জেলা 

কুড়মি নেতাদের গ্রেফতার করে এবং বদলির নির্দেশ দিয়ে তৃণমূল দল এবং সরকার কী একটি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : তৃণমূল কংগ্রেস দল এবং সরকারের মধ্যে কোথাও একটি সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। এমনিতেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তৃণমূল কংগ্রেস এখন রাজ্য জুড়ে ভিলেনে পরিণত হয়েছে জনসমর্থন দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় দলের নেতা এবং সরকারকে অনেকটাই সংযত হতে হয়। কিন্তু সংযত হওয়া তো দূরের কথা প্রতিনিয়ত মমতা সরকার এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যাতে আরো বেশি সংকটে পড়ছে দল আরো বেশি জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে তৃণমূল।

সম্প্রতি কুড়মিদের আন্দোলন নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ওই সম্প্রদায়ের সংঘাত শুরু হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন কুড়মি সম্প্রদায় এই আন্দোলনকে তেমনভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না।একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল তাদেরকে ভুল পথে চালিত করছে, সে রাজনৈতিক দলের নাম হচ্ছে বিজেপি।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্লিনচিট সত্ত্বেও কুড়মি নেতা রাজেশ মাহাতো-সহ চার জনকে গ্রেফতার করল ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। এর আগে গত শুক্রবার তাঁকে পাঠানো হয়েছিল বদলির নোটিস। ঘটনাচক্রে, সে রাতেই হামলা হয় অভিষেকের কনভয়ে। যদিও ওই ঘটনা নিয়ে শালবনি থেকে মমতা জানিয়ে দেন, শুক্রবার অভিষেকের কনভয়ে কুড়মিরা হামলা করেনি। করেছে বিজেপি। তার আগে অভিষেক দাবি করেছিলেন যে, কুড়মিদের বিক্ষোভে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন তিনি। এর পর মমতা বলেছিলেন, ‘‘কুড়মি ভাইয়েরা এ কাজ করে না। করেছে বিজেপি।’’

ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি রাজেশ, আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি শিবাজি মাহাতো-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে ঝাড়গ্রামের এসডিপিও অনিন্দ্য সুন্দর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের আদালতে হাজির করানো হবে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেকের কনভয়ে হামলা এবং রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছিল আরও চার জনকে। তাঁদের তিন দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। ওই কাণ্ডে শনিবার রাজেশকে প্রাথমিক ভাবে আটক করে পুলিশ। এফআইআরে যে ১৫ জনের নাম ছিল রাজেশ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

রাজেশ পেশায় স্কুলশিক্ষক। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের বনপুর হাই স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক। শুক্রবার তাঁকে কোচবিহারের চামতা আদর্শ হাই স্কুলে শিক্ষক হিসাবে বদলির নোটিস পাঠানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে। তাতে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাঁকে বর্তমান স্কুল ছাড়তে হবে। তার পর নতুন স্কুলে যোগ দিতে হবে তিন দিনের মধ্যে।

রাজেশের গ্রেফতারি নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি বিশিষ্ট শিক্ষক। অত্যন্ত প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তাঁর সামাজিক আন্দোলন নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। এই সমস্যা তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক দিকে জনজাতিদের উস্কে দিচ্ছেন। অন্য দিকে কুড়মিদের উস্কে দিচ্ছেন।’’

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে। ঝাড়গ্রাম শহরে ‘নবজোয়ার কর্মসূচি’র ‘রোড শো’ শেষ করে লোধাশুলি হয়ে অভিষেকের কনভয় শালবনির দিকে যাচ্ছিল। সেই যাত্রাপথে ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের দু’ধারে তখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কুড়মি আন্দোলনকারীরা। অভিযোগ, অভিষেকের কনভয়ের উদ্দেশে ‘চোর চোর’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়। এর পর ওই কনভয়ের শেষে থাকা মন্ত্রী বিরবাহার গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে এই ধরনের আন্দোলনের নেপথ্যে কুড়মি সমাজের কোন ভূমিকা নেই বলে নিজেরাই দাবি করেছেন সেখানে তাদের সমাজের নেতাদের গ্রেফতার করে এবং বদলি করে কি বার্তা দিতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী কিংবা তৃণমূল দল? বিনাশ কালে বুদ্ধি নাসের মত তৃণমূল কংগ্রেস বুঝে উঠতে পারছে না যে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে দলের পক্ষে বুমেরাং হতে পারে, একটি সম্প্রদায়কে ক্ষেপিয়ে দিয়ে তাদের নেতাদের গ্রেফতার করে এবং বদলি করে আসলে জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কাজটা নিজেরাই করে দিচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এই সহজ কথাটা বোঝেন না তা তো নয় কিন্তু তবু কেন করছেন এটাই এখন এই রাজ্যের সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে!

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ