বিনোদন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য 

পুজোর খুশিতে ঝলমল ‘লেখালেখি সারাদিন’ এর প্রতিপাতা : সেকেন্দার সেখ

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেকেন্দার সেখ : দুর্গা পুজো মানেই আপামর বাঙালির বাধভাঙা আনন্দ সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়া দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে। তারা তাদের শেষ সম্বলটুকু নিঙড়ে পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে কার্পণ্য করে না। আর এদের মধ্যে যারা লেখালেখি করে তাদের তো আনন্দ মূর্ত হয়ে ওঠে বিভিন্ন পুজো বার্ষিকীতে প্রকাশিত লেখামালার সুগন্ধে। শুধু লেখকরাই নয়, পাঠকরাও মুখিয়ে থাকে ভিন্ন স্বাদের লেখার সাথে পুজো বার্ষিকীর মন মাতানো সুগন্ধের জন্যে। যদিও দুর্ভাগ্য এবার করোনার কামড়ে বিপর্যস্ত অধিকাংশ পুজো বার্ষিকীই ছাপা অক্ষরে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই অগনিত লেখক পাঠক এবার বঞ্চিত নান্দনিক প্রচ্ছদে মোড়া ঝকঝকে পুজো বার্ষিকীর মদির ঘ্রাণ থেকে। তবে দমবার পাত্র নন মুষ্টিমেয় পত্র-পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলী। তাঁরা এবার অনলাইন শারদীয়া সংখ্যা প্রকাশ করে লেখক পাঠকদের মনে আনন্দের ঢেউ তুলেছেন।

তেমনই এক চমকদার শারদীয়া ‘লেখালেখি সারাদিন’। সম্পাদক শ্যামল রায়। শ্যামল বাবু মূলত নতুন লেখক লেখিকাদের ভরপুর আনন্দ ও উৎসাহ দিতেই তাঁর ই পত্রিকা ‘লেখালেখি সারাদিন’ এর শুরুয়াত করেছেন। পর পর বেশ কয়েকটি সংখ্যা পড়ার পর আমার তাই মনে হয়েছে। তিনি তাঁর পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যার পাতায় পাতায় একগুচ্ছ নবীন প্রবীণ লেখক লেখিকার লেখা মালায় যেন আনন্দের বান ডেকেছেন। ২০ পাতার এই শারদীয়া সংখ্যার প্রায় প্রতিটি পাতা বরাদ্দ করেছেন এক একজন কবি বা গল্পকারকে। ‘অক্ষরে অক্ষরে সেজে উঠছে একক কবি/গল্পকার’ এর লেখা মালায়। তাদের ছোট্ট পরিচিতি সহ শারদীয়া উৎসবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যাদের লেখায় এবার শারদীয়া সংখ্যাটি সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁরা হলেন গল্পকার মৌসুমী ঘোষাল চৌধুরী, কবি ও গল্পকার সামসুজ্জামান, রমিতা মজুমদার,চন্দনা দে(সিনহা),কবি শর্মিষ্ঠা মাজি, মিলন ভৌমিক, ড: মনীষা চক্রবর্তী, সুনীতি গোস্বামী, মঞ্জুলা বর, পার্থ সারথি বর, কুনাল রায়, মমতা রায় চৌধুরী, সুমিতা মুখোপাধ্যায়, জয়িতা বর্ধন, নিতাই মৃধা। প্রতিজন কবি ও গল্পকার তাঁর উৎকৃষ্ট মানের গল্প কবিতাতেই যে সাজিয়ে তুলেছেন পাতাগুলি তা বলাই বাহুল্য।

Advertisement

এছাড়াও সম্পাদক একগুচ্ছ কবির একক কবিতাও সন্নিবিষ্ট করে সংখ্যাটিকে আরও মনোগ্রাহী করে তুলেছেন। আর এই কবিরা হলেন সেখ আব্দুল মান্নান, সুপ্রিয় চক্রবর্তী, মমতা রায় চৌধুরী, বাবুল সাহা, সুবীর ঘোষ, বিমলেন্দু চক্রবর্তী ও সুমিতা মুখোপাধ্যায়। তবে কবি ও গল্পকার সামসুজ্জামানের ‘তিনি আমার মা’ কবিতাটি অনন্যতার দাবিদার।

কবিতার তাত্বিক দিকটা বাদ দিয়ে বলা যায় কবি মনীষা চক্রবর্তী তাঁর ‘চিঠি’ কবিতার মধ্যে দিয়ে যেন এক অব্যক্ত বেদনার গান শুনিয়েছেন। কবি মনীষা চক্রবর্তী পেশায় একজন অধ্যাপিকা হলেন , তাঁর মধ্যে বাংলা ভাষায় যে দখল , এবং আবেগের প্রকাশ ঘটেছে তা এক কথায় অনবদ্য বলা যেতে পারে ।‘ বন্ধন’ কবিতার মধ্যে এক গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে , ‘জীবন যুদ্ধে আমরা’ কবিতায় করোনা মহামারি কালে মানুষের যে অব্যক্ত কষ্ট হচ্ছে তারই ছন্দবদ্ধ রূপ দিয়েছেন কবিতার মাধ্যমে মনীষা চক্রবর্তী । এছাড়া ‘শ্রী মা’ ‘ সৃষ্টির কাছে’ কবিতাগুলিতে যে  আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তা প্রশংসার দাবি রাখে ।

হেশেল ঠেলে সে ভালো কবিতাও লেখে, এই আপ্তবাক্যটিকে সার্থক করে তুলেছেন প্রতিশ্রুতিবান কবি শর্মিষ্ঠা মাজি। তিনি তাঁর গুচ্ছ কবিতার মধ্যে ‘পুজোর গন্ধ’ কবিতার ভেতর দিয়ে যেন শারদীয়ার সুভাষ বাঙ্ময় করে তুলেছেন।

যতদূর জানি সম্পাদক শ্যামল রায় নিজেও একজন সার্থক কবি। তাই তাঁর কোনো কবিতা শারদীয়ায় থাকবে না, তা তো হয়না। এই শারদীয়ায় তাঁর ‘হাতছানি’ ও ‘বরঙ কাছাকাছি হতে’ কবিতা দুটি বেশ সুখপাঠ্য।

আর এক অনন্য কবির কবিতাও সমৃদ্ধ করেছে শারদীয়া সংখ্যাটিকে। যিনি বাংলার অগণিত কবির প্ররণা।সেই যশস্বী কবি কৃষ্ণা বসুও এখানে লিখেছেন শরৎ রাণী দেবী দুর্গাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘মাতৃ শক্তি শ্রেষ্ঠ শক্তি’ এবং ‘মাতৃ পুজায় প্রণাম’ শিরোনামে দুটি মনোরম কবিতা।

পরিশেষে বলতেই হয় যে তনুশ্যা রায়ের ‘দুর্গা পুজোয় মাটি প্রয়োজন কেন?’ নিবন্ধটিও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। পুজো পাগল অনেক ভক্তের কাছে নিবন্ধটি তাৎপর্যপূর্ণ। করোনা কালে এমন একটি উপভোগ্য শারদীয়া সংখ্যা পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য সম্পাদক ও পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা ধন্যবাদার্হ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

13 − 2 =