সুরাপ হোসেন থেকে সজল ঘোষ সব ক্ষেত্রেই পুলিশের অতি সক্রিয়তা মমতা সরকারের ভাবমূর্তিতে আঘাত লাগছে
বুলবুল চৌধুরি : বিপুল জনাদেশ নিয়ে কয়েক মাস আগে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস । পর পর তিন বার এই রাজ্যে ক্ষমতা পেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । গণতান্ত্রিক দেশে একটি রাজ্যে পর পর তিনবার বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা কঠিন ব্যাপার । মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারলে এই ধরনের জনাদেশ পাওয়া যায় না । মমতা পেয়েছেন । আর এই পাওয়ার পর কয়েক মাসের কয়েকটি ঘটনা আমাদের কাছে অন্য সংকেত দিচ্ছে ।
সোনারপুর থানার দুই অফিসার যেভাবে এক পুলিশ কর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে মেরেছে তার নিন্দার ভাষা নেই । এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি দেখে অবাক লাগছে । মমতার মতো মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর আমলে পুলিশের এই হামলা অবশ্যই অস্বস্তিকর । এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাথায় রাখতে হবে তাঁর প্রশাসনের একটাংশ তাঁর সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে । এরা অনেক আগে থেকেই সক্রিয় ছিল । কিন্ত এরা ভেবেছিল ২০২১ -এ বিজেপি এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে । যখন সেটা হল না তখন এই সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য একটাংশ চেষ্টা করে যাচ্ছে ।
সোনারপুরের বেনিয়া বউ গ্রামে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত অন্যায় এবং অমানবিক । আজ যদি এর প্রতিবাদে ওই গ্রামের মানুষ রাস্তায় নেমে আসতো তাহলে তাদের অন্য কিছু তকমা লাগিয়ে দেওয়া হতো । কিন্ত তা যখন হযনি , তখন মিডিয়ার একটাংশ গল্প বানাতে শুরু করেছে । ওই এলাকায় যে যুবকটি মার খেয়েছে, সেই যুবকের পরিবারের অনেক সদস্য সেনাবাহিনীতে কাজ করেছে বা কাজ করছে, পুলিশে কাজ করছে । একটা সভ্রান্ত পরিবারের সন্তানকে মারা হলো । বিচার নেই ! মানবিক মুখ্যমন্ত্রীও ইনসাফ দেবে না ! এটা আমাদের কাছে কল্পনাতীত!
শিয়ালদহ- র প্রদীপ ঘোষের ছেলে সজল ঘোষের উপর পুলিশের হেনস্থা নিয়ে ইতিমধ্যে খোদ তৃণমূল দলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । পুলিশ সজলকে মহিমান্বিত করেছে বলে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ মন্তব্য করেছেন । এই পুলিশ কারা ? কার নির্দেশে সজল ঘোষের বাড়ির দরজা ভেঙে গ্রেফতার করা হলো ? এভাবে একজন রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেফতার করে মমতার প্রশাসন কী বার্তা দিল ? কলকাতায় প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিজেপিকে কারা অক্সিজেন তুলে দিল ? এনিয়ে মমতাকে ভাবতে হবে ! এর পেছনে কারা রয়েছেন খুঁজে বের করতে হবে ।
কারণ মনে রাখতে আগামী ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি চেষ্টা করবে মমতার ভাবমূর্তি এই রাজ্যেই অনেকটাই ম্লান করে দিতে । মনে রাখতে হবে এবার বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে এসেছেন তিনি । বিপুল জয় তার পতনের কারণ হযে দাঁড়াতে পারে । তাই খুব সংগোপনে গেরুয়া শিবির কাজ করে চলেছে । মমতার উপর যারা বিশ্বাস রেখেছে সবচেয়ে বেশি সেই সংখ্যালঘু সমাজের কাছে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে মমতাকে ভোট দিলে সোনারপুরের সুরাপ হোসেনের মতো হতে হবে । আর সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের কাছে বার্তা দেওয়া হচ্ছে প্রতিবাদী হলে সজল ঘোষের মতো হেনস্থা হতে হবে ।
দুই বার্তায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে চলেছে মমতার ভাবমূর্তি । জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর সজল ঘোষ এক টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন, আমি রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে চাল তো দেবই , সেই চালে পা দিয়ে পুলিশ আমাকে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরেছে । একথা ঠিক পুলিশ সজল ঘোষের বাড়ির দরজা দশ মিনিট ধরে ভাঙল আর সেই দৃশ্য সমগ্র দেশে সম্প্রচারিত হলো টিভি চ্যানেল এবং ইউটিউব চ্যানেলের দৌলতে সমগ্র বিশ্বে প্রচারিত হল তা মমতার সরকারের কাছে অবশ্য অস্বস্তিকর । অন্যদিকে সুরাপ হোসেনের উপর পুলিশের অত্যাচারের ভিডিও ইউটিউবে ভাইরাল । নিরব পুলিশ-প্রশাসন কেন প্রশ্ন সাধারণ নাগরিকদের !