কলকাতা 

মুসলিম মৌলবাদী নেতারা যত চিৎকার করবেন , ততই বিজেপি-র পথ সুগম হবে : সরদার আমজাদ আলী

শেয়ার করুন
  • 21
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশেষ প্রতিনিধি : সম্প্রতি কয়েকটি মুসলিম সংগঠন কলকাতায় মুসলিমদের দাবি দাওয়া নিয়ে সভা করে । আর এই সভাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের মুসলিম সমাজ দ্বিধা বিভক্ত । সোস্যাল মিডিয়ায়  ঝড় বয়ে যাচ্ছে । বিভিন্নভাবে তার ব্যাখা করা হচ্ছে । রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী একটি সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন , বিজেপি চেষ্টা করছে এই ধরনের বিভেদ তৈরি করতে । আমরা এ নিয়ে কথা বলেছিলাম রাজ্যের সবচেয়ে প্রবীণ বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট আইনজীবী সরদার আমজাদ আলীর সঙ্গে । তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দেশে  এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস ছাড়া সব দলই মৌলবাদী শক্তিকে প্রশয় দেয় । আমাদের মনে রাখতে হবে, হিন্দু মৌলবাদকে ঠেকানোর জন্য মুসলিম মৌলবাদকে রাস্তায় নামানো হলে তা রাজ্যের সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক ।

রাজ্যে মুসলিম নেতা বলে তো কিছু নেই বলে আমার মনে হয় । যারা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু নেতা বলে দাবি করেন , তাদের মনে রাখতে হবে যে সংখ্যালঘু বলতে শুধুমাত্র মুসলিমদের বোঝায় না । মুসলিমরা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী । এছাড়া অমুসলিমদের মধ্যে সংখ্যালঘু আছে । শুধুমাত্র মুসলিমদের সমস্যাকে তুলে ধরে যদি আন্দোলন করা হলে সেই আন্দোলন  মুসলিম মৌলবাদী আন্দোলনে পরিণত হবে । তাই সংখ্যালঘুদের সার্বিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করা উচিত । আর সেই সঙ্গে সেই দাবি ন্যায্য কিংবা অ-ন্যায্য হতে পারে তবে তা আদায় করার জন্য মাঝে মাঝে কৌশল অবলম্বন করতে হয় । রাজ্যে যখন একটি বিভেদকামী শক্তি হিন্দু মৌলবাদকে প্রচার করার জন্য নানাভাবে ফাঁদ পাতছেন ঠিক সেই সময় সেই ফাঁদে মুসলিম নেতাদের পা দেওয়া উচিত হয়নি ।

Advertisement

বর্ষীয়ান প্রাঞ্জ রাজনীতিবিদ সরদার আমজাদ আলী বলেন, আমি রাজনীতির বাইরে গিয়ে এই কথাগুলি বলছি । কারণ আমার নবী (সা) কোনোদিন ইমাম ভাতা দেওয়ার দাবি করেননি । এমনকি রাজকোষ থেকে সামান্য অতিরিক্ত অর্থও তিনি তাঁর মেয়েকে দেননি । এই ইতিহাস যখন ইসলামে আছে তখন ইমাম ভাতার দাবি করা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয় । যে সমাজে যাকাত আছে, সদকা আছে , যে সমাজে ফিতরা আছে ,সেই সমাজ কেন সরকারের কাছে হাত পাতবে । আমাদের নবী ইসলামকে স্বয়ং সম্পূর্ন ধর্ম হিসেবে পরিপূর্ণতা দিয়ে গেছেন ।  আমাদের সমাজের অভিভাবক ইমামদের আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য কিছু করতে পারছি না । তারজন্য  আমাদের সমাজের স্বঘোষিত নেতারা সরকারের কাছে ভিক্ষার পাত্র নিয়ে হাজির হচ্ছে । এতে ইসলামের সম্মানহানী হানি হচ্ছে বলে আমি মনে করি । এর ফলে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে । আর ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি তাদের প্রভাব এই রাজ্যে বাড়িয়ে তুলছে ।

এক প্রশ্নের উত্তরে  প্রাক্তন সাংসদ সরদার আমজাদ আলী বলেন, বিজেপি বসে নেই । তাঁরা নিরবে এই রাজ্যের সংখ্যাগুরুদের মধ্যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে । এবার তাদের টার্গেট রাজ্যের মুসলিমরা । কারণ তারা কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, যেমন তালাক ইস্যুতে । তালাক প্রাপ্তদের অধিকার দেওয়ার দাবিতে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদী যেকাজ করলেন তা তো আমাদের সমাজের নেতাদের করা উচিত ছিল । এটা তো বাস্তব যে মুসলিম পরিবারের অনেক মেয়ে তালাকের শিকার । তারা অসহায় হিসেবে জীবন-যাপন করেছে,তাদের দুঃখে এই স্বঘোষিত নেতাদের কোনো সহমর্মিতা দেখা যায়নি। নরেন্দ্র মোদী যখন তালাক নিয়ে সোচ্চার ঠিক তখনই মুসলিম পার্সোনাল ল‘বোর্ড সালিশির মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কথা বলছে ? আগে এরা কোথায় ছিল ? যদি আগেই তালাকপ্রাপ্তা মেয়েদের স্বার্থে মুসলিম নেতারা কাজ করত তাহলে বিজেপির বলার জায়গা থাকত না । মুসলিম মৌলবাদীরাই তাদের সুযোগ করে দিয়েছি আমাদের ঘরে ঢোকার । এবার তারা (বিজেপি) প্রশ্ন তুলবে রাজ্যের ইমাম মোয়াজ্জেমদের ভাতা দিতে বছরে ১৯৮ কোটি টাকা খরচ হয় । অথচ রাজীব গান্ধীর আমলে তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলাদের পুর্নাবসানের জন্য যে আইন  তৈরি করা হয়েছিল তাতে পরিস্কার বলা হয়েছে,তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মেয়েদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে  ওয়াকফ বোর্ডের তহবিল থেকে । তাহলে আজকে যদি কোনো বিজেপি নেতা মুসলিম তালাক প্রাপ্ত নারীদের উদ্দেশে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আইন ভেঙে ইমামদের ভাতা দিচ্ছেন অথচ আইন মতে তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মেয়েদেরকে দিচ্ছে না । তখন কী বিজেপির এই প্রচারকে আটকানো সম্ভব হবে ? আর তারা যদি এ ধরনের প্রচার শুরু করে তাহলে তো মুসলিমদের কিছুটা সমর্থন পেয়েই যাবে । তখন কী হবে ? এসব কী একবারও ভেবে দেখেছেন স্বঘোষিত মুসলিম নেতারা । ভাবেন নি ।দূভার্গ্যের বিষয় হল ,আমাদের সমাজে যাঁরা নিজেদের নেতা হিসেবে জাহির করেন তাঁরা না জানেন সংবিধান , না জানেন আইন ? দেশে  কংগ্রেস সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গেছে এবং আইন করে গেছে সে সম্পর্কে কোনো খোঁজ –খবর এঁরা রাখেন বলে আমার মনে হয় না। যদি রাখত তাহলে আন্দোলন আইন মেনেই করা হত । তাতে সুবিধা হত আন্দোলনের পরেই সরকারও সেই আন্দোলনের যৌক্তিকতা মেনে নিত । কিন্ত এখন যা হচ্ছে তা হল, নিজেকে জাহির করার চেষ্টা । প্রচারের আলোয় থাকার চেষ্টা ।

এরফলে বিজেপি-র কী সুবিধা হয়ে যাবে ? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রাক্তন সাংসদ ও বর্ষীয়ান আইনজীবী সরদার আমজাদ আলী বলেন, অবশ্যই সুবিধা হবে । বিজেপির সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই তো এই সভা । তাহলে তো আপনার বক্তব্য আর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য এক হয়ে গেলে কী বলেন ? এক কেন হবে । তিনি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হয়ে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন । আমার প্রশ্ন তারা কী করেছেন ? রাজ্যের মুসলিমদের ভিক্ষা দেওয়া ছাড়া । আমি রাজনীতির বাইরে গিয়ে এই সমাজের একজন মানুষ হিসেবে সমস্যার গভীরে ঢোকার চেষ্টা করেছি মাত্র । আর ফিরহাদ হাকিমারা বাইরে বিজেপির বিরুদ্ধে অন্তরালে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করছেন। এই বিষয়টিকে রাজ্যের মুসলিম এবং তথা-কথিত মুসলিম নেতাদেরকে ওয়াকিবহাল করার জন্য আমি এই কথাগুলি বলছি বলে সরদার আমজাদ আলী মন্তব্য করেন।


শেয়ার করুন
  • 21
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

10 + eighteen =