কলকাতা 

ইন্দিরা-রাজীব গান্ধীর ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের যা ক্ষতি হয়েছে , অধীর -মান্নানের ফুরফুরা যাত্রায় রাজ্য কংগ্রেস আরও ক্ষতির মুখে পড়বে

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরি : ইন্দিরা গান্ধী দিল্লির জামা মসজিদের ইমামের কাছে ভোট ভিক্ষা করেছিলেন । ইন্দিরার আবেদনে সাড়া দিয়ে জামা মসজিদের ইমাম কংগ্রেসকে ভোট দিতে দেশের মুসলমানদের কাছে আবেদন করেছিলেন । সেই সময় সাময়িকভাবে হলেও কংগ্রেস লাভবান হয়েছিল । জামা মসজিদের ইমাম এটাকে ক্যাশ করে পরবর্তীতে অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও ভোট দিতে বলতেন । যাতে কংগ্রেসের অনেক ক্ষতি হয়েছে । অবশ্য ইন্দিরা গান্ধী  তখন আর জীবিত ছিলেন না , তাই তিনি দেখে যেতে পারেননি তারই রাজনৈতিক কৌশলকে কীভাবে বিরোধীরা ব্যবহার করছে ।

রাজীব গান্ধী বাবরি মসজিদের তালা খুলে দিয়েছিলেন , আর অন্যদিকে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন । দুই কট্টর গোষ্ঠীকে নিজের কব্জায় আনতে গিয়ে রাজীব গান্ধী সরকারের পতন হয়ে গিয়েছিল । তারপর থেকে আর কোনো সময়ে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি কংগ্রেস । কংগ্রেসের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত শুধু কংগ্রেসের ক্ষতি করেনি , দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রেরও ক্ষতি করেছে । এরপরেই গোবলয়ে দ্রুত উঠে এসেছে বিজেপি । তারা তাদের রাজনৈতিক কৌশলকে সগর্বে প্রকাশ করে কট্টরপন্থীদের সমর্থন হাসিল করতে পেরেছে । ধীরে ধীরে কট্টর থেকে নরম হিন্দুত্বপন্থীদেরও কাছে পৌছে গেছে বিজেপি । আর এই জন্যই বিজেপি এখন এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ।

Advertisement

ইন্দিরা-রাজীবের সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাল অধীর-মান্নান । তাঁরা দুজনই গতকাল ফুরফুরা শরিফে যান । বাংলার রাজনৈতিক মহলে শুভেন্দু অধিকারীর পর আরও একজন এই মুহুর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন তিনি হলেন আব্বাস সিদ্দিকী । সেই আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে অধীর চৌধুরি দেখা করেছেন । তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে । আসলে অধীরবাবুর এই উদ্যোগে কিছু মুসলমান লোক খুশি হলেও অপরদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট কংগ্রেস যে হারাবে তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই ।

অধীরবাবুর মনে রাখা উচিত এই রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটের বেশিরভাগটা পায় তৃণমূল কংগ্রেস , আর অবশিষ্ট অংশ কংগ্রেস পেয়ে থাকে ছিটেফোঁটা ২/৩ শতাংশ ভোট হয়তো বামেরা পায় । সুতরাং আব্বাস সিদ্দিকীর কাছে গেলে কংগ্রেসের নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই । কারণ মুসলিম ভোট যা কংগ্রেস পেয়ে  সেটা পেতে পারে , তবে এবার কংগ্রেস দল তারচেয়ে কম ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । উপরন্ত অধীর চৌধুরি ফুরফুরায় গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বেশ কয়েক শতাংশ যে হারিয়ে ফেলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।

প্রদেশ কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম । তাদের বক্তব্য পরিস্কার ইন্দিরা -রাজীব যে ভুল করেছিলেন তার ফল এখন ভুগতে হচ্ছে কংগ্রেসকে , তার চেয়ে বেশি ভুল করলেন অধীর চৌধুরি । এরফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের পর এই রাজ্যে কংগ্রেসকে দূরবীণ দিয়ে খুঁজতে হবে বলে ওই দলেরই একাংশ মনে করছেন । তাঁরা বলছেন , কংগ্রেস নেতারা কীভাবে সংখ্যাগুরু ভোট ফিরিয়ে আনতে পারে সেটাই এখন তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত । কারণ রাজ্যের সামনে সবচেয়ে বড় বিপদ হল বিজেপি । আর বিজেপিকে আটকাতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বাড়াতে হবে । অধীর-মান্নানরা সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে যে সম্প্রদায় সমর্থন করবেই তাদেরকে নিয়ে টানা টানি করেছে কার স্বার্থে ?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন অধীর চৌধুরি সংখ্যালঘু ভোটকে মান্যতা দিতে গিয়ে আসলে তারা বিজেপিরই সুবিধা করে দিচ্ছে । সেটা অজান্তেই হচ্ছে কিংবা দলের একটাংশের মদতে এটা করা হচ্ছে যাতে বিজেপির সুবিধা হয় । যেমন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের কংগ্রেস-বাম জোট ভেঙে দেওয়া হয়েছিল , আর এর নেপথ্য কারণ ছিল যাতে এই রাজ্যে বিজেপি উঠে আসে । তা না হলে লোকসভাতে শুধু জোট হলেই বিজেপি ১০ লোকসভা আসন হেরে যেত !


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

two × four =