অন্যান্য কলকাতা 

Alia University : পদাধিকার বলে একজিকিউটিভ কাউন্সিলের Ex- Officio সদস্যবৃন্দ যদি তদন্ত কমিটিরও সদস্য হন তাহলে নিরপেক্ষতা কীভাবে রক্ষিত হবে? :  ড. আবদুস সাত্তার

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

ড.আবদুস সাত্তার :আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ও অসংগতিকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তর ২৯.০৭.২০২১তারিখে Inspection Cum Enquiry’ কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটিতে অধিকর্তা, মাদ্রাসা শিক্ষা , অধিকর্তা, সংখ্যালঘু বিষয়ককে নিয়ে চার জন আধিকারিক আছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য যে, এই কমিটিতে কোনও উপাচার্য, শিক্ষাবিদ/ সিনিয়র অধ্যাপকের নাম নেই। এই কমিটি আবার শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের অভিযোগ এবং অসংগতিরও তদন্ত করবেন।

এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যে কোনো বিষয়ে অসচ্ছতার অভিযোগ থাকলে তদন্ত কমিটি হতেই পারে। আর তা স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। এই নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না।

Advertisement

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ছাত্র – ছাত্রীদের কিছু দাবি ও অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজিকিউটিভ কাউন্সিল অধ্যাপক পি. ঈশ্বরচন্দ্র ভাট – এর নেতৃত্বে আমন্ত্রিত সদস্য সহ যে ছয় জনের কমিটি গঠন করেছিলেন তাঁরা সকলেই শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট আইনবিদ ছিলেন। অধ্যাপক ভাট ছিলেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য। কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি ইন্তাজ আলি শাহ, চেয়ারম্যান, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কী ধরণের তদন্ত কমিটি গঠন করতে হয় এই দুই কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা দেখলেই বুঝতে পারবেন। অধ্যাপক ভাট কমিটির রিপোর্ট নিয়ে পরের কিস্তিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

যাক, সরকার গঠিত এই কমিটি নিয়ে নিয়ম, পদ্ধতি ও প্রথার বিষয়টি বড়ো হয়ে হাজির হয়েছে। কেননা, এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার সম্পর্ক জড়িত রয়েছে। একবার যদি তার লঙ্ঘন হয় তাহলে ভবিষ্যতে সরকার নির্বিশেষে এটাই উদাহরণস্বরূপ দৃষ্টান্ত হয়ে বার বার ফিরে আসবে। এ প্রসঙ্গে যে প্রশ্নগুলি উঠেছে তাহলো —

প্রথমত , বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বাধীকার প্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি শিক্ষাগত বিষয়ে শুধুমাত্র আধিকারিকদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন কী বাঞ্ছনীয় না কাম্য? ইতিপূর্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও কি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি?সেই সময়ও কি এইভাবে এবং এই পদ্ধতিতে উচ্চশিক্ষা দপ্তর তদন্ত কমিটিই গঠন করেছিল? মাননীয় উপাচার্যকে কি সরকারি নির্দেশিকার কপি ফরওয়ার্ড করে বলা হয়েছিল যাবতীয় তথ্য কমিটির সামনে পেশ করতে ? এখানে তো আবার শিক্ষাগত বিষয়েরও তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে। যদি তা না করা হয়ে থাকে তাহলে এখানে এই পদ্ধতি কেন গ্রহণ করা হলো? আইনে কোনও বাঁধা নেই তাই কি? সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনই তো পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হয়েছে। স্বভাবতই বৈষম্যের অভিযোগ প্রবলভাবে উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষার উজ্জ্বল পরম্পরা ও ঐতিহ্য দীর্ঘকাল ধরে সুনামের সঙ্গে লালিত পালিত হয়ে আসছে। সেই সুনাম ও প্রথায় কি এই সরকারি নির্দেশিকা আজ প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দিল না ? শুনেছি , সময় নির্বিশেষে প্রথাও কখনো কখনো আইন হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই নয় কি ?

দ্বিতীয়ত, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৭ ও ২৫.০৭.২০১৭ তারিখে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের Ex- officio সদস্য হিসেবে ১৪ ও ১৫ নম্বর তালিকায় অধিকর্তা , মাদ্রাসা শিক্ষা ও অধিকর্তা, সংখ্যালঘু বিষয়কের নাম রয়েছে ( সূত্র : বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট )। যদি তাই হয় তাহলে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপরিউক্ত বিষয়গুলিতে বহু অভিযোগ ও অসংগতির কিছু প্রমাণ পাওয়া গেলে তার দায়িত্ব কি কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে তাঁদের উপর বর্তায় না?

তৃতীয়ত, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৭ – এর ৩০ নম্বর ধারায় ‘ Power and function of the Majlis- i- Muntazimah ( Executive Council) অংশটি দয়া করে পড়ে দেখতে পারেন। এখন প্রশ্ন হলো, একাধারে পদাধিকার বলে দুজন অধিকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজিকিউটিভ কাউন্সিল – এর Ex-officio সদস্য আবার অপরদিকে সেই দুজন অধিকর্তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও অসংগতির বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য। তাহলে তদন্তের নিরপেক্ষতা কীভাবে রক্ষিত হবে ? এই সংক্রান্ত আইন কি বলে ? যাঁরা এই কমিটি গঠন করেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশ্লিষ্ট অংশটি পড়ে দেখেছেন। মন্ত্রী হিসেবে এই আইন প্রণয়ন, বিধানসভায় উত্থাপন ও পাশের ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা থাকলেই যে আমি এই আইনের সব খুঁটিনাটি বুঝতে পারবো তা তো নয়। তাই হয়তো আমি বুঝতে পারছি না। কী বলেন?

( লেখক রাজ্যের প্রাক্তন সংখ্যালঘু ও উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী। লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে এই প্রবন্ধটি  সংগ্রহ করা হয়েছে। লেখকের মতামত সম্পূর্ণ নিজস্ব। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আবদুস সাত্তারের আমলেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল)


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ