অন্যান্য কলকাতা 

মনোরঞ্জন ব্যাপারিদের মুখ বন্ধ না করে দলকে দূনীর্তি মুক্ত এবং সুবিধাবাদী মুক্ত করতে পারলে আখোরে লাভ হবে তৃণমূলেরই

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : তৃণমূল কংগ্রেস ভাল নেই । একথা জোর দিই বলছি । কারণ তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের কর্মীরা আরও বেশি করে ঔদ্ধত্য দেখাতে শুরু করেছে । ধরাকে সরা জ্ঞান করছে । দলনেত্রী বা দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি এখনই এদের দল থেকে বের করে না দেয় তাহলে আগামী দিনে এরা দলের ক্যানসারে পরিণত হবে । মনোঞ্জন ব্যাপারি একজন সাহিত্যিক । সংবেদনশীল মন তাঁর মধ্যে রয়েছে । তিনি এতদিন তৃণমূলকে যেভাবে দেখেছেন আর এখন যেভাবে দেখছেন তাঁর মধ্যে তফাৎ রয়েছে । বেশ কয়েক বছর আগে যাদবপুরের তৎকালীন সাংসদ তথা গায়ক কবীর সুমনও প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সামনেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন ।

আসলে এরা কেউ রাজনীতির লোক নন, তাই এদের মনে সমাজের জন্য কাজ করার ইচ্ছা হয় । কিন্ত যখন দলের বিধায়ক বা সাংসদ হয়ে যান তখন আবার বুঝতে পারেন বাইরে থেকে যা চকচকে মনে হয় তা আদৌ চকচকে নয় । আর এই সব মানুষ তাই প্রকাশ্যেই মন্তব্য করে ফেলেন । তাতে দল বিড়ম্বনায় পড়ে যায় । বিশেষ করে শাসক দল হলে তো কথায় নেই ! কিন্ত শাসক দলের নেতাদের মনে রাখতে হবে এদেরকে দেখিয়ে মানুষের সমর্থন আদায় করেছেন তাঁরা । তাই এঁরা যা বলছে সেটা খতিয়ে দেখা উচিত । তা না হলে মানুষের জনাদেশকেই অমান্য করা হবে । এটা সত্য , তৃণমূল দলের মধ্যে দূনীর্তি আছে , স্বজন পোষণ আছে । যারা নেতৃত্বের আসনে বসে আছেন তাঁদের কাজকর্ম নিযে সাধারণ মানুষের মনেই প্রশ্ন রয়েছে ।

Advertisement

মনোরঞ্জন ব্যাপারিকে ৫ মার্চ তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণার পর তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোষ্ট করেছিলেন । সেই পোষ্ট আমি দেখেছি । একটা মন্তব্যও করেছিলাম । তিনি সেদিন যেভাবে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন ভোটে জেতার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সেই উৎসাহ গায়েব হয়ে গেল কেন ? এটা শাসক দলের নেতাদের দেখতে হবে । মনোরঞ্জন ব্যাপারিকে চুপ করে দেওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই । বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধান করা । সব রাজনৈতিক দলেই কিছু না কিছু দূনীর্তি রয়েছে এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই । তবে সেই দূনীর্তি যখন লাগাম ছাড়া হয়ে যায় তখনই প্রশ্ন উঠতে থাকে ।

দলীয় শৃঙ্খলার নাম করে কথা বলার অধিকার কেড়ে নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে । মানুষের কাছে ভুল সংকেত যেতে পারে । মনোরঞ্জন ব্যাপারির পোষ্টগুলি দিকে লক্ষ্য রাখলে মনে হয় না তিনি কোনো ভুল কথা বলেছেন । সম্প্রতি তিনি একটি পোষ্টে বলেছিলেন,‘যারা বন্দুক রিভলভার দেখিয়ে ভোটে জেতে, তাদের জনগণের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা থাকে না। তাঁরা মনে করে ওই ভাবে বার বার জিতে যাবে। আমি তেমন ভাবে জিতিনি, জিততে চাই না।’

তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘‘তুমি যে ‘প্রাক্তন’কে তৃণমূল দলে নিয়ে এসেছিলে, দলের টিকিট পাইয়ে দিয়েছিলে, যে পরে তোমার পদটাই খেয়ে নিয়েছিল।’ এই পোস্টের পর বলাগড়ে তৃণমূলকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। নাম না করলেও, তাঁর এমন ফেসবুক পোস্টের নিশানায় যে প্রাক্তন বিধায়ক অসীম মাজি তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। অসীমকে সরিয়ে বলাগড়ে মনোরঞ্জনকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা। খোদ দলনেত্রী বারণ করার পরেও মনোরঞ্জন এ সব পোস্ট করায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হন বলে খবরে প্রকাশ।

যাইহোক এটা তো ঠিক তৃণমূল কংগ্রেসের একটাংশ গত বিধানসভা নির্বাচনেও গোপনে বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছিল । ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জনপ্রিয় সাংসদ রত্না দে নাগ হেরে যাওয়ার নেপথ্যে তৃণমূলের বেশ কয়েক জন জেলা নেতা দায়ী ছিলেন । তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ করা হয়নি । উপরন্ত তাঁদের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। এটা মানুষ ভালভাবে মেনে নিচ্ছে না ।
তাই দলীয় হুইপ দিয়ে হয়তো মনোরঞ্জন ব্যাপারির মুখ বন্ধ করা যেতে পারে, দলের লাগাম ছাড়া দূনীর্তি এবং সুবিধাবাদী নেতাদের কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো সুবিধাবাদী নেতাদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে দল থেকে বের করে দেওয়া । তাতে সাধারণ মানুষের সমর্থ ন আরও বেশি করে পাবেন মমতা । চোখের সামনে দেখা গেল, লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য ৩০০ টাকা করে দলের ছেলেরা দাবি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে । সবশেষে বলব, মনোরঞ্জন ব্যাপারিদের মতামতকে গুরুত্ব দিলে লাভ হবে দলের । তাঁদের সমালোচনায় সাধারণ মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে তৃণমূল কংগ্রেস ।

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ