আল্লাহ ভীরুতা ও মাথা উচুঁ করে চলার কারণেই স্বাধীনোত্তর বাংলায় উচ্চমানের প্রতিভাধর লেখক হওয়া সত্তে কোনো সরকারেরই স্বীকৃতি পাননি আবদুর রাকিব
সেখ ইবাদুল ইসলাম : আবদুর রাকিব একটি নাম নয় , একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁর মেধা-মনন, লেখার শিল্প নৈপুণ্য এই বাংলার অনেক তথাকথিত কৃতি সাহিত্যিক বঙ্গভূষণদের চেয়ে উচ্চমানের, তা সত্ত্বে তাঁকে কোনো সরকারই স্বীকৃতি দেয়নি । মৃদুভাষী এই লেখক গল্পকার আক্ষরিক অর্থেই শব্দের জাদুকর ছিলেন । তাঁর যেকোনো লেখা প্রবন্ধ হোক বা গল্প পড়তে বসলে শেষ না করে কোনো পাঠকই উঠতে পারবেন না । তাঁর আত্মজীবনী মূলক উপন্যাস “ পথ-পসারীর পত্রোত্তর “ পড়লেই বুঝতে পারা যায় তিনি কতখানি উন্নত মানের লেখক ছিলেন। শব্দ চয়নের বিষয়ে তিনি খুবই সজাগ ছিলেন, তিনি প্রায়ই বলতেন আমি একটি শব্দ ব্যবহার করার আগে দেখে নিই সেটা অশ্লীল কিনা । আর তাঁর লেখার ভাবনায় সম্প্রীতি-ই বড় করে ধরা পড়েছে বারবার । উদাহরণ দিয়ে এই লেখাকে আমি আর ভারাক্রান্ত করতে চায় না। এ কথা জোর দিয়েই বলতে পারি যে তিনি বাংলা ভাষায় গল্প-প্রবন্ধ-উপন্যাস লিখতে গিয়ে যে ছবি চিত্রায়ত করেছেন তাতে আজকের দিনে কোনো লেখক এভাবে একটি অশ্লীল শব্দ ব্যবহার না করে সাহিত্য-রচনা করতে পারবেন না । সাহিত্যকে যদি মানুষের মননে, মানুষে হৃদয়ে প্রবেশ করিয়ে দিতে হয় তাহলে অবশ্যই আবদুর রাকিবের লেখা অনুপ্রেরণা দেবে ।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে আবদুর রাকিবে একটি গ্রন্থ রাজ্য সরকার প্রকাশ করে তাকে খানিকটা স্বীকৃতি দিয়েছিলেন । কিন্ত মা-মাটি-মানুষের সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেকটা বেশি ছিল । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি কৃতিদের বঞ্চনা করেন না । কিন্ত দুঃখের হলেও সত্য বাংলা আকাডেমির সদস্য থেকে শুরু করে তথ্য-সংস্কৃতির দপ্তরের কোনো কমিটিতেই এই মহান লেখককে রাখা হয়নি । অবশ্য বলা হবে তিনি অনেক দূরে থাকতেন । তাঁর নাম আমরা শুনিনি । প্রতিভাকে খুঁজে বের করা তথ্য-সংস্কৃতির দপ্তরের দায়িত্ব ।
আসলে প্রথম এবং শেষ পরিচয় আবুদর রাকিব ধর্মপ্রান মুসলিম ছিলেন । তাঁর লেখালেখি যতই উচ্চমানের হোক না কেন তাতে ছিল ইসলামি মূল্যবোধের শিক্ষা । এটাই কি তাঁর স্বীকৃতি পাওয়ার প্রধান বাধা ? এ প্রসঙ্গে অবশ্য প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুস সাত্তারের ব্যাখা প্রণিধানযোগ্য , আসলে উনি ছিলেন উচ্চমানের লেখক তার প্রতিভাকে মাপার মত যোগ্যতা ছিল না কারও। তিনি এক কথায় স্বীকার করলেন, বামেদের আমলেও কিছু লোককে সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল । আর এখন তো যারা চার লাইন ভালো বাংলা লিখতে পারে না তারা কবিতা পড়ার ডাক পায় । এদের সারিতে অবশ্যই বেমানান আবদুর রাকিব ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথায় কথায় প্রতিভা খুঁজে আনার কথা বলেন , সংখ্যালঘুদের কথা বলেন , কিন্ত সংখ্যালঘু সমাজের এমন একজন কিংবদন্তী লেখককে কী একটা বঙ্গভূষণ কিংবা বঙ্গবিভূষণ দিয়ে সম্মানিত করা যেত না কী ? যে সমাজের কথা ফলাও করে বলে ভোটের বাজার গরম করা হয় সেই সমাজের একজন কিংবদন্তী সাহিত্যিককে সম্মান দিলে কী আরও ভাল কাজ হত না ? আবার বলছি,আবদুর রাকিবের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেওয়ার হিম্মত কারো নেই , তবে সম্মান দিতে পারতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি তাঁকে খুজেই পেলেন না , কারণ খোঁজার ইচ্ছায় ছিল না ।
আমাদের সমাজ তাঁকে কি দিয়েছে ? পাঠক সমাজ তাঁর কাছে বিশেষভাবে কৃতঞ্জ । তিনিই আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেলেন সাহিত্যেও ইসলামী মূল্যবোধ-নীতিবোধ ও মহান নবী ( সা.) আদর্শকে প্রচার করা যায় । ইসলামী মূল্যবোধকে সামনে রেখেই তিনি যে সাহিত্য-সাধনা করে গেছেন তা আগামীতে আর কেউ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে । তাঁর প্রতিভার কোনো মূল্য আমাদের সমাজের মানুষরাও দিতে পারেননি ।
কয়েক বছর আগে বাঙালি মুসলিমদের একটি দৈনিক পত্রিকায় একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল । তিনি চেষ্টা করছিলেন , ইসলামী আদর্শকে সামনে রেখে বাংলা সাহিত্যে এক নয়া যুগের সৃষ্টি করতে ,তা তিনি করে যেতে পারেন না । আসলে তাঁর মত প্রতিভাধরের মর্যাদা আমরাও দিতে পারিনি । এটা আমাদের লজ্জা । অথচ আমরা তাঁকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে বাংলা সাহিত্য জগতে এক নয়া যুগের সূচনা করতে পারতাম ।
যাইহোক আজকের শোকের দিনে আমাদের মহান আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থণা আবদুর রাকিবের যেন জান্নাত নসীব হয় । আর আল্লাহ যেন আমাদের তাঁর আদর্শকে সামনে রেখে সাহিত্য-সাধনা করার তওফিক দান করেন ।