“কর্ণাটক মে নফরত কি বাজার বন্ধ হো চুকে হ্যায়, অর মহব্বতকে বাজার খুল চুকা হ্যায়” : রাহুল গান্ধী
বুলবুল চৌধুরী : সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাহুল গান্ধী কিন্তু রাজনীতির আঙিনায় নেমে তিনি দেখেছিলেন তার ঠাকুমার মৃত্যু দেখেছিলেন বাবার ঝলসে যাওয়া লাশ। তারপরেও ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি স্বয়ং তার মা। সোনিয়া গান্ধীর এই আত্মত্যাগের কথা আজ হয়তো বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির কাছে আর প্রচার পায় না কিন্তু বাস্তব বলছে ইন্দিরা গান্ধীর পরিবার দেশের জন্য যে আত্মত্যাগ করেছে তার কোন নজির এ দেশের কোন রাজনৈতিক পরিবার দেখাতে পারবেন না। সোনিয়া গান্ধী চাইলেই ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। হননি, অন্তর আত্মার ডাকে প্রধানমন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন।
তারপর দীর্ঘ ইতিহাস ২০১৪ সালের পর কার্যত এদেশের রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে কংগ্রেস ক্রমশ বিলীন হয়ে যেতে থাকে। সোনিয়া গান্ধী বয়সের ভারে অসুস্থ মনমোহন সিংহ অসুস্থ একা রাহুল গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে ২০১৯ সালে কার্যত হার স্বীকার করে নিলেন নরেন্দ্র মোদির কাছে। সরে গেলেন কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে রাহুল গান্ধী। দেশের লক্ষ লক্ষ কংগ্রেস ভক্তের আবেদন সত্ত্বেও ফিরে যাননি কংগ্রেস সভাপতি পদে, প্রমাণ করেছেন পদের প্রতি কোন লোভ নেই রাহুলের। মায়ের মত তিনিও আত্মত্যাগী। বিজেপির পক্ষ থেকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে রাহুলকে বলা হত পাপ্পু। সেই পাপ্পু এখন আর পাপ্পু নেই এখন রাজনীতির বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন।কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রমাণ করেছে পাপ্পু চাইলে এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদির গদি টলিয়ে দিতে পারেন।
সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেওয়া রাহুল গান্ধী রাস্তায় নামলেন! কন্যাকুমারী থেকে জম্মু-কাশ্মীর সাড়ে 5 হাজার কিলোমিটার পথ হাঁটলেন। স্লোগান ছিল’নফরত কে বাজার মে মহব্বত কি দুকান খোলনে আয়া হু’, ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালীন এটাই ছিল রাহুল গান্ধীর ট্যাগলাইন।
আর আজ দক্ষিণের ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর রাহুল গান্ধী বললেন, “কর্ণাটক মে নফরত কি বাজার বন্ধ হো চুকে হ্যায়, অর মহব্বতকে বাজার খুল চুকা হ্যায়।” যার বাংলা তরজমা করলে দাঁড়ায়, ‘কর্ণাটকে ঘৃণার বাজার বন্ধ হয়েছে। ভালবাসার দোকান খুলে গিয়েছে।’ প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি বলছেন, “এটা কর্ণাটকের মানুষের জয়। কর্ণাটকে কংগ্রেস গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এটা সবার জয়। কর্ণাটকের জয়। আমরা নির্বাচনে কর্ণাটকের জনতার কাছে পাঁচটি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই সেটা পূরণ করব।”
কিছু গণমাধ্যম কর্নাটকের এই জয়কে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের জয় বলে প্রচার করার চেষ্টা করছে। যেমন দশই মে এইসব গণমাধ্যম বলেছিল কর্নাটকে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হবে । এ থেকে স্পষ্ট যে ইচ্ছাকৃতভাবে কংগ্রেসকে চেপে রাখার জন্য এই সকল সংবাদ মাধ্যম এই ধরনের মিথ্যা ভুল সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে। আসলে রাহুল গান্ধীর কৃতিত্বকে সামনে আনলেই অন্যদিকে মোদির ব্যর্থতাকে সামনে আনতে হয়। ঐ সকল গণমাধ্যমগুলো গদি মিডিয়া হওয়ার কারণে তারা মোদীর ব্যর্থতাকে সামনে আনতে নারাজ। অথচ কর্নাটকের দিকে তাকালে দেখা যাবে রাহুল গান্ধী যেসব এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন তার ৭৫ শতাংশ আসন কংগ্রেস জিতেছে আর আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেসব এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন তার ৪৫ শতাংশ আসন বিজেপি জিততে পেরেছে। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেসব এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন তার মাত্র 30% জিততে পেরেছে বিজেপি।
এ থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে কর্ণাটকের জয়ের নেপথ্যে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের ভূমিকা যেমন আছে একই রকম ভাবে রাহুল প্রিয়াঙ্কা সোনিয়ার ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে না। রাহুল গান্ধীর ভারতে জড়োযাত্রার সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে কর্ণাটক থেকেই। ভারতের জড়োযাত্রা যেসব এলাকা দিয়ে গিয়েছিল তার মধ্যে কর্ণাটকই প্রথম রাজ্য যেখানে বিধানসভা নির্বাচন হলো এবং সেখানে কংগ্রেস বিপুলভাবে জয় লাভ করল। ফলে একথা স্বীকার করতেই হবে রাহুল গান্ধী মোদির বিকল্প হয়ে উঠেছেন। আগামী দিনে দেশের মসনদে রাহুল গান্ধী যে বসতে চলেছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।