দ্বিতীয় দফায় আমীরে জামাআত নির্বাচিত সা’দাতুল্লাহ হোসায়েনী
মুদাসসির নিয়াজ: জামাআতে ইসলামী হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি বা আমীরে জামাআত হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হলেন সাইয়েদ সা’দাতুল্লাহ হোসায়েনী। এই নির্বাচন উপলক্ষ্যে গত কয়েকদিন ধরে দেশের সব রাজ্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা (নুমাঈন্দেগান) দিল্লিতে জামাআতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা মারকাযে রয়েছেন। এই পরিষদে ৩৬জন মহিলা সহ মোট ১৬২জন সদস্য রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২ মহিলা সহ মোট ১১জন গত মাসে এই পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে তারাও দিল্লি গেছেন।
জামাআতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন আমীর নির্বাচনের আগে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে। সেই মোতাবেক মারকাযী মজলিসে নুমাঈন্দেগানের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা ও শলা পরামর্শের ভিত্তিতে আগামী ৪ বছরের জন্য নয়া নেতা নির্বাচন করেন। পাশাপাশি বিগত মীকাত (২০১৯-২০২৩) এর কাজকর্ম নিয়েও বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন এবং আগামী ৪ বছরের প্রত্যাশার ওপর প্রস্তাব ও রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয় এই অধিবেশনে।
সবশেষে আমীরে জামাআত নির্বাচন হয়। সেই মতোই আজ শনিবার ২৯ এপ্রিল ২০২৩ দিল্লির মারকাযী অফিসে ভোটাভুটি হয় এবং তা গণনার পর দুপুর নাগাদ নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাতে দেখা যায়, এবারও দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হলেন সাইয়েদ সা’দাতুল্লাহ হোসায়েনি। নিঃশন্দেহে এই মুহূর্তে যিনি সমগ্র দেশের মুসলিম মিল্লাত এর এক অনন্য ডাইনামিক লিডার। তার দুধর্ষ নেতৃত্ব, ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এবং অসামান্য পাণ্ডিত্য এর সমন্বয় এই কঠিন সময়ে মিল্লাতের কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে ইনশা আল্লাহ।
জনাব সদতুল্লাহ হোসায়েনি সাহেব এর আগে জামাআতের সর্বভারতীয় নায়েবে আমীর বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন। তার আগে জামাআতের ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়া (এসআইও)-র সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পরপর দু-দফায় ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বলতে গেলে ছাত্রাবস্থা থেকে দীর্ঘদিন তিনি জামাআতের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এবং দেশজুড়ে ইসলামের প্রচার প্রসারে দ্বীনের দাঈ হিসেবে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৭৩ সালের ৭ জুন হায়দ্রাবাদে তাঁর জন্ম। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সাইয়েদ সাদাতুল্লাহ হোসায়েনি। ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিষয়ের ওপর দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও জার্নালে তাঁর লেখা বহু গবেষণামূলক প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশিত ও সমাদৃত হয়েছে। তাঁর লেখা অন্তত ২৩টি বহু মূল্যবান গ্রন্থ ইতিমধ্যেই প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু লেখা মলাটবন্দি হয়ে খুব সত্বর দিনের আলো দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
দেশের সবথেকে ইন্টেলেকচুয়াল মুসলিম সংগঠন হিসেবে পরিচিত জামাআতে ইসলামী হিন্দের নিজস্ব স্টাডি ও রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর পদেও রয়েছেন সাদাতুল্লাহ হোসায়েনি। ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দূতে দেশের বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্রেও তিনি প্রায়শই জ্ঞানগর্ভ আর্টিকল লেখেন। তাঁর শিক্ষা অর্জন প্রধানত মহারাষ্ট্রের নান্দেরে হয়।
কলেজ জীবন থেকেই তিনি এসআইও-র সংস্পর্শে আসেন এবং তারপর জামাআতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি যখন মারকাযী মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন, তখন তিনি বয়সের দিক থেকে দেশের মধ্যে সবথেকে কনিষ্ঠতম। হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, আলিগড়, দিল্লি প্রভৃতি জায়গার বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক-ইসলামিক সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত তিনি।
লেখালিখির পাশাপাশি একজন ইসলামী স্কলার হিসেবে সুবক্তাও তিনি। সংগঠনের কাজে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তাঁকে প্রায়ই সফর করতে হয়। সেইসূত্রে তাঁর বক্তব্য সারা দেশেই যথেষ্ট আলোড়ন ফেলে দেয়। তাঁর মুখনিঃসৃত বক্তব্য নিয়ে চুলচেরা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের মিডিয়া।
তাঁর মতে, বিশ্বায়ন নয়, বিশ্বভ্রাতৃত্বই এই পৃথিবীকে সুচারুরূপে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক। তিনি আরও বলেন, বিশ্বায়ন হল পুঁজির ভাষা। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদ তৃতীয় বিশ্বকে এবং প্রান্তিক মানুষদেরকে শোষণ করবে বলে বিশ্বায়নের তত্ত্ব আমদানি করেছে। বিংশ শতাব্দিতে শোষণের হাতিয়ার ছিল পুঁজিবাদ।
একবিংশ শতাব্দীতে নাম বদলে হয়েছে বিশ্বায়ন। এই বিশ্বায়নের হিংস্র থাবায় রক্তাক্ত হচ্ছে বিশ্ব ও বিশ্ববাসী। সর্বত্র কর্পোরেটরা থাবা বসাচ্ছে। গরিব মানুষের রুজি-রুজির সংস্থান কেড়ে নিচ্ছে এরা। এরাই বিশ্বের ৯৫ শতাংশ সম্পদকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। ফলে দিন কে দিন আর্থ-সামাজিক সংকট আরও প্রকট হচ্ছে, ধনবৈষম্য লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সাদাতুল্লাহ হোসায়েনি।
@ M Niaz #