কলকাতা 

স্কুল শিক্ষা দফতরে বকেয়া ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বঞ্চিত মাদ্রাসার শিক্ষকরা

শেয়ার করুন
  • 7
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ মিজানুর রহমানঃ বিএড না থাকার কারণে ২০১৩ সাল থেকেই স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনেকের বেশ কয়েকটি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল রাজ্য। এনসিটিইর নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণহীন কোনও শিক্ষককে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তা না হলে ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

কিন্তু শিক্ষকরা বিএড করে আসার পরেও দীর্ঘদিন ধরে সেই সব বকেয়া ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী বকেয়া ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে স্কুল শিক্ষা দফতর। কিন্তু সেক্ষেত্রে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষকরা। কারণ মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের তরফে এখনও এই ধরণের কোনো নির্দেশিকা জারি করা হয়নি।
এক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের কর্তাদের অনীহার অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা। তাঁদের বক্তব্য, মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর ডিজিটাল হয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন করে নির্দেশিকা জারি করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু স্কুল শিক্ষা দফতর বকেয়া ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করা হলেও এখনও তা করতে পারেনি মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর। তাঁদের প্রশ্ন তাহলে মাদ্রাসা দফতর ডিজিটাল হয়ে কি লাভ হল?
ইতিমধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষকরা বকেয়া ইনক্রিমেন্ট চালুর দাবিতে সরব হয়েছেন। জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। কোথাও বা জেলা পরিদর্শকের কাছে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি, জেলা পরিদর্শক তাঁদের জানিয়েছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর থেকে এবিষয়ে নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কিছুই করার নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর ও স্কুল শিক্ষা দফতর দুটিই তো একই সরকারের অন্তর্ভুক্ত পৃথক দুটি সংস্থা। তবে স্কুল শিক্ষা দফতরে নির্দেশিকা জারি হলেও এক্ষেত্রে কেন বঞ্চিত থাকবেন মাদ্রাসা শিক্ষকরা? যদিও সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদিচ্ছা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের পাশে থাকারও বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁর দফতরের আমলাদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এবিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক আবিদ হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্কুল শিক্ষা দফতর সরকারের একটা আলাদা সংস্থা। তাঁরা কীভাবে ইনক্রিমেন্ট চালুর নির্দেশিকা জারি করেছে সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন। তবে স্কুল শিক্ষা দফতরে ইনক্রিমেন্ট চালু হওয়ার পর মাদ্রাসা শিক্ষকরাও এজন্য আবেদন জানিয়েছেন। এখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু রয়েছে। সেজন্য নতুন করে নির্দেশিকা জারি করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন প্রক্রিয়া মিটলেই নতুন করে নির্দেশিকা জারি করা হবে।
এবিষয়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুস সাত্তার বলেন, ‘এতদিন পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্কুল শিক্ষকদের মধ্যে কোনও পার্থক্য ছিলনা। সকলেই সমান মর্যাদা পেতেন। তবে আমার সময়ে মূলত ছোটখাটো সমস্যা সমাধানের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরকে আলাদা করা হয়েছিল। তার মানে এই নয় যে মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত এক কথায় নজির বিহীন।’ যাতে শিগগির মাদ্রাসা শিক্ষকদেরও বকেয়া  ইনক্রিমেন্ট দেওয়া শুরু হয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ সর্দার আমজাদ আলি বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষক এবং বিদ্যালয় শিক্ষক উভয়েই একই সরকারের অধীনস্থ সংস্থা। বিদ্যালয় শিক্ষকদের বকেয়া ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষকদের বকেয়া ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা বৈষম্যমূলক আচরন ছাড়া কিছুই নয়। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এতদিন ধরে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ করছিল। তাতে বিব্রত ছিলেন তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে তাই সংখ্যালঘু তোষণ তকমা ঝেড়ে ফেলে হিন্দু ভোট ফেরানোর জন্যই বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন মুখ্যমন্ত্রী।’

শেয়ার করুন
  • 7
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

five × 2 =