অভিযুক্তদের ভোটে দাঁড়ানোর ওপরে নিষেধাঞ্জা জারি করল না শীর্ষ আদালত
বিশেষ প্রতিনিধি : অভিযুক্তদের ভোটে দাঁড়ানোয় বাধা দিতে নারাজ সুপ্রিম কোর্ট। এবিষয়ে সংসদকেই আইন তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাজনীতিতে অপরাধীদের প্রবেশ দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের তরফে। সুপ্রিম কোর্টের মঙ্গলবারের রায়ের পর অপরাধীদের ভোটে দাঁড়ানোয় আর কোনও বাধা রইল না।মামলা নিয়ে রায় দেওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি দুর্নীতিকে ‘জাতীয় অর্থনীতিতে সন্ত্রাস’ বলে বর্ণনা করেন।অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মনোনয়ন পেশের পর রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীরা অপরাধ রেকর্ড সম্পর্কে খবরের কাগজ এবং টিভি চ্যানেলে অন্তত যেন তিনবার বিজ্ঞপ্তি দেয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অপরাধী মুক্ত রাখতে একাজ সাহায্য করবে বলে মনে করছে সর্বোচ্চ আদালত। এ সম্পর্কে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ভোটদাতাদেরও জানার অধিকার রয়েছে, তাঁদের প্রার্থীরা অতীতে কোনও অপরাধের যুক্ত হয়েছিলেন কিনা।
এ সংক্রান্ত মামলা প্রেক্ষিতে কেন্দ্র শীর্ষ আদালতকে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, দেশের ৩৬ শতাংশ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় বিচার চলছে। দেশে মোট সাংসদ ও বিধায়কের সংখ্যা ৪৮৯৬। তার মধ্যে বিভিন্ন মামলায় ১৭৬৫ জনের বিচার চলছে। মামলার সংখ্যা ৩০৪৫।
‘পাবলিক ইন্টারেস্ট ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে মূল জনস্বার্থ মামলাটি করেন আইনজীবী দীনেশ দ্বিবেদী। তাঁর বক্তব্য ছিল, দাগি নেতারা যাতে ভোটে লড়তে না পারে, সে রকম কোনও আইন কোনওদিনই পাশ করবে না সংসদ। তাই কোনও ফৌজদারি মামলায় কারও বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হলেই তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার কেড়ে নেওয়া হোক। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন রুখতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি রোহিনটন নরিম্যান, বিচারপতি এ এম খানউইলকর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি ইন্দু মিশ্র। সরকার পক্ষে সওয়াল করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল কোট্টায়ন কাটানকোট বেনুগোপাল। বিপক্ষে তাঁরই ছেলে কৃষ্ণন বেনুগোপাল।
শুনানি চলাকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি আদালতকে বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই কাউকে দোষী ধরে নেওয়া এবং ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান বিরোধী। এতে ভোটাধিকার এবং ভোটে (রাইট টু ভোট) দাঁড়ানোর (রাইট টু কনটেস্ট) অধিকার লঙ্ঘন করা হবে। তিনি আরও বলেন, শীর্ষ আদালত নিশ্চয়ই এ বিষয়ে অবগত যে, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে বহু ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের হয়।জুনিয়র বেনুগোপালের পাল্টা যুক্তি, নেতাদের বিরুদ্ধে অধিকাংশ মামলাই প্রচুর দেরি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তার মধ্যেই ভোটে দাঁড়িয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদও সম্পূর্ণ করে ফেলেন এই সব নেতারা। একইসঙ্গে তিনি বলেন, এই সব চার্জশিট প্রাপ্ত নেতাদের ভোটে দাঁড়ানো ঠেকাতে আইন প্রণয়ন করা উচিত। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলিকেও এই ধরনের প্রার্থীদের টিকিট না দেওয়ার জন্য পরামর্শ বা নির্দেশ দিতে পারে।
বর্তমানে খুন, ধর্ষণ কিংবা অপহরণের সঙ্গে যুক্তরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। আইনসভার সদস্যদের সদস্যপদ বাতিল করতে একাধিক আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে।