অন্যান্য 

আমরা স্বজনহারা হলাম একজন পন্ডিত মানুষকে হারালাম: আবদুল মান্নান

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহা. মনিরুজ্জামানের অকাল মৃত্যুতে স্মৃতিচারণ করেছেন বাংলার জনরবের সাহিত্য সম্পাদক গল্পকার সেখ আব্দুল মান্নান।

নিত্য অভ্যাসমত রবিবার (১৬.০৫.২০২১) সকাল সাতটায় মোবাইল স্ক্রিনটা স্ক্রল করতেই ভেসে উঠল মাওলানা আব্দুল ওহাব সাহেবের পাঠানো শোক সংবাদ শনিবার রাত (১৫.০৫.২০২১) ১১.৩৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন প্রখ্যাত যুক্তিবিদ ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। চারিদিকে মৃত্যু মিছিলের আতঙ্কে এম্নিতেই সিঁটিয়ে থাকি। সকাল হলেই হয়ত পাবো কোরোনার কামোড়ে কোনো আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের প্রিয়জন হারানোর খবর। আজ সকালে সেটাই হলো আমার পরমাত্মীয় আলিয়া মাদ্রাসা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান সাহেবের মৃত্যু খবর পেয়ে। দীর্ঘ রোগভোগের পর তিনি ইন্তেকাল করেছেন। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী শিক্ষাবিদ তার্কিক হিসেবেই তিনি আমার শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন । তিনি আমায় ছোট ভাইয়ের মতো ভালোবাসতেন। কতদিন কত দরকারে যে তাঁর কাছে গিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। বলা যায় তাঁর সাথে একটা পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমার। তাই তিনি সপরিবারে আমার দুই মেয়ের বিয়েতেও এসেছিলেন সানন্দে।

Advertisement

গত ৯ মার্চ ২০২১ তাঁর শেষ সান্নিধ্য পেয়েছিলাম তপসিয়া মনুমেমরিয়াল স্কুল অডিটোরিয়ামে ‘বাংলার জনরব’ নিউজ পোর্টালের তরফে আয়োজিত ‘এক দশকে বাংলার উন্নয়নে মমতা’ বিশেষ সংখ্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তিনি সভাপতি ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। এর আগে একাধিকবার আমার সঞ্চালনায় ‘পার্ক সার্কাস লেখক শিল্পী মহল’ এর অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে পেয়েছি। বিশেষ করে সর্বধর্ম সমন্বয়ের তাঁর বক্তব্য শুনে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে যেতেন।অন্য বক্তারা যদি তাঁদের বক্তব্যে কোনো বিষয়ে ভুল তথ্য দিতেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ করে সঠিক তথ্য বুঝিয়ে দিতেন যুক্তি সহকারে। তিনি শুধু ইসলাম সম্পর্কে প্রাজ্ঞ ছিলেন তা নয়, তিনি বেদ পুরাণেও দক্ষ ছিলেন। কখনো কখনো বেদের সূত্র উল্লেখ করে আলোচনা করতেও তাঁকে দেখেছি। তিনি অন্ধ ধর্ম বিশ্বাসী ছিলেন না। তাঁর তপসিয়ার বাসা বাড়িতে অনেকদিন অনেক আলোচনা প্রসঙ্গে আমায় বুঝিয়েছেন। তাঁর মত স্পষ্টবক্তা খুব কমই আছে। অপ্রিয় সত্যি কথা বলতে তিনি কখনোই সঙ্কোচ করতেন না।

তিনি যেমন ছিলেন বাগ্মী তেমন ছিলেন শিক্ষা প্রসারের পথিকৃৎ। তাঁরই অনুপ্রেরণায় তাঁর সুযোগ্য ছাত্র মাওলানা আব্দুল ওহাবের প্রচেষ্টায় হটুগঞ্জে‌ তৈরি হয়েছে আল-আমীন মিল্লী মিশন। যার তিনি চেয়ারম্যানও। দুবার ওই মিশনের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে যোগদান করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি তাঁর জন্মভূমি মালদহে তৈরি করেছেন আধুনিক মানের ‘ গার্লস হোস্টেল’।

তাঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে যেটুকু জেনেছি সেটুকুই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম মাত্র। এর আগে তাঁর বিশাল কর্মজীবনের কিছুই জানিনা বলে আলোকপাত করতে পারলাম না। তবে যা জেনেছি তা থেকে বলতে পারি তাঁর মত বিচক্ষণ, স্পষ্টবাদী, জ্ঞানী, সমাজ সচেতন মানুষকে হারিয়ে এই শহর এক অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হলো।

তিনি ছিলেন আমার কাছে ভারতীয় শিক্ষা, সঙ্স্কৃতি, ইতিহাস, রাজনীতির চলন্তিকা। যা কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করলেই তিনি বুঝিয়ে দিতেন সুন্দর করে।

আল্লাহ তাঁর রুহের মাগফিরাত দান করুন।

_____________________________________


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

3 + eleven =