জেলা মুখ্যমন্ত্রীর দরবার 

সোনারপুরের সুরাপ হোসেনের উপর পুলিশের নির্মম অত্যাচার : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছে বিচার চাইলেন স্ত্রী তানিয়া বেগম

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরি : উত্তরপ্রদেশ কিংবা গুজরাটে যা হয় তা বাংলায় কী মানায় ? কিন্ত দুঃখের হলেও সত্য এই রকম ঘটছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর আমলে পুলিশের নির্মম অত্যাচারের শিকার হবে একজন পুলিশ কর্মী এটা কোনো মতেই কাম্য নয় । এই ঘটনার নেপথ্যে গভীর এক ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে বলে ওয়াকিবহাল মনে করছে । বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পুলিশ-প্রশাসনের একটাংশ তাঁর সরকারে ভাবমূর্তিকে ম্লান করে দিতে চাইছে । সেই পরিকল্পনা অঙ্গ হলো সোনারপুরের এই মর্মান্তিক ঘটনা । সোনারপুর থানা এলাকার বেনিয়া বউ গ্রামে একজনকে গ্রেফতার করতে এসে সুরাপ হোসেন নামে এক পুলিশ কর্মীকে ব্যাপক মারধোর করে সোনারপুর থানার পুলিশ বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে এলাকায় । অশোকনগর থানায় কর্মরত পুলিশ কর্মী সুরাপ হোসেনকে প্রকাশ্যে এতটাই মারধোর করা হয়েছে যে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন । বিভিন্ন ছবির ফুটেজ এবং সূত্রের খবর মারফত জানা যাচ্ছে, পুলিশ ব্যাপক অত্যাচার করেছে ওই পুলিশ কর্মীর উপর । ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্বামীর উপর অত্যাচারের বিচার চেয়েছেন স্ত্রী তানিয়া বেগম। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তানিয়া যা বলেছেন তা তুলে ধরা হলো ।

সুরাপ হোসেন নামক একজন পুলিশকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে পিটিয়েছে গত ৬ আগস্ট সোনারপুর থানার বেনিয়া বউ গ্রামে । যেভাবে পুলিশ সুরাপ হোসেনকে পিটিয়েছে তার বর্ণনা করার জন্য পৈশাচিক নারকীয় ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর কোন শব্দই যথেষ্ট নয় । সুরাফ হোসেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর থানার বিড়া পুলিশ ফাঁড়ির স্টাফ। এস আই। বাড়ি বেনিয়া বউ গ্রামে। যখন পুলিশ মহান ( ? ) কাজটি করছিল তখন কারো গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল না । সকলের পায়ে হাওয়াই চপ্পল ছিল । স্থানীয় সূত্রে জানা যায় সোনারপুর থানার অফিসার সোমনাথ বাবুর নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ ঐ গ্ৰামে আসে হোসেন আলী নামে ৭৫ ঊর্ধ্ব একজন বৃদ্ধকে খোঁজার জন্য। তারা সুরাফ হোসেন এর বাড়ির সামনে হাজির হয়ে সুরাপ হোসেন এর কাছে জানতে চায় এটা হোসেন আলীর বাড়ি কিনা । উত্তরে সুরাপ হোসেন জানান তার নাম সুরাপ হোসেন । এটা হোসেন আলীর বাড়ি নয়। হোসেন আলীকে কেন খুঁজছে তিনি জানতে চান। তখন সোমনাথ বাবু সুরাপ হোসেনের কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে । তখন সুরাফ হোসেন সোমনাথ বাবুকে বলেন তিনি নিজে পুলিশ। তিনি অশোকনগর থানার স্টাফ । তিনি আসামি নন। তাকে এভাবে কেন কলার ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে , মারধোর করা হচ্ছে ।

Advertisement

 

কিন্তু সোমনাথ বাবু তার কোন কথায় কর্ণপাত না করে তাকে মারধর করতে থাকে এবং ফোন করে থানা থেকে আরও পুলিশ আনিয়ে সুরাপ হোসেনকে বেনিয়া বউ গ্রামের মাঠে ফেলে বারো তেরো জন পুলিশ সবাই মিলে পশু পেটানোর মত করে পেটায় । তাকে উলঙ্গ করে দেওয়া হয় । ঐ অবস্থায় পেটাতে পেটাতে গোটা মাঠ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে বেড়ায়। সুরাপ হোসেনের গাঁয়ের গেঞ্জি ছিঁড়ে যায় এবং শরীর থেকে বেরিয়ে পরে। ঘটনার তিন দিন পর ৯ আগষ্ট প্রতিবেদক এলাকা পরিদর্শনের সময় সেই গেঞ্জি মাঠে দেখতে পায় যেখানে তাঁকে পেটানো হয়েছে। তার বাড়ির কোন লোককে তার কাছে আসতে দেয়নি । প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা পুলিশের তান্ডব লক্ষ্য করেছেন গ্রামবাসী কিন্তু গ্রামবাসীদের কাউকে সেখানে আসতে দেওয়া হয়নি।স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীকেও কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি ।

স্থানীয় তৃণমূল নেতা কুদ্দুস সাহেবকে মেরে তার হাত ফাটিয়ে দিয়েছে। সুরাপ হোসেনের বিরুদ্ধে অনেক গুলি ধারায় মামলা দিয়েছে। জামিন আজও হয়নি। এখন জেলবন্দী। মোট পাঁচ জনকে গ্ৰেফতার করে। সুরাপ হোসেনের স্ত্রী তানিয়া বেগম এবং তিন ভাইকে। ৮ আগষ্ট তানিয়া বেগম জামিনে জেল থেকে ছাড়া পান। যে হোসেন আলীকে পুলিশ খুঁজতে গিয়েছিল তাঁর বাড়ি সুরাপ হোসেনের বাড়ি থেকে অনেকটা দুরে। গ্ৰামের অন্য পাড়ায়। পুলিশ তাকে এখনো গ্ৰফতার করেনি। প্রশ্ন হচ্ছে ১ । পুলিশ গিয়েছিল হোসেন আলী নামে একজনকে খুঁজতে বা গ্ৰফতার করতে। তারা হোসেন আলীর বদলে সুরাপ হোসেনকে ধরে এভাবে কেন অত্যাচার করল?২ । পুলিশ সাদা পোশাকে ছিল । কোন ইউনিফর্ম ছিল না। কেন পুলিশ এ ভাবে গিয়েছিল? ৩। সুরাপ হোসেনের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। কেন তাঁকে পুলিশ ধরতে গিয়েছিল? ৪। সুরাপ হোসেন তার নিজের পরিচয় দেওয়ার পরেও পুলিশ কেন কথা শুনেনি? ৫। তার বাড়ির লোকের উপর অত্যাচার করল? ৬। সুরাপ হোসেনের মেয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্রী সামিমা খাতুন জানিয়েছে সে বাবার উপর মার দেখে সহ্য করতে না পেরে ঘরের মধ্যে বুকে পরে। প্রিয়া সেন নামের এক জন মহিলা পুলিশ সামিমার ঘরে জোর করে মুখে এবং জোর করে তার মোবাইল কেড়ে নেওয়ার সময় বার বার বলে ভিডিও মুছে ফেল। পুলিশ ভিডিও মুছে ফেলতে বলেছে কেন? পুলিশ যা করলো তা সম্পূর্ণভাবে আইন বিরুদ্ধ। পুলিশ নিজেই আইন ভেঙে বেআইনি কাজ করল। এবং পুলিশ যা করেছে তা ভারতীয় আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ । এই ঘটনার একজন কর্মরত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে উপযুক্ত তদন্ত হওয়া দরকার এবং সোমনাথ বাবু সহ দোষী সমস্ত পুলিশের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

এই প্রেক্ষাপটে বিচার চেয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়েছেন নির্যাতিত পুলিশ কর্মীর স্ত্রী তানিয়া বেগম । এই  ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে শোরগোল পড়ে গেছে । পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্বামীর উপর অত্যাচারকারী পুলিশ কর্মীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সুরাপ হোসেনের স্ত্রী তানিয়া বেগম । একই সঙ্গে মানবাধিকার কর্মীরাও দাবি জানিয়েছেন কর্মরত কোনো জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করা । এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে আদালতে যেতে পারে নির্যাতিত পরিবার ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ