অন্যান্য কলকাতা 

Mamata Vs Muslim Vote: সাগরদিঘির পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি পারবেন বাঙালি মুসলিম ভোট তৃণমূলের অনুকূলে আনতে! কিভাবে পারবেন নাকি আর ফিরবে না, বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরাজিত হয়েছেন বলা যেতে পারে। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় বলে থাকেন ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রে তিনি প্রার্থী। অর্থাৎ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর নামটা বড় কথা নয় বড় কথা হচ্ছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনীত প্রার্থী সুতরাং তাকে ভোট দিন। তাকে ভোট দেওয়া মানে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দেওয়া। এই কথাগুলো আমাদের নয় এটা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সভা সমাবেশেই বলে থাকেন। তাই স্বাভাবিক নিয়মে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর হেরে যাওয়াটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেরে যাওয়ার শামিল।

তবে এ কথা ঠিকই সাগরদিঘি বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়াটা তৃণমূলের কাছে একটা বড় ধাক্কা। এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সমস্যার মূল গভীরে না ঢুকে যেভাবে তৃণমূল নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে শুরু করেছে তাতে এই সন্দেহটা দানা বাঁধছে। কেউ বলছেন এর নেপথ্যে বড় মন্ত্রির হাত রয়েছে আবার কেউ বলছেন দলের নেতারা অন্তর্ঘাত করার ফলে হারতে হয়েছে। দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব আগেও ছিল এবং এখনো আছে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আগে এর কোন প্রভাব পড়েনি। এবং এখনো পড়তো না যদি না এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিমদেরকে ক্রমাগত বঞ্চনার শিকার হতে না হতো।

Advertisement

এ কথা বলতে কোথাও দ্বিধা নেই সাগরদিঘি বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার মূল কারণ হলো এই রাজ্যের বাংলাভাষী মুসলমানদের সম্পর্কে শাসকদলের মনোভাব। বিজেপি দল যেভাবে সরাসরি এই রাজ্যের মুসলমান সমাজকে নিশানা করে, সেটা না করে খানিকটা সম্মানজনকভাবে বঞ্চনা করা হচ্ছে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আর এই বঞ্চনা থেকে জন্ম হয়েছে ক্ষোভের। ক্ষোভ থেকে জন্ম হয়েছে বিদ্বেষের আর এই বিদ্বেষই পরবর্তীকালে ভোট বাক্সে প্রতিফলিত হয়েছে। এ সহজ সত্য কথাটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের নেতৃত্বকে বুঝতে হবে।

এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচ জনের কমিটির গঠন করে সাগরদিঘি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সবচেয়ে অবাক লেগেছে এই কমিটিতে যে পাঁচজনকে রাখা হয়েছে এই পাঁচ জনের মধ্যে কম করে তিনজন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তার এলাকা থেকে জিততে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বাদ রাখা হয়েছে মুর্শিদাবাদে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খলিলুর রহমানকে, বাদ রাখা হয়েছে রাজ্যের অন্যতম সংখ্যালঘু মুখ ফিরহাদ হাকিমকে। আমাদের বোধগম্যই আসছে না কিভাবে খলিলুর রহমানকে বাদ দিয়ে সাগরদিঘি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করা যাবে ? কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কমিটি করেছেন তাতে গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যক্তিকে বাদ রাখা হয়েছে কেন? তা নিয়ে বাঙালি মুসলিম সমাজে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

আসলে বামফ্রন্টের আমল থেকেই বাঙালি মুসলিমদের বঞ্চিত করে রাখার যে প্রবণতা ও ধারাবাহিকতা চলে আসছে তা এখনও মমতার আমলে একইভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। উন্নয়ন হয়েছে বলা হচ্ছে উন্নয়ন যদি হয়ে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষ তো ভোট দেবেই এটাই তো প্রবণতা। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাধারন মানুষের স্বার্থে উন্নয়ন করাটা ক্ষমতাসীন দলের দায় এবং দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তা বলে এই উন্নয়নের গল্প ছড়িয়ে কেন সংখ্যালঘুরা ভোট দিলো না তা নিয়ে চিল চিৎকার করার কোন প্রয়োজন পড়ে ?  করাও উচিত নয়, খতিয়ে দেখা উচিত এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিমরা কেন মমতার কাছ থেকে সরে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আমার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বড্ড জানতে ইচ্ছা করে এই রাজ্যে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের একজন মাত্র বিধায়ক। তার নাম নওশাদ সিদ্দিকী, সেই অর্থে এই রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি খুব বেশি জনপ্রিয় ছিলেন না তাহলে তাকে কোন অপরাধে ৪২ দিন জেলের মধ্যে রাখা হলো? এই রাজ্যের সাধারণ মানুষ সেটা জানতে চাই। তার মানে কি এটাই যে সরকারের যদি কেউ বিরোধিতা করে তাহলে তাকে জেলের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে? যদি এই প্রবণতা থাকে সেই প্রবণতাকে স্বৈরাচারী প্রবণতা ছাড়া,অন্য কিছু বলা সম্ভব হবে কি? মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাদের আবেদন আপনি একবার আত্ম সমালোচনা করে ভাবুন। নওশাদ সিদ্দিকীকে জেলে ঢোকানোটা কতটা আপনার দলের পক্ষে মঙ্গল হয়েছে! আমরা বাংলার জনরবের পক্ষ থেকে যখন এ ব্যাপারে বারবার আমাদের সীমিত ক্ষমতা নিয়ে বলতে চেয়েছি আপনারা সে কথা শোনেননি।

এই রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজ কোনো রাজনৈতিক দলের বোরে কোনদিন ছিল না। স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিমবাংলায় যতগুলি সরকার পরিবর্তন হয়েছে সব সরকারের পরিবর্তনের পেছনে ছিল,বাঙালি মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ সহজ সরল কথাটি বুঝে উঠতে পেরেছিলেন একমাত্র এই রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়। তারপর থেকে একজন মুখ্যমন্ত্রীও বাঙালি মুসলিম সমাজকে সেই ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভেবে দেখেননি। বামফ্রন্ট বা সিপিএমের মতো অতি সেকুলার দল কমরেডদের আস্ফালানের সঙ্গে মুসলিম সমাজের বার্তাকে, মুসলিম সমাজের কষ্টকে সামনে আনতে দেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর। এই রাজ্যের নিচু স্তরে অর্থাৎ পঞ্চায়েত স্তরে সংখ্যালঘুদের ক্ষমতার খানিকটা ভাগ দিয়েছেন একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জেতার পর কার্যত এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিমদেরকে ব্রাত্য করে দেন। তারই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এই রাজ্যের ভোট বাক্সে।

সুতরাং এ কথা বলতে আমার দ্বিধা নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত অবিলম্বে বাঙালি মুসলমানদের সুখ দুঃখের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা। আমরা বিশ্বাস করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো পারবেন। বাঙালি মুসলমানদেরকে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসতে। আর তা করতে হলে তাদের সমস্যাগুলি নিয়ে ভাবুন।আর এটা না করে যদি এটা বলতে থাকেন সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে অনেক করেছি তারপরও কেন তারা ভোট দিলো না তাহলে ভোট আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ সমাজের উন্নয়ন করাটা যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রতিনিধির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে আর ভোট দেওয়াটা জনগণের ইচ্ছার ওপর পড়ে। দুটোকে একসঙ্গে মেলাতে গেলে দূরত্ব আরো বাড়বে ফলে ভোট হারানোর সম্ভাবনা প্রবল হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম ভোটই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল শক্তি। এই শক্তি যদি সরে যায় তাহলে বিজেপির পক্ষে এই রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করাটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।

অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনুসারে যে এই রাজ্যে একটা অশুভ জোট তৈরি হয়েছে, সেটা হলো বাম কংগ্রেস এবং বিজেপি জোট। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় এদের কোন আদর্শ নেই শুধুমাত্র তৃণমূলকে হারাতে এরা একজোট হয়েছে। তবে এ কথাটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু এটা তো সত্য সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির ভোট কংগ্রেসের দিকে পড়েছে অন্যদিকে তৃণমূলের একটি বড় অংশের ভোট কংগ্রেসের দিকে গেছে। তাহলে কি এটা মনে করা হচ্ছে বামপন্থীদের হারিয়ে যাওয়া ভোট যেটা বিজেপিতে চলে গিয়েছিল সেটা আবার ফিরে আসছে। যদি তাই হয় তাহলে মমতার বিপদ আরো বাড়বে। এই রাজ্যের রাজনৈতিক লড়াইটা বাম কংগ্রেস বনাম তৃণমূলের মধ্যে শুরু হবে সেক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিম ভোটে আরও বেশি ভাঙ্গন ধরবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি ঘুরিয়ে সেই বার্তায় দিয়ে দিলেন? আর এটা যদি হয় মুসলিম ভোট এবং বামপন্থীদের হারিয়ে যাওয়া ভোট বিজেপি থেকে ফিরে আসে তাহলে আগামী দিনে এই রাজ্যে বিজেপিও আর থাকবে না।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ