অন্যান্য দেশ 

Rahul Gandhi : সংসদে রাহুল নেই! লড়াই এবার সংসদের চার দেওয়ালের মধ্যে নয়, জনতা বনাম বিজেপি! জিতবে কে?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ যে কায়দায় কাড়া হয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যে দেশে বিদেশে শোরগোল পড়েছে । কংগ্রেস আমলে তৈরি করা জনপ্রতিনিধিত্ব আইনকে কাজে লাগিয়ে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়ার পরের পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী । সম্প্রতি রাহুল গান্ধী লন্ডন গিয়েছিলেন সেখানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভারতের বর্তমান গণতন্ত্র পরিস্থিতি নিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন । বলেছিলেন সংসদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সময় মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় । এমনকি বক্তব্যকে কাটঁছাঁট করে সংসদের কার্যবিবরণীতে রাখা হয় । এই ভাষণ নিয়ে দেশে তোলপাড় শুরু করে বিজেপির নেতারা । এমনকি প্রথম সারির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা পর্যন্ত বলতে শুরু করেন দেশে অভ্যন্তরে বিদেশের সাহায্য চেয়েছেন রাহুল । আর এ নিয়ে শুরু হয় তরজা । রাহুল গান্ধী স্পষ্ট বলেন, আমি অক্সফোর্ডে যে ভাষণ দিয়েছি তা সংসদেও বলতে চাই । আমাকে বলতে দেওয়া হোক । আর তা নিয়ে শুরু হয় সংসদ অচল করার অভিযান । রাহুল গান্ধীকে সংসদে বলতে দিন এই দাবিতে সোচ্চার হন কংগ্রেস সাংসদরা । অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদরা প্রতিদিনই গোলমাল করে সংসদ অচল করে দিতে থাকেন ।

ইতিমধ্যে, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের সময় কর্ণাটকে প্রচারে গিয়ে মোদী পদবী নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন রাহুল । ২০১৯ এর এই ভাষণ ১৬ এপ্রিল দেন রাহুল গান্ধী । তারপরেই তাঁর বিরুদ্ধে গুজরাটের সুরাট আদালতে অপরাধমূলক মানহানি মামলা দায়ের হয় । কিন্ত এই মামলা দায়ের হওয়ার পরেই আবার মামলাকারী পূর্ণেশ মোদী গুজরাট হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন । ফলে মামলার শুনানী বন্ধ ছিল । প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, সুরাট জেলা আদালতে মামলা করার সময় পূর্ণেশ মোদী আদালতে আবেদন করেছিলেন প্রতিটি শুনানীতে রাহুল গান্ধীকে হাজির হতে হবে । সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছিলেন তৎকালীন সুরাট আদালতের বিচারক । তারপরেই হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন পূর্ণেশ মোদী । এরপর দেখা গেল রাষ্ট্রপতির ভাষণে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখতে গিয়ে লোকসভায় রাহুল গান্ধী গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ আদানির সাম্রাজ্য এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে সরব হন । আর এটাই এই মামলার টানিং পয়েন্ট এরপর গুজরাট হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং সুরাট জেলা আদালত মামলার শুনানী শুরু হয়। মাত্র একমাসের ব্যবধানে রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্থ করা হয় এবং রায়ের দশ ঘন্টার মধ্যেই রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হয় ।

Advertisement

 

দু সপ্তাহ আগে লন্ডনে রাহুল গান্ধী ভাষণে দেশের গনতন্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, আর তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশী শক্তির সাহায্য চাওয়ার গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা।এদিকে,  বিজেপি সরকার তৎপরতার সঙ্গে মামলার রায় বের হওয়ার দশ ঘন্টার মধ্যে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করে দিয়ে দেশের গনতন্ত্রের দূর্বলতাকে বিশ্বের কাছে নিজেরাই প্রকাশ করেদিলেন । এই প্রসঙ্গে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য রে খান্নার মন্তব্যটি বিশেষ উল্লেখ্যযোগ্য । তিনি বলেছেন, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নিয়ে মোদী সরকার গান্ধীবাদ এবং দেশের রাজনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকা করেছে । বিদেশের সমস্ত প্রথম সারির সংবাদপত্রে সম্পাদকীয়তে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কাড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে । রাহুল গান্ধী বিদেশের মাটিতে যে কথাটি বলতে পারেননি, আজ বিদেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম সেই কথাগুলি স্পষ্ট ভাষায় বলছে । ভারতের নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা, সাংবিধানিক অধিকার যে প্রশ্নের মুখে তা বিদেশেও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

এজন্য দায় কার ? রাহুলের না মোদী সরকারের ! আর এই ঘরে বাইরের চাপের মুখে এখন কোনো প্রথম সারির বিজেপি নেতাকে রাহুল নিয়ে সাফাই দিতে দেখা যাচ্ছে না । এখন আসরে নামানো হয়েছে রবিশংকর প্রসাদকে । বিহারের এই বিজেপি নেতা আগামী দিনে জিততে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে !তিনি সাংবাদিকদের কী বলেছেন ? রাহুল কেন উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছেন ! উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ দিলেই রাহুলের সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে । এতদিন ধরে রাহুলের বাচনভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল , এবার উচ্চ আদালতের যাওয়ার পরামর্শ । রবিশংকর প্রসাদ এমনভারে বলছেন মনে হচ্ছে তিনিই যেন রাহুলের সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিতে পারেন ।

রাহুল কী বলছেন ? সাংসদ পদ থাকুক না থাকুক আমি সত্যে অবিচল থাকব ।ঘৃণার পরিবেশ থেকে দেশকে ভালবাসার বন্ধন আবদ্ধ করে তোলায় রাহুলের প্রথম কাজ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন ।তিনি আরও বলেছেন , আমি সাভারকার নই, আমি গান্ধী ক্ষমা চাইব না । আদানির সেল কোম্পানিতে ২০ হাজার কোটি টাকা কোথা থেকে এলো তা আমি জানতে চাই , দেশবাসীকে জানাতে চাই ।

সংসদে রাহুল নেই । সংসদের চার দেওয়ালের মধ্যে যে লড়াই চলছিল তা এখন রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে । এই অবস্থায় বিজেপির এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি ! কারণ রাহুলের প্রশ্নের উত্তর সংসদে দেননি প্রধানমন্ত্রী! এবার জনতার কাছে এই প্রশ্ন নিয়ে রাহুল যাবেন ! লড়াই এবার সংসদের চার দেওয়ালের মধ্যে নয়. লড়াই এবার সম্মুখ সমরে । জনতা বনাম বিজেপি । জিতবে কে ? বলবে ভবিষ্যৎ


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ