি সামিরুল ইসলামকে দিয়ে তিনি পুনরায় এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতাকে এবং আস্থা বৃদ্ধি করতে পারেন তাহলে রাজনৈতিক দিক দিয়ে অনেক বেশি ফায়দা পাবেন মমতা, আর না হলে?


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ