কলকাতা 

অনুসন্ধানের অভিনব আয়োজন : কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে অনলাইনে প্রাণবন্ত আলোচনা

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশেষ প্রতিনিধি : আজ রবিবার ১ আগস্ট ২০২১। প্লেগ মহামারিতে গৃহবন্দী আইজ্যাক নিউটন ১৬৬৭-তে আবিষ্কার করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত সূত্র, আর আজ অতিমারির এই আবহে রাজ্যের একদল কৃতী ছাত্র-ছাত্রী দেখিয়ে দিল আকাশ ছুঁতে কীভাবে বদ্ধপরিকর তারা।

আজ রবিবার বিকেলে অনুসন্ধান-এর এক অনলাইন আলাপচারিতায় রাজ্যের কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের কথায় উঠে এল সেরকমই এক দৃশ্য। সেখানে যোগ দিয়েছিল এবছরের মাধ্যমিক-মাদ্রাসা – উচ্চ মাধ্যমিকের একদল কৃতী ছাত্র-ছাত্রী। আর তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল দিল্লির স্টিফেন্স কলেজের সদ্য পাস করা ছাত্রী অস্মিতা সরকার। অস্মিতা ইতিমধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ করে নিয়েছে।

Advertisement

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা অপেক্ষা করেছিল আজকের এই অনুষ্ঠানের জন্য, তাদের অপেক্ষা যে যথার্থ ছিল, তা প্রমাণ হয়ে গেল যখন দেখা গেল একের পর এক কৃতীরা অভিজ্ঞ প্রবীণ মাস্টারমশাইদের প্রশ্নের সামনে কতখানি সাবলীল এবং তাদের ম্যাচিওরিটি লেভেল কত উচ্চে।

এদিন অনুসন্ধানের এই বৈকালিক আলাপচারিতায় শুভ সূচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. মুজিবুর রহমান। তিনি কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন নিজেকে মেলে ধরো, প্রস্ফুটিত করো। সমাজের জন্য এটাই তোমাদের জন্য বড় কাজ। কৃতী তো তারাই যারা অন্যের থেকে কিছু আলাদা হয়, যারা নিজেদেরকে জ্বালিয়ে প্রমাণ করতে পারে।

অনুসন্ধানের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শশাঙ্ক শেখর মন্ডল সকলকে ভবিষ্যৎ জীবনে আত্মনির্ভরশীল হয়ে দেশ গড়ার কাজে আহ্বান জানান।

এরপর শুরু হয় কৃতীদের সঙ্গে আলাপচারিতার পালা। মাধ্যমিকের কৃতী মঞ্জিষ্ঠা মাইতি জানায় সে যখন যে কাজটা করে সেটাই মন দিয়ে করে। তার লক্ষ্য নিয়ে বলতে গিয়ে সে বলে, আমার লক্ষ্য নিষ্ঠার সঙ্গে অধ্যবসায় বজায় রাখা, ফল আপনা থেকেই আসবে। সে আরো বলে বইকে-সিলেবাসকে- পড়ার টেবিলকে মানুষের মতোই ভালবাসতে হবে, তাহলে তারাও সেই ভালবাসার প্রতিদান দেবে।

উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী সাহিনুর রহমান ছিল বেশ গম্ভীর। সে জানায় এই অতিমারির শুরুতে সে কিছুদিন দোলাচলে ছিল বটে, তবে নিজে থেকেই ভাবতে শুরু করে, এভাবে চলতে পারে না। ফলে তার পড়াশুনা শুরু হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে এক সেকেন্ড সময় সে নষ্ট হতে দেয়নি এই কঠিন সময়েও। সে জানায় স্কুল তাকে অসম্ভব ভাবে সাহায্য করেছে। তার অনুভূতি বলতে গিয়ে সে জানায়, মানুষ ছোটখাটো জীবজন্তুকে খাঁচায় আবদ্ধ করে রাখে, আর আজ ছোট্ট এক ভাইরাস গোটা বিশ্বের মানুষকে গৃহবন্দি করেছে।

মাদ্রাসা ফাইনালের কৃতী ছাত্রী সাহিদা সিদ্দিকী মালদা জেলার প্রান্তিক অঞ্চলের বাসিন্দা হয়েও নিজেকে কখনো গুটিয়ে রাখেনি। বরং সে আজ অনেকের কাছে রোল মডেল। ভবিষ্যৎ জীবনে সে চিকিৎসক হতে চায়, এমনই তার প্রতিজ্ঞা।

উচ্চ মাধ্যমিকের আর এক কৃতী অভিরূপ পাল জানায় জীবনে চড়াই-উতরাই থাকে, তবে ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে সামনে কেউ থাকলে তা এগিয়ে যেতে অনেকখানি সাহস ও শক্তি যোগায়। অভিরূপ দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করে, আমাদের সকলের প্রয়োজন সামনে এমন একজন ব্যক্তিত্বকে রাখা যিনি হবেন তার গাইডিং ফোর্স, তার আদর্শ। সে জানায়, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা তার লক্ষ্য।

এদিন উপস্থিত কৃতীদের মধ্যে সকলের আকর্ষণ বিন্দু ছিল অস্মিতা সরকার। বাড়িতে তার ইতিহাসের আবহ। বাবা-মা দুজনেই ইতিহাসের শিক্ষক। তাই তার ছোটবেলা থেকেই বেড়ে ওঠা ইতিহাস নিয়ে। ইতিহাসের গল্প ছবির মত করে শোনাতো তার বাবা-মা। ধীরে ধীরে গল্প উপন্যাস, দেশ-বিদেশের কাহিনি পড়তে পড়তে জন্মায় সাহিত্যে তার প্রেম। আই সি এস ই-তে অসম্ভব ভালো রেজাল্ট হয় তার। প্রথাগতভাবে বিজ্ঞান বিভাগে না গিয়ে হিউম্যানিটিজ পছন্দ করে সে। সঙ্গে রাখে অঙ্ক। দুটোই তার হয়ে ওঠে প্রিয় বিষয়। তার আক্ষেপ ইতিহাসের পড়াশোনা খুবই মুখস্থবিদ্যা নির্ভর। এত অল্প বয়সে লেখালেখিতে, আবার অক্সফোর্ড এর মত বিশ্ব বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ সে কেমন করে পেলো – এর উত্তরে বিশদভাবে জানায় অস্মিতা, আমাদের যে কোনো কাজই করা উচিত নিষ্ঠার সঙ্গে, তা যে কাজই হোক না কেন! অক্সফোর্ড-এর ফর্ম পূরণ করার সময় সে তার উদ্দেশ্য নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছে, রীতিমতো গবেষণা চালিয়েছে, তবেই সেটা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে তার অভিমত। এছাড়াও তার কলেজের অধ্যাপকও তার হয়ে খুব ভালো রেকমেন্ডেশন দিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. নওয়াজেস মন্ডল অস্মিতাকে পূর্ণ সমর্থন করে তাকে আরও বড় হওয়ার আশীর্বাদ দেন।

এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী অনুসন্ধানের মুখ্য পরামর্শদাতা অধ্যাপক মতিয়ার রহমান খান, বিশিষ্ট সাহিত্যিক চঞ্চল কুমার ঘোষ প্রমুখ। এদিন আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সমগ্র অনুষ্ঠান সুদক্ষ হাতে সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজসেবী ড. কমল কৃষ্ণ দাস।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ