অন্যান্য 

‘আর্থিক-সামাজিক- সংস্কৃতি-শিক্ষাগত-রাজনৈতিকভাবে পশ্চাদপদদের জন্য কাজ করার যতটুকু সুযোগ পেয়েছি ,তার জন্য কৃতজ্ঞ’: ড. আবদুস সাত্তার

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বামফ্রন্ট সরকারের শেষ পাঁচ বছর রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ড. আবদুস সাত্তার । তিনি মাত্র পাঁচ বছরে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের মোড়কে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন । সফল মন্ত্রী হিসাবে আজও তাঁকে রাজ্যের সংখ্যালঘুরা উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে । সেই আবদুস সাত্তার এবার বাংলার জনরব নিউজ পোর্টালের মুখোমুখি । এটা কোনো প্রথাগত সাক্ষাৎকার নয় । এটা ফেলে আসা অতীতের এক ঐতিহাসিক দলিল । প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার তা প্রকাশিত হবে ।

প্রশ্ন : অনেকে বলে থাকেন বাঙালি মুসলিম হওয়ার কারনেই আপনাকে বামফ্রন্ট বা সিপিএম ক্যাবিনেট মন্ত্রী করেননি । ১৯৯৬ সাল থেকে বামফ্রন্টের আমলে সংখ্যালঘু দফতরের সব মন্ত্রীই ছিলেন উর্দুভাষী মুসলিম , তাই তাঁরা ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছিলেন । আপনি বাঙালি বলেই কী সংখ্যালঘু দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয় আপনাকে ?

Advertisement

আবদুস সাত্তার : জানি না বলতে পারব না , কে কী পদে ছিলেন ; তা দিয়ে নয় , কে কী কাজ করেছেন তা দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে । এটাকে স্মরণে রেখেই আমি সব সময় কাজ করে এসেছি ।

প্রশ্ন :  কিন্ত এটা মানতেই হবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় , মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন তৈরির নেপথ্যে আপনার মস্তিস্ক কাজ করেছিল , পরিকল্পনা ছিল আপনার । তা সত্ত্বে বিধানসভায় এ বিষয়ে বিল বা আইন পেশের সময় সেই বিলে আপনার নাম নেই ।তাহলে ভবিষ্যৎ কীভাবে আপনাকে স্মরণ করবে ?

আবদুস সাত্তার : কথাটা ঠিকই । সেই সময় আমার সহকর্মী অধ্যাপক অঞ্জন বেরা-ও একই কথা বলেছিলেন । কিন্ত কী আর করা যাবে ? ‍

প্রশ্ন : আপনি রাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বে কলকাতার কয়েকটি উর্দু সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে , স্বশাসিত সংস্থাগুলির চেয়ারম্যান পদে উর্দুভাষীদের সরিয়ে আপনি বাংলাভাষীদের নিয়োগ করেছিলেন । আপনার সেই সময়কার দলের ( এখন আপনি কংগ্রেসে আছেন ) এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার মদতেই এই ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছিল , এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া ?

আবদুস  সাত্তার : এই রকম একটা অভিযোগ সেই সময় সংবাদের ইংরেজি ভাষান্তর হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এসেছিল । আমাকে তিনি তা দিয়েও ছিলেন । আমি উত্তরও দিয়েছিলাম । কোথাও কম কিছু ছিল না । আজ স্বীকার করতে বাধা নেই , আসলে আমাকে বিব্রত করার একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত ছিল ।

প্রশ্ন : আমরা জানি সেই সময় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান দুজনই আপনাকে মন্ত্রী বলে স্বীকার করতেন না । তাঁরা তাঁদের চিঠি কিংবা বার্ষিক প্রতিবেদন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দিতেন । এমনকি সংখ্যালঘু বিত্ত নিগম আয়োজিত মিলন মেলার বিজ্ঞাপনেও আপনার নাম থাকত না , এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া ?

আবদুস  সাত্তার : মনে রাখতে হবে , এই দফতরের ভারপ্রাপ্ত পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী । রাষ্ট্রমন্ত্রীর আলাদা কোনো ক্ষমতা থাকে না । তাঁকে পূর্ণমন্ত্রী যা কাজ দেবেন সেই অনুযায়ী কাজ করতে হয় । তবু , অন্য রাষ্ট্রমন্ত্রীদের তুলনায় আমি কাজের সুযোগ বেশিই পেয়েছিলাম ।পার্টিতে আমি তো কোনো ‘বড় নেতা’ ছিলাম না । তাই যেটুকু সুযোগ পেয়েছি কাজ করার ক্ষেত্রে দফতরের পূর্ণমন্ত্রীকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি ।

প্রশ্ন : আমরা তো জানি মুখ্যমন্ত্রী বা এই দফতরের পূর্ণমন্ত্রীর সঙ্গে সংযোগকারী আধিকারিক তো ছিলেন একটি স্বশাসিত সংস্থার চেয়ারম্যান ও আপনার পূর্বতন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের বিশেষ পচ্ছন্দের । মূলত তাঁর মাধ্যমেই আপনার উপর নজরদারি চালানো হত , যাতে কাজের মাধ্যমে আপনি তাঁকে ছাড়িয়ে না যান । জানেন কি ?

আবদুস  সাত্তার : আবারও বলছি কি থেকে কী হয়েছে তা আমি বলতে পারব না । কাজ করতে গেলেই কিছু সমস্যা হবেই , সেটাকে অতিক্রম করেই কাজ করতে হবে । সব ব্যবস্থাতেই তা থাকে। এ আর নতুন কি ?

প্রশ্ন : আপনি রাষ্ট্রমন্ত্রী হলেও আপনার ভুমিকা ছিল পূর্ণমন্ত্রীর মতো । আপনার সময়কালে অনেকেই রাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হলেও আপনাকে করা হয়নি । কাজ করছেন অথচ প্রাপ্ত মর্যাদা দেওয়া হয়নি ।খারাপ লাগতো না । কাজের ক্ষেত্রে তাঁর কোনো প্রভাব কি পড়তো না ?

আবদুস  সাত্তার : খারাপ লাগলেই বা আমার করণীয় কী ছিল । যা আমার উপর নির্ভর করে না , তা নিয়ে ভেবে আমি-ই বা কী করতাম । বরং আর্থিক-সামাজিক- সংস্কৃতি-শিক্ষাগত-রাজনৈতিকভাবে পশ্চাদপদদের জন্য কাজ করার যতটুকু সুযোগ পেয়েছি , তাই করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি । বরং যা হয়েছে , তাই-ই সারসত্য ।সেটুকুও যে সুযোগ পেয়েছি , তার জন্য কৃতজ্ঞ ।কাজ করার সামান্যতম সুযোগ-ই বা কে কাকে দেয় ? এখনও তো এই দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং । একজন রাষ্ট্রমন্ত্রীও আছেন । কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে কি ? কোনো নতুন প্রকল্প , বিষয়ের কথা শুনেছেন কি ? যা রেখে এসেছি তা চালাতে গিয়ে তো হিমশিম অবস্থা ! রাষ্ট্রমন্ত্রী রাইটার্সে , সচিবালয় নবান্নে । তাহলে বুঝুন অবস্থাটা!

প্রশ্ন : ঠিক আছে আপনার কথা মতো উন্নয়নের প্রসঙ্গে আসি । আপনি মন্ত্রী হওয়ার পূর্বে দফতরের বাজেট ছিল ৫ কোটি টাকা । পরিকাঠামোও সেই অর্থে কিছু ছিল না ।এটা কি ঠিক ?

আবদুস  সাত্তার : প্রায় তাই । দফতরের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং কাজ যা ছিল তাতে হয়তো এর বেশি প্রয়োজন হতো না ।তার কারণ স্বশাসিত সংস্থাগুলিকে অনুদানের পর যা অবশিষ্ট থাকতো তা সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমকে দিয়ে দেওয়া হতো ।ঋণদান কর্মসূচি পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিগমকে রাজ্যের বরাদ্দ অংশও দিতে হত । কাজের পরিধির নিরিখে পরিকাঠামো ও বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন হয় ।( চলবে )

 

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

1 × three =