অন্যান্য কলকাতা 

আরএসএস-বিজেপির পাতা ফাঁদে বারবার পা দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় !

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : কংগ্রেস-সিপিএম অভিযোগ করে থাকে তৃণমূল এবং বিজেপির সঙ্গে গোপন সমঝোতা রয়েছে । অনেকে আবার দিদি-মোদি গটআপ বলে দাবি করে থাকেন । কিন্ত আমাদের তা মনে হয় না । আমরা কেন ভারতের বিজেপি বিরোধী মানুষদের অধিকাংশই মনে করে মোদির সবচেয়ে বড় সমালোচক এবং কঠোর বিরোধী মমতা । তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই , তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় যেন একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছেন । প্রশাসন এবং দলের অন্দরে তাঁর প্রভাব যে কমেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । কেন এমন কথা আমরা বলছি ? প্রশ্ন উঠতেই পারে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমার উপর ক্ষুদ্ধ হতে পারেন ! তাঁরা জানতে চাইতে পারেন কোন সূত্রে বলা হচ্ছে প্রশাসনের অন্দরে মমতার রাশ কমছে । উত্তর একটাই আনিস খানের হত্যার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন ১৫ দিনের মধ্যে এই হত্যা রহস্যের সমাধান করা হবে । মুখ্যমন্ত্রীর কথা মানে প্রশাসনের শেষ কথা বলা হয়ে থাকে কিন্ত দেখা গেল ১৫ দিন কেন ? এক মাসেও এই তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়নি, কবে হবে তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন রাজ্য পুলিশের ডিজিপি ?

অথচ, দেখুন আনিস খানের হত্যার পরেই রাজ্যজুড়ে সংখ্যালঘু সমাজের ক্ষোভ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন কিনা জানি না , তিনি যদি আন্তরিক উদ্যোগ নিয়ে জো –হুজুরদের কথার বাইরে গিয়ে খোঁজ নেন তাহলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন তাঁর সাদা শাড়িতে দাগ লেগেছে । আর বিজেপি-আরএসএস এই কাজটাই নিরবে করার চেষ্টা করছে । তৃণমূল দলে এবং প্রশাসনের অন্দরে বিজেপির লোকেরাই মমতাকে ভুল পথে পরিচালিত করছে  এনিয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।

Advertisement

আনিস খানের হত্যার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বর্ধমানের তুহিনা খাতুনের মৃত্যু বাংলার সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে । তৃণমূলের নেতারা কতটা হৃদয়হীন হতে পারে তার নমুনা তুহিনার মৃত্যু । এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযুক্ত জয়ী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত নিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই । আগামীতে এই ঘটনা আরও বৃহত্তর আকার নিতে পারে । গড়বেতায় আত্মহত্যা করেছেন একজন প্রতিবন্ধী ভুগোলের শিক্ষক তিনিও শাসক দলের অমানবিকতার শিকার । তিনি বহুদিন থেকে বদলীর জন্য আবেদন করছিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশন তার বদলী করেনি । একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষকের বদলীর অধিকার তো আছেই । সেই অধিকার কেন কার্যকর হলো না ? অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই নির্দেশ দিয়েছিলেন সব শিক্ষককে জেলায় বদলী করে দেওয়ার । ওই ভুগোলের শিক্ষক যদি সামান্য সহানুভূতি পেতেন শিক্ষা দফতরের তাহলে অকালে তাঁকে মরতে হতো না । মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ওই  শিক্ষকের মৃত্যুর জন্যও কী বিরোধীরা দায়ী ?

এহো বাহ্য! এরপর মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রার্থী করলেন বাবুল সুপ্রিয়কে । কেন বাবুল ? এই প্রশ্ন আম জনতার । এই সেই বাবুল যিনি আসানসোলের ইমামের ছেলে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর দুঃখপ্রকাশ তো দূরের কথা কটাক্ষ করেছিলেন । তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালিগঞ্জে প্রার্থী করলেন । বাবুল জিতবেন , এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই , তবে মুসলিমদের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি যে খারাপ হয়েছে তা নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষন করতে পারবেন না ।

আর এটাই চেয়েছে আর এসএস বিজেপি । কেন জানেন ? গত বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাদা শাড়িতে ত্যাগ ও মানবিকতার বার্তা ছিল , সেই কারণেই বহু চেষ্টা করেও সমস্ত গণমাধ্যম এবং এজেন্সীকে ব্যবহার করেও মমতার জনপ্রিয়তাকে কমাতে পারেনি বিজেপি-আরএসএস । যে কারণে মমতা অবিচল থেকে গেছেন । আর তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর মমতার সাদা শাড়িতে একের পর এক দাগ লাগতে শুরু করেছে । এখনই  এ বিষয়ে সর্তক না হলে আখোরে পস্তাতে হবে !

রামপুরহাটের ঘটনাকে নরসংহার বললে অতুক্তি হবে না । গুজরাটে  একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের উপর হামলা করেছিল নৃশংসভাবে । আর এখানে তৃণমূলের লোকেরাই তৃণমূলের সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েছে । অথচ মুখ্যমন্ত্রী থেকে দলের মুখপাত্র বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের গল্প ফাঁদছেন । কেন ? এই গল্প । আসল সমস্যা থেকে মানুষের মনকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই এই গল্প ফাঁদা হচ্ছে ? কিন্ত ক্ষমতার ঔদ্ধত্যে হয়তো মমতা বুঝে উঠতে পারছেন না এই ধরনের কথা বার্তা আসলে তাঁর জনপ্রিয়তাকে আঘাত করছে । আর একটি কথা না বলে আর পারছি না ! তৃণমূলের এক মুখপাত্র বগটুই কান্ডের বিষয়টি আড়াল করতে গিয়ে সিপিএমের আমলে হওয়া অনেকগুলি গণহত্যাকে সামনে এনেছেন।

আর এই ধরনের যুক্তির কোনো মানেই হয়নি । একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে শিক্ষিত মানুষ হিসাবে নিজের অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অপরের দিকে আঙুল তুললে নিজের দৈন্যতাকেই প্রকাশ করা হয়।  এটাও ছেড়ে দিলাম , মানুষ যখন যুক্তি খুঁজে পায় না , তখন যোকোনো বিষয়কে সামনে এনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকেন এটাই দস্তুর ।

কিন্ত সিপিএমের আমলে যেসব নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল তা কিন্ত তাদের দলের অভ্যন্তরে হয়নি । বিরোধীদের সঙ্গে শাসক দলের লড়াই । বলা যেতে পারে মাটি দখলের লড়াই, সেই লড়াইয়ে দুই পক্ষের ক্ষতি হয়েছে । কিন্ত বাংলা জুড়ে এখন যা হচ্ছে তা শাসক দলের অন্দরেই বেশি ঘটছে । আর এরফলে বিজেপি-আরএসএস দ্রুত জায়গা করে নিতে চলেছে ! আর একটা কথা সবিনয়ে মমতার দলের নেতাদের মনে করিয়ে দিই, আরএসএস যেদিন বুঝতে পারবে তারা এই রাজ্যে ক্ষমতার শীর্ষে পৌছে যাবে সেদিন মমতা-অভিষেকদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে এক সেকেন্ড সময় নেবে না । ( চলবে )

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ