ভাঙ্গরে আইএসএফ কর্মীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বোমাবাজির অভিযোগ, বিরোধীদল সুষ্ঠুভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারছে না দায় নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে! কেন জানতে হলে ক্লিক করুন
বাংলার জনরব ডেস্ক : রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা বারবার প্রমাণ মিলছে। মনোনয়ন পর্বেই শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন দিতে পারছে না এর দায়ভার পুরোপুরি রাজিব সিনহাকেই নিতে হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। রাজিব সিনহার মনে রাখা উচিত ছিল যে আদালতে দাঁড়িয়ে কমিশনের পক্ষের আইনজীবী বলছেন সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন করাতে কমিশন নাকি বদ্ধপরিকর। কিন্তু কলকাতা শহর থেকে অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের দফতর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ভাঙ্গরে আজ যা ঘটে গেল তা কোনভাবেই দায় এড়াতে পারেন না রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। গণতন্ত্রের প্রতি বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা থাকলে তিনি পদত্যাগ করে নিজের সম্মান বাঁচাতে পারতেন তা এখনো করেননি কেন সেটাই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গণতন্ত্রকে রক্ষা করার যে শপথ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়েছেন তার প্রতিটা ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। আজ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙ্গড়ে আইএসএফ কর্মী সমর্থকদের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজ্য নির্বাচন কমিশন গতকাল বহাল তবিয়তে ঘোষণা করেছিলেন এক কিলোমিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। কিন্তু দেখা গেল ভাঙ্গড় ২ নম্বর বিডিও অফিসের সামনে এক কিলোমিটারের মধ্যেই দুই পক্ষের দুষ্কৃতীদের দাদাগিরি। কিভাবে দুই পক্ষের দাদাগিরি করতে সাহস পেল তার দায় রাজিব সিনহার এড়াতে পারেন না!
নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার আরেকটি পরিচয় হলো নির্বাচন কমিশন ভালো করেই জানে যে ভাঙ্গড় উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা তাহলে বিরোধী প্রার্থীরা যখন নমিনেশন জমা দিতে যাচ্ছেন তখন তাদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা কেন রাখা হলো না। যে নির্বাচন কমিশন কলকাতা হাইকোর্টের দাঁড়িয়ে বলছে সুস্ঠ অবাধ নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর । সেই নির্বাচন কমিশন এতটা বালখিল্য আচরণ কেন করে চলেছে? তা নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলতেই পারে।
গণতন্ত্রকে রক্ষা করার দায় এবং দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। রাজ্য নির্বাচন কমিশন যদি সে দায়িত্ব পালন করতে না পারে তাহলে কমিশনারের উচিত তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাওয়া। যদিও ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা নাকি বোমাবাজি করেছে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়েছে যদি এগুলো সত্য হয় তাহলে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আর যদি মিথ্যা হয় তাহলেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত যারা এই ধরনের মিথ্যা খবর বা মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করছে।
সবশেষে একটা কথাই বলতে হয় ভাঙ্গড় বিধানসভা কেন্দ্র এলাকাটি উত্তেজনাপ্রবণ বলে রাজনৈতিক মহলে প্রচারিত এবং আইন-শৃঙ্খলা দিক থেকে এই এলাকাটি সব সময় অশান্তি হয়। এটা নির্বাচন কমিশন জানেন না তা হতে পারে না।। কিন্তু তা সত্ত্বেও আগাম কোন পদক্ষেপ কেন নিল না নির্বাচন কমিশন কেনই বা মুড়ি-মুরকির মতো বোমবাজি হবে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত মনোনয়ন কেন্দ্রের এক কিলোমিটারের মধ্যে সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই নির্বাচন কমিশনারকে দিতে হবে।
অবশ্য তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা বলছেন এই গন্ডগোলের নেপথ্যে আইএসএফ কর্মীরা রয়েছেন তারাই বোমাবাজি করেছেন। যদি তাই হয় তাহলে কর্মীরা কিভাবে এক কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকে বোমা বাজি করার সাহস পেল সেটার দায় কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে উত্তর দিতে হবে তার ঘোষিত অবস্থান এক কিলোমিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা থাকবে তাহলে ১৪৪ দ্বারা ভেঙে কারা কিভাবে বিজয়গঞ্জ বাজারের সামনে জমায়েত করেছিল। সে প্রশ্নের উত্তর নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষার দায় এবং দায়িত্ব দুটোই নির্বাচন কমিশনারের। দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে অবশ্যই পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়া উচিত।
নির্বাচন কমিশনকে এটাও দেখতে হবে সুপরিকল্পিতভাবে কেউ অশান্তির তৈরি করেছে কিনা যাতে বিরোধী দল আইএস এফ মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারে। পুলিশ কেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া আইএসএফ কর্মীদের গ্রেফতার করল সে প্রশ্নের উত্তর নির্বাচন কমিশন দিতে হবে। কারন প্রার্থীর নিরাপত্তা দেওয়ার দায় এবং দায়িত্ব দুটোই নির্বাচন কমিশনারের। সুতরাং প্রার্থীকে নমিনেশন ফাইল জমা দিতে যাওয়ার পথে পুলিশ গ্রেফতার করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে এবং সেই প্রশ্নের উত্তর নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।
যদিও অশান্তির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেছেন,মঙ্গলবার তৃণমূলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ কর্মসূচি বাতিল করতেই সমাজবিরোধীদের একত্রিত করে পরিকল্পিত ভাবে হামলা করেছে আইএসএফ। এ জন্য ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকিকেই দায়ী করেছেন তিনি। নৌশাদদের এ জন্য ‘চরম মূল্য’ দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শওকত।
শওকতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নৌশাদ। তাঁর দাবি, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচিতে অশান্তি করার ইচ্ছা থাকলে আমরা আজ ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা দিতাম না। তা হলে আজ আমরা ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতাম।’’ বিষয়টির জন্য তিনি সম্পূর্ণ দায় চাপিয়েছেন তৃণমূলের ঘাড়ে। এই ঘটনার কথা রাজ্য নির্বাচন কমিশনেও জানানো হবে বলে বক্তব্য নৌশাদের।
আসলে রাজ্য প্রশাসনের একটা অংশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকে কালিমা লিপ্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কারণ ভাঙ্গরে অশান্তি হলে তার প্রভাব শুধুমাত্র ভাঙ্গরে থাকবে না এই রাজ্যের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপরে তার প্রভাব পড়বে এই সহজ সত্য কথাটা তৃণমূলের নেতারা জানেন না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তৃণমূল দলের মধ্যে এমন কিছু নেতা কর্মী আছেন যারা এই রাজ্যে বিজেপি আসার পথকে সুগম করার চেষ্টা করছে। তারাই পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার জন্য এই কাজগুলো করছে। ভাঙ্গরের যে ঘটনা ঘটেছে এর প্রভাব যে সমগ্র রাজ্যজুড়ে পড়বে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। শওকত মোল্লা তার নিজের এলাকাতেই যে জনপ্রিয়তা খোয়াবেন এটাও অতি সত্য কথা।