কলকাতা 

‘আমার জীবনে মামলার বৃত্ত পূর্ণ হল,আমার কোনও আক্ষেপ নেই, বিজেপির পয়সা খেয়ে দলের ক্ষতি করিনি’ এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মদনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার পরেই প্রতিক্রিয়া তৃণমূল বিধায়কের

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : এসএসকেএম কাণ্ডে শেষ পর্যন্ত মদন মিত্রের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একজন রুগীকে ভর্তি করানোর জন্য এই প্রথম কোন বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর হলো বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। কামারহাটির এই বিধায়ক বরাবরই সমাজসচেতন মানুষ কোন গরীব অসহায় দুষ্ট মানুষ মদন মিত্রের কাছে সাহায্য চেয়ে ফিরে এসেছেন এই ঘটনার নজির খুব কম রয়েছে। তা সত্ত্বেও যেভাবে মদন মিত্র কে তৃণমূল কংগ্রেস দলের পরিচালিত সরকারের একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আসামির কাঠগড়ায় তুলে থানায় এফ আই আর দায়ের করল তাতে নিঃসন্দেহে নজির হয়ে থাকবে।

রোগী ভর্তিকে কেন্দ্র করে হাসপাতালগুলোতে অশান্তি হয়েই থাকে বিশেষ করে কলকাতার কেন্দ্রিক অধিকাংশ হাসপাতাল এবং জেলা কেন্দ্রিক অধিকাংশ হাসপাতাল রেফার রোগে ভুগে থাকেন রোগীকে ঠিকমতো চিকিৎসা না করেই বলে দেওয়া হয় অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য রেফার। কলকাতা শহরে এমনও নজীর রয়েছে সারারাত ধরে আটটি হাসপাতাল ঘোরার পরেও রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়নি শেষ পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে ওই রোগী ভর্তি হয়েছে।

Advertisement

মদন মিত্র এখানেই আপত্তি করেছেন তা নিয়ে কেন বসা হলো মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের তা জানা গেল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত ছিল বিধায়কের কথায় কর্ণপাত করা তা না করে হামলার কথাই কর্ণপাত করতে গিয়ে পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই ক্ষতি হচ্ছে তৃণমূল দলের জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে দল। সেদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন নজর নেই বলেই অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে মদন মিত্রের বিরুদ্ধে এফ আই এর দায়ের করার পরেই খানিকটা কটাক্ষের সুরে তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, কংগ্রেস জামানায় আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল সিপিএম আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল এবং এখন আমার নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস ও আমার বিরুদ্ধে মামলা করল অর্থাৎ মামলার দিক থেকে আমার রাজনৈতিক জীবনের বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো।

বিতর্কের শুরু শুক্রবার রাতে। এসএসকেএম হাসপাতালে এক রোগীকে ভর্তি করানো নিয়ে শুরু হয় বিবাদ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদের পরে নবান্ন মদনের পাশে থাকেনি। মদনও দল ছাড়ার হুঙ্কার দেন। পরে তাঁকে বুঝিয়ে শান্তও করে তৃণমূল। শনিবার সারা দিন ধরেই এসএসকেএমের ঘটনা নিয়ে টানাপড়েন চলেছে। এর মধ্যে তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মদনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

আর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল দলের বর্ষীয়ান বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, ‘‘আমি কাটমানি তোলার জন্য, আবাস যোজনার টাকা তোলার জন্য কেস খাইনি। এক স্বাস্থ্যকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করায় মামলা খেয়েছি।’’ এর সঙ্গেই মদনের সংযোজন, ‘‘কংগ্রেস আমলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সিপিএম আমলেও হয়েছে, বিজেপিও করেছে। এ বার নিজের দল, নিজের সরকার মামলা করল। আমার জীবনে মামলার বৃত্ত পূর্ণ হল। আমার কোনও আক্ষেপ নেই। বিজেপির পয়সা খেয়ে দলের ক্ষতি করিনি। দলকে ধন্যবাদ। আজ আমার নতুন জন্ম হল।’’

শুক্রবার রাতে বাইক দুর্ঘটনায় আহত শুভদীপ পাল নামে এক ব্যক্তিকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে চাননি বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে মদন গেলেও রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর সেখানে দাঁড়িয়েই মদন বলেছিলেন, দরকার হলে তিনি নিজের ঘড়ি-আংটি বিক্রি করে ওই যুবকের চিকিৎসা করাবেন। হাসপাতালের বিরুদ্ধে দালালরাজের অভিযোগ তুলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবিও করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ওই ব্যক্তিকে ভর্তি করাতে পারেননি।

সে দিন ঠিক কী হয়েছিল জানাতে শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হাসপাতাল চত্বরে কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীও তাঁদের পাশেই আছেন। উল্টে নাম না করে হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগও করেন তিনি। একই সঙ্গে জানান, যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের সকলের ছবি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। সেই ফুটেজ দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই মতোই মদনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।

মদন মিত্রের কোথায় যেন প্রত্যাশা ছিল যে শেষ পর্যন্ত হয়তো তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার পাশে দাঁড়াবেন কিন্তু দাঁড়ালেন না বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলো। আর মামলা দায়ের হওয়ার পরেই রবিবার মদন বলেন, ‘‘কেস খেয়ে আমি একটুও লজ্জিত নই। কেস খাওয়া আমার কপালে আছে। সোনা পাচার, গরু পাচারের জন্য কেস খায়নি। নিজের কোনও লোককে হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে কেস খাইনি।’’ এর পরে অভিমানী সুরে বলেন, ‘‘কণ্ঠে আমার কাঁটার মালা, কেসের মালা ফুলের মালা নয়, যাঁরা কেস করেছেন, ভাল করেছেন। এ বার আমি কামারহাটিতে বুক ফুলিয়ে ঢুকব। সোনা পাচার, কয়লা পাচার, গরু পাচারের জন্য কেস খাইনি, কেস খেয়েছি স্বাস্থ্যকর্মীকে ভর্তি করার জন্য। আমার গর্ব, আমি জনগণের জন্য কেস খেয়েছি। আমি তৃণমূল বিধায়ক হয়েও তৃণমূল আমলে কেস খেয়েছি।’’

দল সম্পর্কে এমন কথা বললেও তিনি যে ‘দুঃখিত’ বা ‘অভিমানী’ তা মানতে চাননি মদন। বলেন, ‘‘আমার কোনও দুঃখ, অভিমান নেই। ওই ব্যক্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে ব্যবস্থা করেছেন, তা দেখে আমি আপ্লুত। এটাই আমাদের সরকারের মানবিক মুখ।’’


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ