অন্যান্য 

মুসলমানদের ঘরোয়া বিবাদের সমাধানে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের গঠনমূলক পরিষেবা( দ্বিতীয় কিস্তি )

শেয়ার করুন
  • 32
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

মুসলমান সমাজে কথায় কথায় তালাক দিয়ে মুসলিম মহিলাদেরকে অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয় বলে তথাকথিত মানবতাবাদীরা অভিযোগ করে থাকেন । কিন্ত মুসলিম সমাজের নারীই সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে  থাকে। ইসলাম ধর্ম নারীদেরকে পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব ও সম্মান দিয়েছে। বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়ের সম্মতি ছাড়া বিবাহ হবে না,এটা ইসলামের বিধান । এমনকি তালাকের ক্ষেত্রেও মেয়েদের সমান অধিকার দিয়েছে ইসলাম। ইসলামী আইনকে সামনে রেখে ঘরোয়া বিবাদ বা স্বামী-স্ত্রী মধ্যে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সম্মানজনক সমাধান প্রায় তিন দশক ধরে করে আসছে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। কীভাবে শরিয়ত মেনে বিবাদ ও কলহ মেটানো হয় তা নিয়ে এই প্রবন্ধ । জাতীর স্বার্থে সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য বাংলার জনরব জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের এই সামাজিক গঠনমূলক কাজ সম্বন্ধে লেখা প্রবন্ধটি প্রকাশ করল জনস্বার্থে । আজ দ্বিতীয় কিস্তি।

প্রথম কিস্তির পর——

Advertisement

কিছু দিন পূর্বে কেস নং july/418/09 বাদিনী আমেরিকায় কর্মরত বৈজ্ঞানিকের স্ত্রী আমেরিকা থেকে চলে আসেন। তার সঙ্গে  সংসার করবেন না বলে মতামত দেন। অনেক বোঝানোর পরেও সেই একই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। আমি তালাক চাই, তা নইলে ওর বিরুদ্ধে আদালতে কেসের মাধ্যমে সকলকে জেলে পুরবো ও ওর চাকরি খাব এই মন্তব্য করতে থাকেন। অসহায় ছেলের আব্বা, আম্মা ও আত্মীয়ের মাধ্যমে মাহকামায়ে শরীয়াহা আদালতে মোকদ্দমা দাখিল করেন। অবশেষে মাহকামায়ে শরীয়াহার মাধ্যমে তালাক প্রাপ্তির পর উভয় শান্তিতে বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন। মনে রাখবেন সরকারী আদালতের মাধ্যমে কোনও মহিলা বিবাহ বিচ্ছেদ করালে সেই তালাকের উপর নির্ভর করে অন্যত্র বিবাহ হলে ওই নিকাহ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম হবে।

গ্রাম বাংলার মুমিন মুসলমানগণ শরীয়তি তালাকের কথা মেনেই বিবাহ করেন, কোর্টের তালাক মেনে নয়। শরীয়তের  দৃষ্টিতে মুসলমানরা প্রতিবিধান করতে চাই। হারামের হাত থেকে মুসলমান সমাজকে বাঁচাতে হবে। হালাল জীবনযাপনের পরিপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। জমিয়ত উলামার কর্মীদের দায়িত্ব হবে মুসলমান সমাজকে আল্লাহর এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) এর হুকুম মেনে দ্বীনি শরীয়তের মাধ্যমে ঘরোয়া বিপদ ও বৈবাহিক জীবনের অচল অবস্থার যাতে অবসান হয় উৎসাহ ও পরিবেশ তৈরি করা। কিছু ম্যারেজ রেজিস্টার ও ক্ষমতাশালী  ব্যক্তি তার নিজ প্রচেষ্টায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে শরীয়তের তোয়াক্কা না করে অর্থের জোরে তালাক করে দিচ্ছেন। কোরআন – হাদিসের আলোকে তাদের ফায়সালা জায়েজ নয়। পশ্চিমবঙ্গ মাহকামায়ে শরীয়াহর একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে যার মাধ্যমে মোকদ্দমার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে শরীয়ত সম্মত ফায়সালা হয়। মহাকামায়ে শরীয়াহা আদালতের কার্যালয় ৮১ নং রবীন্দ্র সরনী, কলকাতা-৭৩। প্রতি শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে মুফতি লিয়াকত আলী সাহেব, মুফতি শফিউল্লাহ সাহেব এই বিভাগকে দেখভাল করেন। ফায়সালার ক্ষেত্রে বিশেষ দিনে কমিটির পরামর্শের ভিত্তিতে ফায়সালা ও কেসের নিষ্পত্তি করা হয়।  মাহকামায়ে শরীয়াহ কর্মকান্ড ও প্রচার-প্রসার জেলা, থানা ও ব্লক স্তরে করা প্রয়োজন, যে সকল জেলা অনুমোদনের জন্য আগ্রহী মাহকামায়ে শরীয়াহর সদর দফতরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সদয় সমাপ্ত দেওবন্দের  মাহমুদ হলে ১২,১৩ ও ১৪ই আগস্ট সর্বভারতীয় ট্রেনিং ক্যাম্পে জমিয়ত কর্মীদের মাহকামায়ে শরীয়াহর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

কেস নম্বর jan631/15; এই মোকদ্দমা র ক্ষেত্রে বিবাদিনী স্বামীর কথা শুনত না। স্বেচ্ছাসেরী জীবন যাপন করত।স্বামীকে না জানিয়ে বন্ধু -বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরতে বেড়ানো , অন্যত্র রাত্রিযাপন সব কিছুই করত।জিজ্ঞাসা করলে বা নিষেধ করলে বলত, ‘আমি তোমাদের সকলকে জেলে পচাব।আমার বিরুদ্ধে কিছুই বলতে পারবে না।আমি একজন উকিল;আমি যা ইচ্ছে তাই করব’। পাত্রপক্ষ ভয়ে কিছুই বলত না।পরে তারা মাহকামায়ে শরীয়াহর দ্বারস্থ হলে মাহকামায়ে শরীয়াহর মাধ্যমে ছেলেকে আশ্বস্ত করা তাকে বোঝাবার পর সে ভুল স্বীকার করে। পরে সে নিজেই তালাকের জন্য আপিল করে ও সুষ্ঠভাবে তালাক হয় ও উভয় পক্ষ এখন শান্তিতে আছে।


শেয়ার করুন
  • 32
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

twenty − 4 =