আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস : আস্থাশীল হই আমরা আপন প্রভুর ওপর। বদরের এই সুমহান শিক্ষা হোক ১৭ রমাজানের শপথ
নায়ীমুল হক : জন্মভূমি মক্কা থেকে হযরত মুহাম্মদ(সা) বিতাড়িত হয়েছিলেন যখন, তখন থেকে শুরু হয় হিজরি সাল গণনা।
সেই দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমাজান মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে ঐতিহাসিক বদর নামক স্থানে সংঘটিত হয় এক সম্মুখ যুদ্ধ। এ যুদ্ধ সম্পূর্ণরূপে ছিল এক অসম যুদ্ধ। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবনকালে প্রথম যুদ্ধ। কুরাইশদের আক্রমণ ঠেকাতে যেয়েই এই যুদ্ধের সূত্রপাত। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ। বদরের যুদ্ধ ছিল ঈমানদারদের জন্য অগ্নি পরীক্ষা। কারণ, সদ্য ছেড়ে আসা তাদের আপন রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে ছিল এ যুদ্ধ। ঈমানের পরীক্ষায় তারা জয় লাভ করেছিল। এ সকল মুহাজির নিজের আত্মীয়-স্বজনদের পরিহার করে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকেই বেশি ভালোবেসে ছিলেন। যার প্রমাণও তারা দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে অনুষ্ঠিত যুদ্ধের ময়দানে।
এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব দেন বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা), তাঁর চাচা হজরত হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এবং হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু। আর মুশরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় আবু জেহেল (আমর ইবনে হিশাম) এবং আবু সুফিয়ান। এ যুদ্ধে স্বল্পসংখ্যক নিরস্ত্র ও দুর্বল ৩১৩ জন ঈমানদার (আপন প্রভুর প্রতি বিশ্বাসী) মক্কার ১ হাজার সশস্ত্র প্রশিক্ষিত অবিশ্বাসী যোদ্ধার মোকাবিলায় বিজয় অর্জন করে। প্রভু আল্লাহ তাআলা এ যুদ্ধ সম্পর্কে কুরআনে বলেন, ‘নিশ্চয়ই দু’টি দলের মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল। একটি দল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছিল, আর অপর দল ছিল অবিশ্বাসীদের। এরা স্বচক্ষে তাদেরকে দ্বিগুণ দেখেছিল। আর আল্লাহ এভাবেই তাঁর নুসরাত (সাহায্য) ও শক্তি দান করেন। এরই মধ্যে শিক্ষনীয় রয়েছে দৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য। (সুরা ইমরান : আয়াত ১৩)
ইসলামের প্রথম যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলিম বাহিনীকে এভাবেই বিজয় দান করেন। আমাদের অনেকের জানা আছে, যুদ্ধের প্রক্কালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের উদ্দেশে এক মুঠো বালি নিক্ষেপ করেন। বদর যুদ্ধের বিজয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ অতঃপর তোমরা তাদেরকে মারোনি বরং আল্লাহই তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। আর আপনি বালি নিক্ষেপ করেননি, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলাম আমি স্বয়ং। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত (সুরা আনফাল : আয়াত ১৩)
এই যুদ্ধে মক্কার কুরাইশদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৭০ জন সৈন্য নিহত হয় এবং সমান সংখ্যক লোক বন্দি হয়। আর ঈমানদারদের পক্ষে মাত্র ৬ জন আনসার এবং ৮ জন মুহাজিরসহ ১৪জন শাহাদাত বরণ করেন।
রমাজান মাসের এই কঠিন সময়ে বদরের প্রান্তরে যে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা খুবই জরুরি। তা হলো- সত্যের পক্ষ কখনোই ত্যাগ করা নয়, তা বাহ্যত যতই দুর্বল হোক না কেন। আর সমস্ত কাজে ‘তাওয়াক্কালতু আ’লাল্লাহ’ আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস এবং ভরসা রাখা। বিপদ-আপদসহ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর আস্থাশীল হওয়াই হলো বদরের ঐতিহাসিক সুমহান শিক্ষা।
হে প্রভু, সামাজিক এই অবক্ষয়ের যুগে, বদর প্রান্তরের শিক্ষায় আমাদেরকে সুশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ করে দিন।