কলকাতা 

৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি-বাতিলের উপর স্থগিতাদেশ দিলেও নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সকলকেই অংশ নিতে বলল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেছে সবাইকেই ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া অংশ নিতে হবে। অর্থাৎ ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি এখনই চলে না গেলেও তাদের সকলকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে এর ফলে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকেই অনেকটাই মান্যতা দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।শুক্রবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অথবা আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় গত শুক্রবার এই মামলার রায় দিতে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চ তার অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানিয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে চলতে হবে।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা আপাতত ৪ মাস তাঁদের স্কুলে যেতে পারবেন। তবে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনকাঠামো অনুসরণ করে তাঁদের বেতন দেওয়া হবে। ডিভিশনের বেঞ্চের অন্তর্বর্তী নির্দেশের পর তাঁরা আবার আগের মতো বেতন পাবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই মনে করছেন, আগের বেতনকাঠামো অনুসারেই বেতন পাবেন ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সকলেই অংশ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে উচ্চ আদালত। ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ের ফলে চাকরি বাতিল না হলেও, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে এই ৩২ হাজার প্রাথমিকের শিক্ষককে। শুক্রবার হাই কোর্ট প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে অগস্ট মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে বলেছে। সেপ্টেম্বরে মামলাটি আবার শুনবে ডিভিশন বেঞ্চ।

২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ হয়েছিল মোট ৪২,৫০০। এর মধ্যে প্রশিক্ষিত (শিক্ষণের ডিগ্রি বা ডিএলএড থাকা) ৬৫০০ জনকে নিয়ে বরাবরই কোনও বিতর্ক নেই। গত শুক্রবার বাকি ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করা হয়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, নতুন করে ইন্টারভিউ পাশ করলে তাঁরা চাকরি ফিরে পাবেন। না হলে চাকরি খোয়াতে হবে। তার পরেই সোমবার মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের আসল সংখ্যা ৩০ হাজার ১৮৫। ৩৬ হাজার নয়। লেখায় ভুল (টাইপোগ্রাফিক্যাল এরর) হয়েছে!

প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী ২০১৬ সালের প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে মামলা করেন। তাঁদের আইনজীবী তরুণজ্যোতি আদালতে জানান, এই মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর পেয়ে প্রশিক্ষণহীন অনেকেই চাকরি পেয়েছিলেন। এই মামলাতেই উঠে আসে ইন্টারভিউ বিতর্ক। অভিযোগ ওঠে, নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারভিউয়ে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়ার কথা থাকলেও বহু ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জেলায় যাঁরা ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন, তাঁদের তলব করে গোপন জবানবন্দিও নথিবদ্ধ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন তিনি।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের চাকরি বাতিলের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সোমবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলা করা হয়। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানির শুরুতেই বিচারপতি তালুকদার বলেন, ‘‘একক বেঞ্চ তো আবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কাউকে তো নেকড়ের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়নি। তা হলে সমস্যা কোথায়?’’

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ