অন্যান্য 

পিছিয়ে পড়া মানুষের  প্রতিনিধিত্বহীনতা ও ক্ষমতায়নের দাবি উঠলেই ধর্মের বিষয়টি সচেতনভাবে হাজির করে দেওয়া হয় ; আমাদের এটাও ভাবতে হবে যে, রাজ্যে ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠী যদি সব দিক থেকে পশ্চাদপদই থেকে যায়, তাহলে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন কীভাবে হবে ? : ড. আবদুস সাত্তার

শেয়ার করুন
  • 307
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের পর ৭২ টি বছর পার করেছে। আজও দেশের সাধারণ মানুষ সেই অর্থে স্বাধীনতা পেয়েছে কী ? ৭২ বছর পর হিসাব মেলাতে গিয়ে প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তির সংখ্যাটাই বেশি করে চোখে পড়ছে। ৭২ বছর পরও এদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনের সারিতে আনার প্রতিশ্রুতি এখনও দেওয়া হয় দলিতসংখ্যালঘুরা এতদিন ধরে যে অর্জিত স্বাধীনতার সম্পদ ভোগ করে আসছিল তা আগামী দিনে থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দেশজুড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের জাতীয়তাবাদ এমন জায়গায় পৌছে গেছে যে আজ দেশের সব রাজনৈতিক দলই মন্দিরমুখী হয়ে পড়েছে স্বাধীনতার ৭২ বছর পর এদেশের দলিতসংখ্যালঘুদের নানা বিষয় নিয়ে বাংলার জনরব নিউজ পোর্টালের মুখোমুখি নব বালিগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক এবং রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন মন্ত্রী . আবদুস সাত্তার আজ নবম কিস্তি।

  প্রশ্ন : রাজনৈতিক মহলে, প্রায়শই দেখা যায় যে মুসলিম অধ্যুষিত লোকসভা বিধানসভায় কোনো সংখ্যাগুরু প্রার্থী দেওয়ার সাহস কোনো  রাজ্যের রাজনৈতিক দল দেখাতে পারে না । এ এক ধরনের তোষণ । এ সম্পর্কে কি বলবেন ?

Advertisement

 ড. আবদুস সাত্তার  : স্বাধীনতা পরবর্তী লোকসভা , বিধানসভার চিত্র তো এর  বিপরীত সাক্ষ্যই বহন করে চলেছে । কথাগুলি বলছি তার কারণ হল –

এক , রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিমের বসবাস । সেই অনুযায়ী লোকসভায় প্রায় ১৪ জন , বিধানসভায় ৯০ জন ও রাজ্যসভার ক্ষেত্রে অন্তত ৫ জন থাকার কথা । তা আছে কি ? কোনো ক্ষেত্রেই সমানুপাতিক হারে তা নেই । নেই বলেই তো প্রতিনিধিত্বের ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে । সংখ্যালঘু  অধ্যুষিত এলাকা থেকে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিলেই তো ঘাটতি থাকার কথা ছিল না । অর্থাৎ রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে সংখ্যালঘু এলাকায় সব সময় সংখ্যালঘু প্রার্থী দেয়নি । বরং বিপরীত মুখী প্রবণতা বেশি ।

দুই, ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে কী কোনো মুসলিম সাংসদ ছিলেন ? আবার মূর্শিদাবাদ. মালদহ, উত্তরদিনাজপুরের লোকসভা কেন্দ্রের মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থী তালিকার দিকে নজর দিলেই বিষয়টি পরিস্ফুট হয়ে যাবে । আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যায় । মূর্শিদাবাদ জেলায় ৭০ শতাংশ মুসলিমের বাস , তিনটি আসনের মধ্যে মাত্র ১ জন মুসলিম সাংসদ রয়েছেন ।

তিন , স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বিধানসভার সদস্যের বিষয়টি পর্যলোচনা করলে দেখতে পাবেন , সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা থেকে বহু সংখ্যাগুরু মানুষ বিধায়ক হিসাবে জিতে এসেছেন, এখনও আসছেন এবং মন্ত্রীও হয়েছেন ।

চার , সাচার প্রতিবেদনে উল্লেখিত হয়েছে যে , রাজ্যের ১২ টি বিধানসভা কেন্দ্র যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের অধিক অথচ সংরক্ষিত হয়ে গেছে । আর তা রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলেচনাক্রমেই ডিলিমিটেশন ( সীমা নির্ধারণ) কমিটি  সংরক্ষিত করেছিল । কোনো রাজনৈতিক দল কি কোনো প্রতিবাদ করেছিল ? কোন রাজনৈতিক দল এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ?

পাঁচ , দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় প্রায় ৩৮ শতাংশ মুসলিম মানুষের  বাস । চারটি লোকসভা কেন্দ্র একজনও তো সাংসদ নেই ! ২০১১ সালে জনগণনা প্রতিবেদন থেকে তথ্য আহরন করে লোকসভা, বিধানসভার বিষয়টি যাচাই করে নিতে পারেন ?

ছয়, রাজ্যের ৭০ শতাংশ সংখ্যাগুরু অধ্যুষিত লোকসভা বা বিধানসভা কেন্দ্র কি দেখাতে পারেন যেখানে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলি একজন মুসলিমকে প্রার্থী করেছে অথবা সেই প্রার্থী জয়ী হয়েছে ? সাধারনত তা হয় না  বললেই চলে । দু একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকতেই পারে ।

সাত , এই ধরনের মিথ্যে প্রচার গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ জনপরিসরকে আরো সংকুচিত করবে । পিছিয়ে পড়া মানুষের  প্রতিনিধিত্বহীনতা ও ক্ষমতায়নের দাবি উঠলেই ধর্মের বিষয়টি সচেতনভাবে হাজির করে দেওয়া হয় । আমাদের এটাও ভাবতে হবে যে, রাজ্যে ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠী যদি সব দিক থেকে পশ্চাদপদই থেকে যায়, তাহলে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন কীভাবে হবে ? গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটা ।

 


শেয়ার করুন
  • 307
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

4 × 5 =