বিনোদন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য 

মহাবিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষার সর্ববৃহৎ উপন্যাস

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

রুবাইয়া জুঁই : সম্প্রতি হাতে এল লেখক সুজন ভট্টাচার্যের দীর্ঘ উপন্যাস ‘১৮৫৭’-র প্রথম খণ্ড। একটি উপন্যাসের নাম যখন ১৮৫৭, নিশ্চিতভাবেই ধরে নেওয়া যায় সেই বিদ্রোহের আখ্যানই লেখা হবে। কিন্তু উপন্যাসের সূচনা ১৮৪৮, লর্ড ডালহৌসির ভারতে আসার সময় থেকে। আর প্রায় ৭২৮ পৃষ্ঠার শেষে ১৮৫৪-য় ঝাঁসি অধিগ্রহণে প্রথম খণ্ডের পরিণতি। অবশ্যই আপাত। কারণ ২য় খণ্ডও তো নিশ্চয়ই প্রকাশ পাবে।

বিতর্ক রয়েছে ১৮৫৭-র মূল্যায়ন নিয়ে। কেউ বলেন সিপাহীদের বিদ্রোহ, তাও নিতান্ত ধর্মীয় কারণে। আবার কেউ বলেন প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম। তবে লেখক এই উপন্যাসে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি পাঠককে দাড় করিয়েছেন, আবার উত্তরের দিকনির্দেশও দিয়েছেন। সিপাহী বিদ্রোহ যদি সিপাহীদের বিদ্রোহই হবে তবে গণসমর্থনের প্রশ্ন এল কেন? কেনই বা সম্বলপুর, আরা, ভরতপুরের মতো জায়গায়, যেখানে সেনাছাউনি নেই, সেখানেও বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠল কেন? আর সেই বিদ্রোহে মুখ্য ভূমিকা নিলেন সাধারণ মানুষ? বিশেষত কৃষকরা? লেখক আরও অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের কারণ অনুসন্ধান করেছেন। যদি ধরে নেওয়া হয় মুখ দিয়ে কার্তুজের ফিতে কাটাকে ব্যবহার করা হয়েছিল সিপাহীদের উসকে দিতে, তবে বম্বে বা  মাদ্রাজ আর্মিতে একই সমস্যা ছিল, সেখানে বিদ্রোহ হল না কেন? কেন বিদ্রোহ হল না গোর্খা বা শিখ রেজিমেন্টে? আবার ১৯৬২ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত সম্বলপুরে কীভাবে চলল বিদ্রোহ?

Advertisement

এই বিস্তৃত উপাখ্যান পাঠককে অবিশ্রান্ত দৌড় করাবে তদানীন্তন ভারতের কোনায় কোনায়। দিল্লী, লক্ষ্ণৌ, মিরাট, কানপুর, সম্বলপুর, এই বাংলা, আসাম এমনকি খোদ বৃটেনেও। অজস্র জানা চরিত্রের পাশাপাশি নিশ্চিতভাবেই অসংখ্য কল্পিত চরিত্রের সংঘাতে একটা ছবি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, একটা পরিণতির ধারণা। ইতিহাসের অসংখ্য অজানা অধ্যায় উঠে এসেছে চোখের সামনে।

এই উপন্যাস, যা এখনও অবধি মহাবিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষার সর্ববৃহৎ উপন্যাস, তার গঠন নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, একটি চরিত্রকেও লেখক মোটা দাগে আঁকেননি। এমনকি ডালহৌসিকেও। তাঁর আচরণ অন্যায্য ঠিকই। কিন্তু তাঁর তাগিদকেও লেখক সম্মান দেখিয়েছেন। বৃদ্ধ বাহাদুর শাহ, লক্ষ্ণৌয়ের নবাব ওয়াজেদ আলির অসহায়তা মনকে স্পর্শ করে যায়। আর বুকের মধ্যে বরণ করে নিতে ইচ্ছা হয় মরোপন্ত তাম্বেকে। সবশেষে বলি সুরজ সিং কিংবা কাদের আলি বা রঘু সর্দারের কথা। সুরজ এই উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র। যে প্রতিনিয়ত ভাবাচ্ছে। ইকোয়ানা গ্রামের এই কৃষকসন্তানকে পাঠক যে খুব ভালোবেসে ফেলবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অসংখ্য চরিত্র এক বিরাট পটভূমি জুড়ে তাদের বিচরণ। আশা করা যায় পাঠককে ইতিহাসের দুনিয়ায় নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বেশ কিছু প্রচলিত ধারণা বা ইতিহাসের ভুল মিথকে আঘাত করতে পারবেন লেখক।

উপন্যাসের ভাষা নিয়েও বেশ পরীক্ষা করা হয়েছে। পরিবেশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ভাষার প্রকাশ বদলে যাচ্ছে। তাই কলকাতাকেন্দ্রিক অধ্যায়ের ভাষার সঙ্গে দিল্লী বা লক্ষ্ণৌয়ের ভাষার কোনো মিল নেই। এর ফলে পরিবেশের পার্থক্য সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

১৮৫৭ (১ম খণ্ড)

সুজন ভট্টাচার্য

মূল্য: ৭৭৭

পালক পাবলিশার্স

আলোচক – রুবাইয়া জুঁই


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

one × one =