কলকাতা 

বামফ্রন্টকে সরানোর লক্ষ্যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম, ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য নয়, তৃণমূলের সাফল্যে মুকুলের অবদান আছে, তাঁর দলত্যাগ দুঃখজনক : সোমেন মিত্র

শেয়ার করুন
  • 12
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  


সোমেন মিত্র সত্তরের দশক থেকে রাজ্য কংগ্রেস দলের অন্যতম প্রথম সারির নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন । তারপর কেটে গেছে, প্রায় ৫০ বছর । রাজ্য রাজনীতিতে সোমেন মিত্র আইকন হিসাবে বিরাজ করছেন । ব্যক্তিগতভাবে তিনি এখনও অনেক অসহায় মানুষের পরিত্রাতা হিসেবে কাজ করে চলেছেন । কলকাতার এক সময়কার যুব নেতা পরবর্তীকালে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে তিনিই বামেদের আমলে কংগ্রেসকে সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই শক্তিশালী করে তুলে ছিলেন । ৯৮ সালে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি না হলে হয়তো সোমেন মিত্রের নেতৃত্বেই বাংলায় কংগ্রেস রাজ শুরু হত । তা হয়নি কংগ্রেস ভেঙে যাওয়ার ফলে ঐক্যবদ্ধ কংগ্রেসের শক্তি অনেকটাই কমে যায় । ফলে বামেরা জনপ্রিয়তা হারিয়েও এক দশক ক্ষমতায় টিকে যায় ।

কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বামফ্রন্টকে এই রাজ্য থেকে সরানোর লক্ষ্যে সোমেন-মমতা এক হয়েছিলেন । ২০০৯ সালে তিনি ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সাংসদ নির্বাচিত হন । ২০১১তে এসেছিল কাঙ্খিত পরিবর্তন । কিন্ত দেখা গেল ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগেই সোমেন মিত্র নিরবে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না করে ফিরে এলেন কংগ্রেসে । এখন তিনি সাংসদ নন. বিধায়কও নন তবু প্রতিদিন অগণিত মানুষ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান । অনেক অসহায় বঞ্চিত মানুষ সোমেন মিত্রের  কাছে যান সুবিচার পাওয়ার আশায় । তিনি এখনও চেষ্টা করেন নির্যাতিত মানুষকে ন্যায় পাইয়ে দেওয়ার ।

Advertisement

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদকে বঙ্গ রাজনীতিতে আর এক অতুল্য ঘোষ বলা হয় । রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকরাও তাকিয়ে থাকেন সোমেন মিত্রের প্রতিক্রিয়ার দিকে । আর বঙ্গ রাজনীতির সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ মুখ হলেন সোমেন মিত্র । এ হেন একজন রাজনীতিবিদ বাংলার জনরব নিউজ পোর্টালের মুখোমুখি হয়েছেন । কী বললেন বাংলার এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তা জানতে পড়তে থাকুন বাংলার জনরব ? কয়েকটি কিস্তিতে প্রকাশিত হবে সোমেনবাবুর সাক্ষাৎকার । আজ প্রথম কিস্তি । সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বুলবুল চৌধুরি ।

প্রশ্ন : সোমেন মিত্র ব্রান্ড রাজনীতিবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন । অনেক বিরোধী নেতাও আপনার সম্পর্কে শ্রদ্ধা মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া এখনও দিয়ে থাকেন । এই সাফল্যের নেপথ্যের কারণ কী ?

সোমেন মিত্র : দীর্ঘদিন রাজনীতিতে আছি । মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি । কাউকে প্রতারণা কিংবা তঞ্চকতা করিনি । কথা দিলে কথা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকি । অসহায় মানুষদের আমার সাধ্য মত সাহায্য করেছি । এই কারণেই হয়তো মানুষ আমাকে সম্মান করেন এবং ভালবাসেন।

প্রশ্ন : আপনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন, আবার তৃণমূল যখন ক্ষমতার শীর্ষে তখন আপনি তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে এলেন  কেন ?

সোমেন মিত্র : প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল আমি যখন তৃণমূলে যোগ দিই তখন তৃণমূলে মাত্র একজন সাংসদ । দলের অবস্থা খুব যে ভাল ছিল তাও নয় । দল যে ক্ষমতায় আসবে এটাও কেউ তখন বলতে পারেনি । তবু আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম এই কারণে যে রাজ্য থেকে বামফ্রন্টকে সরাতে হবে । তাই আপনাদের মনে থাকবে যেদিন আমি তৃণমূলে যোগদান করেছিলাম সেদিন আমি বলেছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাইটার্সের মসনদে বসিয়ে দেওয়া পর্যন্ত আমি তাঁর সঙ্গে থাকবো । আমি আমার কথা রেখেছি । মমতাকে ক্ষমতায় বসানো না পর্যন্ত আমি তাঁকে ছেড়ে আসিনি । তারপর মনে হয়েছে, যে আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে বাংলায় পরিবর্তন হয়েছে তা পূরণ হয়নি । তাই আমি নিরবে তৃণমূল ছেড়ে আবার কংগ্রেসে ফিরে এসেছি ।

প্রশ্ন : কংগ্রেসের যে সাংগঠনিক অবস্থা এবং সর্বভারতীয় স্তরেও কংগ্রেসের অবস্থা ভাল নয়, এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে আসাটা কী সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল ?

সোমেন মিত্র : অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত । আমি মমতার সুদিন ফিরে আসবে সেই প্রত্যাশায় তাঁর দলে যোগ দিইনি । একটা মিশনকে কার্যকরী করার লক্ষ্যে যোগ দিয়েছিলাম । সেটা হল বাম শাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করা । এখন মমতার দলে অনেকেই আছেন যারা সেই সময় তৃণমূলে যোগ দেননি । ২০০৯-এর পর অনেকেই যখন বুঝতে পেরেছেন যে রাজ্যে পরিবর্তন আসন্ন তখনই তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন । আমি কিন্ত তা করিনি । সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে শুরু করে নন্দীগ্রামের আন্দোলনে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি মমতার পাশে ছিলাম ।

আর সত্যি কথা হল, সেই ভাল সাতারু যে স্রোতের বিপরীতে ভাল সাঁতার দিতে পারে । স্রোতের অনুকূলে সবাই চলতে পারে বিপরীতে ভাল সাতারু ছাড়া সাঁতার কাটতে পারে না । আর একটি লক্ষ্য করবেন আমি কংগ্রেসে ফিরে এসেছি । কিন্ত কংগ্রেস এখন কোথাও ক্ষমতায় নেই । তবু তার সঙ্গেই আছি । কারণ এই দল আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে । সাতবার বিধায়ক করেছে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করেছে । আর কী চাই ? এই দলের স্বার্থেই আমি কাজ করে যেতে চাই ।

প্রশ্ন : তৃণমূল ত্যাগ করা রাজনীতিবিদদের মধ্যে আপনিই ব্যতিক্রম যাঁর সম্বন্ধে তৃণমূল নেত্রী থেকে শুরু করে শাসক দলের নেতারা এখনও পর্যন্ত কোনো কুরুচিকর মন্তব্য করেননি । এর কারণ কী ?

সোমেন মিত্র : আমিও তৃণমূল ছেড়ে আসার সময় কোনো নেতা বা নেত্রী বিরুদ্ধে বিরুপ মন্তব্য করিনি । আসলে সবার সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক বজায় আছে । এমন কোনো আচরণ কারও সঙ্গে করিনি যে আমাকে আক্রমণ করবে । এটাই রাজনীতির বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত ।

প্রশ্ন : মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঘটনাকে আপনি কী ব্যাখ্যা দেবেন ?

সোমেন মিত্র : দূভার্গ্যজনক । মুকুলের তৃণমূল ছেড়ে চলে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক । মমতার সঙ্গে যখন কেউ ছিল না, তখন একা মুকুলই দলকে পরিচালনা করেছে । তিল তিল করে সংগঠন গড়েছে । তৃণমূলের পরিধি বৃদ্ধির পেছনে মুকুলের ৫০ শতাংশ অবদান আছে বলে আমি মনে করি । আর বাকি ৫০ শতাংশ মমতার অবদান । এরকম একজন বিশ্বস্ত সেনাপতির দলত্যাগ অবশ্যই দুঃখজনক।


শেয়ার করুন
  • 12
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

three × two =