অন্যান্য কলকাতা 

বিজেপির আগ্রাসী রাজনীতির মোকাবিলার জন্য নয়া কৌশল না নিলে আগামী দিনে ভুগতে হবে তৃণমূলকে

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : তৃণমূল নেতারা যখন বিজেপির সাংসদ বা বিধায়কদের দলে নিতে ব্যস্ত ঠিক তখনই বিজেপি এবং আরএসএস নিরবে তার কাজ করে চলেছে । বিজেপির যে রাজনৈতিক কৌশল তাতে তৃণমূল কংগ্রেস অনেকটাই ব্যাকফুটে বলা যেতে পারে । রাজনীতিতে বিশেষ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দলের কর্মীদের মূল্য সবচেয়ে বেশি , আর বেশি ভোটারদের মূল্য । বিজেপির কমিটেড ভোটারদেরকে কী তৃণমূল কংগ্রেস সঙ্গে নিতে পেরেছে ? বাবুল সুপ্রিয়কে দলে নিয়ে যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস আত্মতুষ্টিতে ভুগছে তাতে আর যাইহোক তৃণমূল দলের কোনো লাভ যে হবে না তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । কারণগুলি নিচে আলোচনা করা হলো :

প্রথমত, বিজেপি দল ক্যাডার ভিত্তিক দল । সেই দলের সংগঠনের উপরে রয়েছে আরএসএস মতো সামাজিক সংগঠন । যারা প্রতিদিন হিসাব করছে ভোটের অংক । তাই বিজেপির সাংসদ বিধায়কদের দলে নিয়ে তৃণমূলের কোনো লাভ হবে না । উপরন্ত আরও বেশি করে বিজেপি বিরোধী মানুষদের কাছে তৃণমূল কংগ্রেস বিরাগভাজন হবে ।

Advertisement

দ্বিতীয়ত, দল ভাঙানোর খেসারত তো গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেই তৃণমূলকে দিতে হয়েছিল । প্রতিদিন নিয়ম করে নেতারা বেরিয়ে যাচ্ছিলেন । আর সংবাদপত্রে খবর বের হচ্ছে তৃণমূল দল ভেঙে তছনছ হচ্ছে । বিধানসভা নির্বাচনের আগে মিডিয়ার প্রচারে এমনভাব দেখানো হয়েছে যেন এই রাজ্যে বিজেপির ক্ষমতায় আসা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা । কিন্ত শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় এলো না । সুযোগ সন্ধানী নেতারা বিজেপিতে গিয়ে কামানোর চেষ্টা করেছিলেন , কিন্ত সেই আশা পূরণ না হতেই আবার বেসুরে গাইতে শুরু করেছেন । একে একে ফিরে আসছেন তৃণমূলে । তৃণমূলের যেসব কর্মী এই তথা কথিত বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন , মানুষকে বুঝিয়ে ছিলেন , সেই তথা কথিত বিশ্বাসঘাতকরাই এখন লড়াই করা কর্মীদের কাছে নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছেন । এর ফল যে বুমেরাং হতে পারে তা তৃণমূল এখন বুঝে উঠতে পারছে না। যেমন ধরুন ফারাক্কার কংগ্রেস নেতা মইনুল হক । তিনি ৫ বার জিতেছিলেন , কংগ্রেসের টিকিটে , কংগ্রেসের জাতীয় স্তরে নেতা ছিলেন । এলাকার মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে তৃণমূলকে জিতিয়ে ছিল , এখন সেই মইনুল তৃণমূলের নেতা ! মইনুলকে সাধারণ মানুষ প্রত্যাখান করলেন আর সেই মইনুল এখন নেতা হয়ে গেলেন শাসক দলের কল্যাণে ! এটা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা নয় কী ! তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের সঙ্গেও কী বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়নি ? যে কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ফারাক্কায় জয় এসেছে , তারপরেও কেন হেরো প্রার্থী বা জনবিচ্ছিন্ন প্রার্থীকে দলে নেওয়ার তাড়া দেখা গেল তৃণমূলের মধ্যে ? এর প্রভাব কী সাধারণ মানুষের মধ্যে পড়বে না ?

তৃতীয়ত, সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ২.৮৮ কোটি , আর বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ২.২৮ কোটি , সংযুক্ত মোর্চা ভোটও ৩০ লক্ষের মতো । তাহলে বিরোধীদের সঙ্গে শাসক তৃণমূলের ভোটের তফাৎ মাত্র ৩০ লক্ষ । এই হিসাবের যদি সামান্য গরমিল হতো তাহলে তৃণমূলের নবান্ন দখল করা যে সম্ভব হতো না তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । আর বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ভোটের তফাৎ রয়েছে মাত্র ৬০ লক্ষ । বিজেপির মতো সাংগঠনিক দলের কাছে এই তফাৎ খুব বেশি না । আর হিসাবটা বিজেপি দল যত ভাল জানে তৃণমূল নেতারা ততটা জানেন বলে আমাদের মনে হয় না । তাঁরা শুধু এটুকু জানেন ২১৩টি আসন তাঁরা পেয়েছে , ভোটের অংকের সামন্য গরমিল হলেই সাপ-লুডো খেলার মতো মমতার কুরসি উল্টে যেত এটা ভেবে উঠতে পারছেন না তৃণমূলের নেতারা । তাই তাঁরা এখন ভোটার ভাঙানোর খেলায় না মেতে নেতা ভাঙানোর খেলায় মেতেছে । অথচ বাংলার এই ভোটে স্পষ্ট সংকেত দিয়েছে নেতা নয়, ভোটারাই আসল । কারণ বিজেপি এই রাজ্যের তৃণমূলের তথা-কথিত হেভিওয়েট নেতাদের দলে নিয়েও জয়ের স্বাদ পায়নি ।

আর বিজেপি আরএসএস এই জনাদেশকে সম্মান দিয়েই তারা এবার আগ্রাসী রাজনীতির পথে হাঁটছে । যেভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিজেপির নয়া রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বিক্ষোভ দেখালেন তাতে এটা স্পষ্ট খুব সহজে হার মানবে না বিজেপি । আর বাংলার রাজনীতির ইতিহাস বলছে, এই রাজ্যে সেই সব রাজনৈতিক দলই সাফল্য পেয়েছে যারা আগ্রাসী আন্দোলন করতে পেরেছে । স্বাধীনতার পর থেকে বামেরা গণ-আন্দোলন করেছিল বলেই তারা ক্ষমতায় এসেছিল । আর বামপন্থীরা কৌশলী রাজনীতি করতে পেরেছিল বলেই ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল । তারা নেতা নয় কংগ্রেস কর্মীদের নিজেদের দিকে টানতে সক্ষম হয়েছিল । অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগ্রাসী রাজনীতি করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি সাফল্য পেয়েছিলেন। সেই পথেই বিজেপি হাঁটছে । বিজেপির নেতারা দলত্যাগ করলেও কর্মীরা এখন বিজেপির পাশেই আছে । এখানেই বিজেপির নেতারা তাঁদের জয় দেখছেন ।

অন্যদিকে তৃণমূল নেতারা তাঁদের কমিটেড ভোটারদের অবহেলা করছে , তাদের প্রতি কোনো দায় দায়িত্ব পালন না করে বিজেপির সাংসদ বিধায়কদের দলে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে । এরফলে আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেসকে এই রাজ্যে আরও বেশি রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়তে হতে পারে ! এখন থেকে সাবধান না হলে আগামী দিনে এই রাজ্যের রাজনৈতিক জমির সিংহভাগই বিজেপির দখলে চলে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের আশংকা । সুতরাং আত্মতুষ্টি নয়, সাধু সাবধান !


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ