অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীর দরবার 

বামপন্থীদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে উদয়নারায়ণপুর এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন গড়ার অন্যতম কারিগর বিধায়ক সমীর পাঁজার কন্ঠে বিদায়ের সুরে প্রতিফলিত হচ্ছে এ বাংলার একনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভের বার্তা! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী শুনতে পাচ্ছেন ?/এস এম শামসুদ্দিন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

হাওড়া জেলার উদয়নারায়নপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সমীর পাঁজা ফেসবুকে এক পোস্ট করেছিলেন যা নিয়ে রীতিমতো বাংলার রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সমীর পাঁজার এই ধরনের পোস্টের নেপথ্যে রয়েছে এই রাজ্যের শাসকদলের একনিষ্ঠ কর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তা নিয়ে বাংলার জনরবে কলম ধরেছেন বিশিষ্ট লেখক ও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী এসএম শামসুদ্দিন। এই লেখাটি শামসুদ্দিন সাহেবের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া হয়েছে।

এস এম শামসুদ্দিন : গত কাল শনিবার ২৪ শে সেপ্টেম্বর সকালে উদয়নারায়ন পুরের জনপ্রিয় বিধায়ক ও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উন্নয়নের নির্ভিক সৈনিক বিধায়ক সমীর পাঁজার কিছু প্রতিক্রিয়া নিয়ে ফেবু থেকে একাধিক সংবাদ মাধ্যম সরগরম ।আলোচ্য বিষয় এটাই, রাজনৈতিক কর্মী থেকে নেতৃত্ব।

Advertisement

বলার অপেক্ষা রাখে না যে তিনি দলের জেলার শীর্ষ পদে আছেন কিন্তু তিনি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছেন না।

এক সময়ের বামপন্থীদের দুর্গ হাওড়া জেলার উদয়নারায়নপুর বিধান সভা কেন্দ্র ।গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা ও লোকসভা,একেবারে পা থেকে মাথা পর্যন্ত লালে লাল । ননী চৌধুরীদের মৌরুসী পাটটা।

উদয়নায়রায়ন পুরের এক সাধারণ পরিবারের সন্তান সমীর পাঁজা। কংগ্রেসী পরিবারের সন্তান।

সে সময় কংগ্রেস দল করা পরিবারদের কী বঞ্চনা কি অত্যাচার সহ্য করে আপোষ করে বাঁচতে হয়েছে নতুন করে বলার নই। কলেজে পড়া থেকেই ছাত্র পরিষদ করে উঠে আসা সমীর পাঁজা। মমতা বন্দোপাধ্যায় তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। বর্তমান সম্মানীয় সমবায় মন্ত্রী বিশিষ্ট আইনজীবী শ্রী অরূপ রায় , শ্রী পুলক রায় , রাজা সেন, অভয় দাস,ইমানুর রহমান *(কোচন )দা দের কী কঠিন সংগ্রাম করে বাঁচার এবং জনগণকে পাশে থেকে লড়াই করেছেন আমরা শিকার হয়েছি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি এবং গ্রাম ছাড়তে হয়েছে।

যুব কংগ্রেস থেকে তৃনমূল কংগ্রেস দলের সূচনা থেকে উত্থান এক দীর্ঘ সংগ্রাম ।

   লেখক এস এম শামসুদ্দিনের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ক্ষমতায় আসার আগের ছবি)।

আমার গ্রামের একটা গ্রাম পরেই আমার মামার বাড়ী মেজুটি। আমার নানা (সম্পর্কে)আব্দুল মত্তালিব সাহেবের নামে আব্দুল মোত্তালিব হাই মাদ্রাসায় সমীরদা শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবনের শুরু ,আর আমি ওই গ্রামেরও একটা গ্রাম পরে

পাঁচলা আজীম মোয়াজ্জম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করি ।এই যাওয়া আসার পথে তালসারির ফাঁকা (এখন অবশ্য ঘনবসতি)দীর্ঘ পথে রোজই দেখা হত সমীর দার সঙ্গে। উনি পাঁচলা বাস স্ট্যান্ড থেকে সাইকেলে লালের তাড়ায় আমিও সাইকেলে লালের হানায় হনহনিয়ে মাথা নেড়ে বার হয়ে যাই)

এরই সঙ্গে তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন মানুষের পাশে থেকে।আপোষহীন ভাবে নির্ভিক চিত্তে।

তাঁকে দমিয়ে রাখার জন্য মার্ডার কেসের আসামী করা হয়েছে , বাড়ী ছাড়া করা হয়েছে ,পরিবারকে সর্বত্র বয়কট করে বাঁচা দুষ্কর করে তোলা হয়েছে ।কিন্তু আপোষহীন সংগ্রামী সমিরদাকে থামাতে পারেনি ।

আমার গ্রামে আমার আব্বার অধ্যাপক মোঃ আব্দুল আহাদ প্রতিষ্ঠিত এক হাই মাদ্রাসার( যাঁর বর্তমানে আমি সম্পাদক) এক অনুষ্ঠানে সুলতান আহমেদ ও উনি এসেছিলেন ।তখন উনি বিধায়ক ও নন।তারপর তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামে তাঁর নেতৃত্বে একের পর এক পঞ্চায়েত বামপন্থা ছেড়ে তৃনমূল । তিনি থাকেন মানুষের পাশে ,মানুষের সাথে , উন্নয়ণের সঙ্গে।এক প্রকৃত জনদরদী নেতা যিনি মানুষের কথা শোনেন সমাধানে আন্তরিক চেষ্টা করেন ।

সাধারণ মানুষের ফোন ধরেন ,কথা শোনেন, উত্তর দেন।

উঁচুতে অনেক দূরে গেলেও তিনি ভোলেন না অতীত। আমরা তো সেই নিচেই, উনী তো উঁচুতে অনেক। তাহলেও ভোলেন না , অবহেলা অবজ্ঞা করেন না।সাধারণ মানুষ আমরা এমন নেতাদের সঙ্গে একটু কথা বলতে পারলেই এক অজানা সুখে মন প্রাণ ভরে যায়।

সে বার ওনার এলাকার আমার এক অত্যন্ত অনুগত পুত্র সম আসিস ছড়ির এক সমস্যা নিয়ে ওনাকে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম।(কী জানি মনে রেখেছেন না কী এড়িয়ে যাবেন ভেবে) কিন্তু উনি এক নিমেষেই ফোন ধরে বললেন আরে শামসুদ্দিন দা কেমন আছেন বলুন , পরিবার পরিজনদের কথা সে কথার পর আসিসের সমস্যার কথা বললাম।শুনে ওনার বাড়িতে ওকে পাঠিয়ে দিতে বললেন, এবং ওর সমস্যা শুনে নিমেষে সমাধান করে দিলেন। কৃতজ্ঞতা জানাই।যিনি দল বা মত বোঝেন না ,বোঝেন মানুষের সমস্যা , সমাধানে আন্তরিকতা দেখান ,তিনি মানুষের অন্তরে থাকবেন না কে থাকবেন?

উদয়নারায়ণ পুরের প্রত্যেকটা গ্রাম থেকে গ্রাম আজ তৃনমূল ময়।সেই জনদরদী দীর্ঘ সংগ্রামী নায়কের অন্তরে আজ বিষাদের বাঁশীর সুর। কেন? প্রকৃত সংগ্রামী কর্মী ও নেতৃত্বেদের সঠিক যথাস্থানে সম্মান না দিতে পারার ব্যাথায় বেদনাহত হয়ত ,হয়ত বিবেক বোধের জায়গায় তিনি নির্বাক,অসহায় । আমার এবং আমাদের মত অসংখ্য একনিষ্ট কর্মী বিভিন্ন বিধানসভায়, গ্রামে অপেক্ষায়।সময়ের অপেক্ষায়, আগামী দিনে সিদ্ধান্ত নেবেই ।

এই রকম সর্বত্রই দলের দুর্দিনের সংগ্রামী কর্মী একটা শ্রেণী অসহায় অবস্থায় নির্বাক।নিরব।

প্রকৃত অবস্থা পর্যালোচনা অনুধাবন ও সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে , দীর্ঘ দিনের সংগ্রামী কর্মী দের যোগ্য সম্মান মর্যাদা না দিতে পারলে বিদায়ের ঢল নামবে সন্দেহ নেই,যাঁরা অস্বীকার করে , জানতে হবে মাটির সঙ্গে ,মানুষের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেই।

সামনের দিনে তার প্রতিফলন দেখা দেবে এ কথা নতুন করে বলার নেই।মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে আজ তথ্য সংগ্রহের যন্ত্র । দলের সূত্র ছাড়াও সরকারি সূত্র মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন, নিশ্চিত ভালো করেই তিনি বোঝেন – সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আপোষ করবেন না বলেই বিশ্বাস।

@এস এম শামসুদ্দিন


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ