অন্যান্য কলকাতা 

ত্রিপুরায় তৃণমূলকে আটকানোর চেষ্টা কেন করছেন বিপ্লব দেব ? বিজেপি কেন ত্রিপুরায় মমতাকে ভয় পাচ্ছে ? আসল কারণ জানুন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : ত্রিপুরাতে তৃণমূলের তিন যুবনেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । তাঁদের বিরুদ্ধে মহামারি আইনে মামলা রুজু করেছে ত্রিপুরা পুলিশ । ফলে দেবাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহা এবং জয়া দত্তদের জামিনের সম্ভাবনা খুব কম । কারণ মহামারি আইন ভাঙার দায়ের গ্রেফতার হলে একান্তই প্রশাসন যদি সহায়ক না হয় তাহলে জামিন পাওয়া কঠিন । এক্ষেত্রে ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের প্রশাসন এঁদের প্রতি নরম অবস্থান নেবে না বলেই মনে হয় ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তৃণমূলকে আটকানো হচ্ছে ত্রিপুরায় ? এই প্রশ্নের উত্তর একটাই যে , ত্রিপুরাতে যেহেতু বাঙালিরা বসবাস করে তাই এখানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাএয়র জনপ্রিয়তা রয়েছে । শুধু তাই নয়, অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় সংগঠন করার ক্ষেত্রেও অনেকটাই সুবিধা পাবে মমতার দল । এছাড়া পশ্চিমবাংলায় পর পর তিনবার ক্ষমতায় আসার কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা সমগ্র দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে । লোকসভা নির্বাচনের আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন হবে । আর এই নির্বাচনে যদি মমতার দল সাফল্য দেখাতে পারে তাহলে সমগ্র দেশজুড়ে মমতার পালে হাওয়া ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে ।

Advertisement

অন্যদিকে, ত্রিপুরায় আদিবাসীদের মধ্যে বামেদের যে জনপ্রিয়তা ছিল তা এখন আর নেই । সেখানে অনেকটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ত্রিপুরার  মহারাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মনের আঞ্চলিক দল ।ফলে ত্রিপুরায় এখন বিজেপির শাসনে মানুষ খুশি নয় । বিজেপির শাসন থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি পেতে চাইছে । বাম সংগঠনগুলিকে আরএসএস বা হিন্দুত্ববাদীরা দখলে নিয়ে নিয়েছে । ফলে সেভাবে আন্দোলন করতে পারছে না বামেরা । তাদের আন্দোলনে মানুষের ঢল নামছে না । ফলে আগামী নির্বাচনে এই রাজ্যে বামেরা পুনরায় শক্তি অর্জন করতে পারবে এটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না । আর বামেরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে এই রাজ্যে যে ক্যাডার রাজ কায়েম করেছিল তার প্রতি মানুষের খুব বেশি আস্থা নেই । এই কারণেই ত্রিপুরাতে বামেরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না । বিশেষ করে আদিবাসীদের উন্নয়নে পূর্বের বামফ্রন্ট সরকার ত্রিপুরায় তেমন কাজ করেছে বলে মনে হয় না । এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাভাষী ত্রিপুরাতে খুব সহজেই মমতার তৃণমূল জায়গা করে নিতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে ।

তাই বিজেপি এবং আরএসএস প্রথম থেকেই তৃণমূলকে ত্রিপুরাতে সংগঠন করতে বাধা দিচ্ছে । আগামী দিনেও দেবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । একথা ঠিক এখন থেকে যদি তৃণমূলকে বাধা বিজেপি না দেয় তাহলে কয়েক মাস পরেই তৃণমূলই এই রাজ্যে বিরোধী দলের তমকা পেয়ে যাবে । কারণ মমতার মতো জনমোহনী নেত্রী যে দলে আছে সেই দল অন্তত বাংলাভাষী রাজ্যে যে জনপ্রিয়তা পাবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । আর এই কারণেই বিজেপি ত্রিপুরাতে তৃণমূলকে ভয় পাচ্ছে ।

বিপ্লব দেব সরকার বিগত তিন বছরে ত্রিপুরাতে সুশাসন দিতে পারেনি তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । সাধারণ মানুষ বিপ্লব দেব সরকারের প্রতি ক্ষুদ্ধ হচ্ছে । আর এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে ত্রিপুরার তথা কথিত বিরোধী দলগুলি । বিরোধী দলগুলির আন্দোলন বিমুখতাকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল ত্রিপুরাতে দ্রুত সংগঠন বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে । আর এখানে ভয় পেয়েছে বিজেপি ও আরএসএস । তাই তারা কোমর বেধে তৃণমূলের বিরোধিতা শুরু করেছে । সংগঠনগত দিক থেকে তো বটেই, প্রশাসনকে ভয়ংকরভাবে কাজে লাগাচ্ছে ত্রিপুরার বিজেপি সরকার । তাই স্বীকৃত বিরোধী দলের মর্যাদা না পাওয়া সত্ত্বে তৃণমূলের উপর সবচেয়ে বেশি প্রশাসন অত্যাচার শুরু করেছে । বিপ্লব দেব সরকারের এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তেই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে তৃণমূলই ।

তবে এক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে । ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মনের সঙ্গে জোট করে আন্দোলন করলে অচিরেই ত্রিপুরার মাটিতে জোড়া ফুল ফুটবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে । তৃণমূলের উপর যত আক্রমণ তীব্র হবে ততই তৃণমূল ত্রিপুরাতে শক্তিশালী হবে । তাই বিজেপির রাজনৈতিক ভুলেই আগামী ২০২৩ সালে আগরতলার প্রশাসনিক দফতর তৃণমূলের দখলে চলে গেলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না ।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ