অন্যান্য কলকাতা 

অধীরের সমর্থন মমতার প্রয়োজন নেই , নিজের স্বার্থেই ভবানীপুরে প্রার্থী না দেওয়ার কথা বলছেন অধীর

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে বিজেপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেভাবে অধীর চৌধুরি মমতার সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন তা এক কথায় কংগ্রেস দলের পক্ষে শোভনীয় ছিল না । রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্তকে আটকানোর জন্য কোনো বিশেষ পরিকল্পনা নেননি অধীর চৌধুরি । বরং দিলীপ ঘোষ সকালে যে ভাষায় মমতাকে আক্রমণ করতেন সেই ভাষা এক না হলেও বিকেলে কথাটা একই থাকতো অধীর চৌধুরির কংগ্রেসের । বিধানসভার নির্বাচনের ফল বের হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত এটাই অধীরের ভাষা ছিল। সমগ্র মুর্শিদাবাদ জুড়ে মুসলিম আধিপত্য থাকলেও, কংগ্রেস দলে মুসলিম নেতাদের ঠাঁই ছিল না । গুরুত্ব ছিল না । মুর্শিদাবাদের মান্নান হোসেনকে যেভাবে অপমান করেছিলেন অধীর তা এখন ওই জেলার মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত । মুসলিমদের ভোট নেব , তাঁদের জন্য কিছু করবো না , গোপনে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করব , এরই পরিণতিতে আজ রাজ্য বিধানসভা কংগ্রেস শুন্য হয়ে গেছে । এই শুন্য হওয়ার জন্য শুধু অধীর চৌধুরি নয়, আবদুল মান্নান থেকে শুরু প্রদেশ কংগ্রেসের জনভিত্তিহীন নেতারাও দায়ী ।

একথা স্বীকার করতে বাধা নেই আগামী দিনে এই রাজ্যে কংগ্রেসের উত্থান খুব সহজে হবে না । অধীর চৌধুরি দু নৌকায় পা রাখতে গিয়ে সংখ্যালঘুদের বোকা বানাতে গিয়ে নিজেই বোকা বনে গেছেন । তাই এবার উদ্ধারের জন্য ভবানীপুরে মমতাকে সমর্থনের কথা বলছেন । মমতার বিরুদ্ধে আসন্ন উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী দেবে না বলে অধীর চৌধুরি জানিয়েছেন । এই মুহুর্তে অধীরের সমর্থন মমতার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমাদের মনে হয় না । বরং অধীর চৌধুরি নিজের স্বার্থে, ২০২৪-এ নিজের সাংসদ পদ টিকিয়ে রাখার জন্যই মমতার প্রয়োজন পড়বে । এক্ষেত্রে মমতার কাছে আমাদের অনুরোধ বহরমপুরে আগামী লোকসভা নির্বাচনে অধীরকে হারানোর সুযোগ যেন না ছাড়েন তিনি । কারণ মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ মানুষ অধীরের ঔদ্ধত্যের জবাব দিতে চায় ।

Advertisement

আমার মনে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অধীরের এই চালাকি ধরে ফেলেছেন । অতএব ভবানীপুরে কংগ্রেস প্রার্থী দিলেও তৃণমূলের কোনো ক্ষতি হবে না । কারণ, কংগ্রেসের সমর্থকদের একটাংশ বিজেপি ভোট দেবে , আর যারা মমতাকে ভোট দেবেন তারা এমনিতেই দেবেন । এজন্য অধীরের ঘোষণার কোনো প্রয়োজন নেই । আবার অন্যদিক থেকে চিন্তা করলে দেখা যাবে অধীর চৌধুরি মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে আসলে তিনি বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছেন । কারণ এবার এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির জমানত থাকত না , অধীরে এই সিদ্ধান্তের জন্যই হয়তো বিজেপি সম্মানজনক ভোট পেতে পারে ।

অধীর চৌধুরি ক্ষমতায় আসার দিবাস্বপ্ন দেখতে গিয়ে মমতার অন্ধ বিরোধিতা করতে শুরু করেন । ফলে কংগ্রেসের চিরাচরিত ভোটাররা এবার মমতার দিকে ঝুঁকে পড়ে । সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফা চলাকালীন সময়ে কোচবিহারের শীতলকুচিতে চারজন ভোটারকে যেভাবে গুলি করে মারল সিআইএসএফ জওয়ানরা তা নিয়ে নিরব ছিলেন অধীর চৌধুরি ।  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করলেও অধীর চৌধুরি ওই সময় খানিকটা বিজেপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মমতাকে কটাক্ষ করেছিলেন । শীতলকুচির ওই ঘটনায় নিরীহ চার মুসলিম যুবক খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ , অধীর চৌধুরি মুসলিমদের ভোটে জিতবেন , সাংসদ হবেন , বিরোধী দলের নেতা হবেন , রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করবেন অথচ বিনাকারণে চার মুসলিম যুবককে মারা হলে তিনি নিরব থাকবেন । আর যিনি প্রতিবাদ করবেন তাঁকে নাটক করছেন বলে ব্যঙ্গ করবেন ! তার পরিণতি কী হতে পারে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন প্রমান দিয়ে দিল । কার্যত বাংলায় কংগ্রেস মুছে গেল । এই রাজ্যে মুলত সংখ্যালঘুরাই ছিল কংগ্রেস মুল শক্তি । সংখ্যালঘুদের ভোট নিয়ে জিতবেন , অথচ তাদের স্বার্থে কথা না বললে তারা শুন্য করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এটা অধীর চৌধুরির চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুুরের মুসলিমরা । এরপর রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি পদে ইস্তফা না দিয়ে তিনি মমতাকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করছেন ।

অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেই শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করে মমতাকে হারানোর ছক কষেছিলেন। এখন অধীরবাবু দেখছেন এবার ২০২৪-এ আর তিনি সাংসদ থাকতে পারবেন না , তাই মমতা পক্ষে সওয়াল করছেন । অথচ সূত্রের খবর বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই কংগ্রেস হাইকমান্ড তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দিয়েছিল, সেই প্রস্তাবকে খারিজ করার জন্য অধীরের ঘনিষ্ঠ নেতারা দিল্লিতে গিয়ে বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন । তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে হাইকামন্ডকে বলা হয়েছিল আগামী নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস রাজ্যে নিয়ন্ত্রক শক্তি হয়ে উঠবে । আর ভোটের ফল বলছে, দুটি দলই বাংলায় শুন্য পেল । মানুষ দুটি দলের চরম সুবিধাবাদকে প্রত্যাখান করেছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই অধীর চৌধুরির কোনো সমর্থনের প্রয়োজন মমতার নেই, বরং  মমতা ছাড়া অধীর আর জিততে পারবেন না ।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

five × five =