প্রচ্ছদ 

শিক্ষক-শিক্ষিকারা মুক্ত মনে শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনে যাতে সম্পূর্ণ সহায়তা করতে পারেন সেই লক্ষেই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন বদলী চালু করে : ড. আবদুস সাত্তার

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বামফ্রন্ট সরকারের শেষ পাঁচ বছর রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ড. আবদুস সাত্তার । তিনি মাত্র পাঁচ বছরে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের মোড়কে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন । সফল মন্ত্রী হিসাবে আজও তাঁকে রাজ্যের সংখ্যালঘুরা উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে । সেই আবদুস সাত্তার এবার বাংলার জনরব নিউজ পোর্টালের মুখোমুখি । এটা কোনো প্রথাগত সাক্ষাৎকার নয় । এটা ফেলে আসা অতীতের ঐতিহাসিক দলিল । বেশ কয়েকটি কিস্তিতে প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার  প্রকাশিত হবে ।

প্রশ্ন : মাদ্রাসার শিক্ষিক শিক্ষিকাদের বদলী করার জন্য আপনিই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের আইন সংশোধন করেছিলেন । কেন এই কাজ করলেন ?

Advertisement

আবদুস সাত্তার : ঐ যে কথাটি আছে না আপনাকে চিনে পিসিমাকে জানো বিষয়টা খানিকটা সেইরকম।অতীতকে না বুঝলে বর্তমানের কাজকর্মে অগ্রসর হওয়া খুব মুশকিল।রাজা-জমিদার, পরে সাধারণ মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগে, শিক্ষার প্রয়োজনে বেশিরভাগ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ।সরকার নিজস্ব উদ্যোগে খুব কমই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে ।মাদ্রসার ক্ষেত্রে তো প্রশ্নই ছিল না ।ইংরেজ আমলে এমনকি স্বাধীনোত্তরকালেও বিদ্যালয়, মাদ্রাসা সরকারী অনুমোদন লাভ করলেও বেতন,অবসরকালীন ভাতার দায়-দায়িত্ব সকলের ক্ষেত্রে সরকার গ্রহণ করতে রাজি হয়নি । বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি-দাওয়ার আন্দোলনকে মর্যাদা দিয়ে সুস্থ-পঠন পাঠন, সরকারী কর্মচারিদের মতো জীবন-যাপনের লক্ষ্যে বেতন ভাতার সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল।সেই সময় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করত পরিচালন সমিতি , জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অনুমতিক্রমে। ফলত, অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষিত হতো ।এক , ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার জনবিন্যাস অনুযায়ী গ্রামের ছেলেমেয়েরা চাকুরি পেত, হোক না সে প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী।দুই, প্রতিষ্ঠানের প্রতি এক ধরনের দায়িত্ববোধ ও ভালবাসা গড়ে উঠত ।তিন, গ্রাম-শহরের মধ্যে ভারসাম্যও বজায় থাকতো, যা আজ সার্ভিস কমিশন গঠন করার পর আর থাকছে না ।বৈষম্যের ধারণা জন্ম নিচ্ছে ।সমাজে আরও এক ধরনের ক্ষতের জন্ম হচ্ছে ।যে কারনে দেখবেন সংখ্যালঘু মুসলমানদের বৃহত্তর অংশ তাই সরকারী চাকুরিতে নয়, শিক্ষকতার পেশাতেই আছেন।সংরক্ষণের কড়াকড়িও ছিল না ।আর এখন তো অন্য পেশার মতো শিক্ষকতার মহান পেশাও শুধুমাত্র চাকুরিতে এসে ঠেকেছে ।

আমাদের দেশে একটা  অংশের মানুষ আছেন যারা ভালো ব্যবস্থাকে কালিমালিপ্ত করতে রাজনীতির কর্দমাক্ত পিচ্ছিল পথে খুব সহজেই উঠে পড়ে লেগে যান । শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকার যথেচ্ছ ব্যবহার শুরু হতে থাকল।এর প্রভাব সরাসরি এসে পড়ল গরীব, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে । তাই এক প্রকার বাধ্য হযে নিয়োগ কমিশন সরকার গঠন করল ।আবার এই কমিশন গঠনে প্রথমের দিকে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকলেন সংখ্যালঘু মুসলিম পরিবারের ছেলেমেয়েরাই।বলা হতে থাকল প্রতিযোগিতার বাজারে তারা এঁটে উঠতে পারছে না ।পারবেই বা কি করে?কি করলে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হবে, তার কোনো অনুসন্ধান,উপায় সরকারী যন্ত্রে উদ্ভাবিত হল না ।রাজনৈতিক স্তরেও যেন ‘চলেছি আপন স্রোতে’।পরবর্তীতে সংখ্যালঘু মুসলিমরা নিজ উদ্যোগে প্রতিযোগিতার বাজারে শর্ত সন্ধানী হলো এবং বহু দেরিতে হলেও ওবিসি হিসাবে সংরক্ষণ একটা সাময়িক সুরক্ষা হিসাবে হাজির হলো ।

উপরের প্রেক্ষিতে এটা পরিস্কার যে,প্রথমে কমিটি. পরিচালন সমিতি এবং পরে জেলা এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে সুপারিশকৃত নাম থেকে নিয়োগ করা হতো । তাই বদলীর প্রশ্নই ওঠে না । কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের ফলে সমস্যাটা বড় হয়ে দেখা দিল।বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কোথাও চারটি জেলা ,আবার কোথাও আট জেলা নিয়ে ‘জোন’ তৈরি হলো ।দূরত্ব কোনো ক্ষেত্রে ২৫০/৩০০ কিমি।নতুন সংসার হয়তো বা কারও সন্তান আছে অথচ স্বামী একপ্রান্তে, স্ত্রী অন্যপ্রান্তে; বৃদ্ধ বাবা-মা আবার আর এক দিকে ।একই পরিবারের সকলেই অস্থির।এরফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় সন্তানের বেড়ে ওঠা, শৈশব-কৈশোর।কোনো রকমে পঠন-পাঠন ছেড়ে সকলেই ছুটছে আর ছুটছে ।ঘড়ির দিকে নজর কোন বাস, কোন ট্রেন কখন ছাড়বে ? এই অস্থিরতাকে সঙ্গী করে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কি পঠন-পাঠনে সম্পূর্ণরূপে মনোযোগী হতে পারবেন?হওয়া সম্ভব ? মনস্তত্ত্ব কি বলে? শিক্ষার মান, উৎকর্ষ বাড়ানোই যদি সরকারের উদ্দেশ্য, তাহলে এই বিষয়টি উৎকর্ষ বৃদ্ধি ক্ষেত্রে এক মস্ত বড় বাধা । তাই শিক্ষক শিক্ষিকারা যাতে মুক্তমনে পাঠদানের ক্ষেত্রে যুক্ত হতে পারেন, তার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের একটা ইতিবাচক বড় ভূমিকা রয়েছে । আর তা না করতে পারলে সুন্দর সুন্দর বাড়ি হবে, সুন্দর-সুসজ্জিত হয়ে ছেলেমেয়েরা শিক্ষক-শিক্ষিকা হবে কিন্ত সুন্দর সুন্দর ছাত্র-ছাত্রীরা সেখান থেকে ভালো রেজাল্ট করে বেরোবে না ।ফাঁক আর ফাঁকির জাঁতাকলে পড়ে থাকছে সমগ্র শিক্ষা-ব্যবস্থা।সরকারী স্তরে স্বামী- স্ত্রীর কাছাকাছি অন্তত সুযোগ দেওয়া হয়; এক্ষেত্রে তাও ছিল না ।তাহলে কি নবদম্পত্তির দাম্পত্ত্য জীবন, সন্তানের বাৎসল্য, বাবা-ম’র অবসর জীবন সবই হাহাকার করে কেঁদে বেড়াবে ?অন্যদিকে শিক্ষার উৎকর্ষের ক্ষেত্রেও তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না ।বরং কাছাকাছি থাকলে মানসিক-সাংসরিক অস্থিরতা-হতাশা থাকবে না ।শিক্ষকরা মুক্ত মনে ছাত্রছাত্রীদের পঠন-পাঠনে সম্পূর্ণ সহায়তা করতে পারবেন ।অন্ততঃ এটুকু আশা করা তো অন্যায় নয়!

বিদ্যালয় সম্পর্কে এত কথা বলার কারণ হলো, রাজ্যের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার ‘সূচিমুখ’ঠিক করে থাকে বিদ্যালয় শিক্ষা দফতর। মাদ্রাসা তা অনুসরণ করে চলে।২০০৬-এর পূর্বে আবার মাদ্রাসা একই দফতরের অধীনস্থ ছিল ।আবার, মাদ্রাসার সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কোনো ‘জোন’ও ছিল না ।তাই কাজটা করা আরও একটু কঠিন হয়েছিল ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

nine − two =