কলকাতা 

৪২ বছর পর মইনুল হাসানের মনে হল সিপিএম দলিত-মুসলিমদের বঞ্চিত করেছে, অনুশোচনা নাকি পাওয়ার আশায় !?

শেয়ার করুন
  • 26
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ  ইবাদুল ইসলাম :  জ্যোতিবাবু রাইটার্স থেকে শেষ দিন যেদিন বেরিয়ে আসছিলেন সেদিন এক বর্ষীয়ান মুসলিম সাংবাদিক তাঁকে  প্রশ্ন করেছিলেন , পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের জন্য আপনি কিছু করে গেলেন না ?  তিনি সেদিন এক মুসলিম মন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলে বলেছিলেন এঁরা তো আমাকে সমস্যার কথা বলেননি। আর ৪২ বছর পর সিপিএমের মত সাংগঠনিক দলের কাছে সব রকম সুযোগ -সুবিধা নেওয়ার পর যখন দল ছেড়ে বেরিয়ে এসে প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান অভিযোগ করছেন এই দলে দলিত-মুসলিমরা বঞ্চিত তখন প্রশ্ন ওঠে দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংসদ হয়ে কী কোন দিন এ প্রশ্ন দলের ভিতরে তুলেছেন? অথচ আমরা যখন এই কথাগুলি লিখেছি তখন মইনুল হাসানদের মত সাংসদরা আমাদের মুসলিম মৌলবাদী বলে চিহ্নিত করতেন। আজ প্রগতিশীল বামপন্থী হয়েও মুসলিম মৌলবাদীদের মত কথা বলছেন কেন?  আসলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়, দল ক্ষমতায় নেই অতএব দলের সঙ্গে সর্ম্পক ছিন্ন করে আবার অন্য কোন দলে গিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা।

মইনুল হাসান দলিত-সংখ্যালঘুদের বঞ্চনার কথা বলছেন তিনিই তো সিপিএমের সাংসদ থাকাকালীন সময়ে আস্ত একটি নিজের নামে বই লিখেছিলেন,যেখানে বামফ্রন্ট আমলে সংখ্যালঘুদের কী অসম্ভব উন্নয়ন হয়েছে তার ফিরিস্তি ছিল। তাহলে মইনুল হাসানকে এখন বলতে হবে সেই বইয়ে তিনি যা লিখেছিলেন তা সঠিক নয়। সিপিএমের সাংসদ হওয়ার কারণে তিনি সেদিন বাংলার সংখ্যালঘু (মুসলিম) সমাজকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। দলিত মুসলিমদের পার্টিতে প্রতিনিধিত্ব তেমন নেই বলে তিনি অভিযোগ করেছেন । তাঁকে এটা স্বীকার করতে হবে সিপিএম যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তিনি মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে হেরে যাওয়ার পরও রাজ্যসভায় তাঁকে পাঠিয়েছিল। শুধুমাত্র কংগ্রেস দলের হেভিওয়েট নেতা ছাড়া কেউ লোকসভা বা বিধানসভায় হেরে গেলে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয় না । তৃণমূল নেতা মদন মিত্র শুধুমাত্র একজন নেতা নন,তাঁর জনপ্রিয়তা এরাজ্যের সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুদের মধ্যে সমানভাবে রয়েছে তা সত্তে তিনি কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে হেরে যাওয়ার পর তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়নি। তা বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর আনুগত্য কমে যায়নি।

Advertisement

মইনুল হাসানকে পার্টি বঞ্চিত করেছে এটা সত্য নয়,বরং নিরপেক্ষ বিচারে বলা যেতে পার্টি আবদুস সাত্তার, রেজ্জাক মোল্লাদের বঞ্চিত করেছে। এদের যা যোগ্যতা ছিল সেই সম্মান পার্টি এদের দেয়নি। মইনুল হাসানকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানের অনেক বেশি দিয়েছে সিপিএম । আসলে দূর্দিনে বোঝা যায় আদর্শ নীতিবোধ। রাজনীতি করার উদ্দেশ্য যদি মানুষের সেবা করার জন্য না হয় তাহলে সেই রাজনীতি আদর্শহীন রাজনীতি । মইনুল হাসান তিনি সিপিএমে থাকবেন না বেরিয়ে যাবেন তা তিনিই সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র অধিকারী। তবে মুসলিম সমাজকে সামনে রেখে দল ছাড়ার কারণ ব্যাখা করবেন না । কারণ মইনুল হাসান যখন ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন তখন মুসলিম সমাজের ব্যাথা-বেদনা নিয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। পার্টির মধ্যে থেকেই রেজ্জাক মোল্লা যা করছিলেন তিনি তা করলেন না কেন ? অন্তত মুসলিম সমাজের জন্য যদি দল তাঁকে বহিস্কার করত তাহলে শহীদ হয়ে যেতেন ? তা না করে নীরব ছিলেন । শেষ পর্যন্ত ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বুদ্ধ ঘনিষ্ট হওয়ার কারণে দলের পক্ষে রাজ্যসভায় চলে গেলেন । ঋতব্রতকে যেদিন রাজ্যসভায় প্রার্থী করা হয়েছিল সেদিন রেজ্জাক মোল্লা ছাড়া  সিপিএমের আর কোন মুসলিম নেতা প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। মইনুল সাহেব তো সেদিনও রেজ্জাকের সঙ্গে জেহাদ করতে পারতেন । তা কেন করলেন না ! আসলে সেদিনও মইনুল হাসান সাহেব অপেক্ষায় ছিলেন আজ না হোক কাল পার্টি তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারে। এখন আশা ভঙ্গ হয়েছে । তিনি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন সিপিএমের দেওয়ার কিছু নেই তাই গুড বাই সিপিএম । অজুহাত দলিত-মুসলিম ! ক্ষমতায় থাকার সময় আমার যারা  লিখতাম মুসলিমরা বঞ্চিত হচ্ছে ,মইনুল হাসানদের মত বামপন্থী মুসলিমরা আমাদেরকে মৌলবাদী বলে কটাক্ষ করতেন। এটা বলতেন না এদের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হোক । সিপিএম হয়েও এ কথা স্বীকার করতেন আবদুস সাত্তার ও রেজ্জাক মোল্লারা। বামেরা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে কোনদিন প্রকাশ্যে মইনুল হাসান সাহেব এ কথা স্বীকার করেননি যে বামফ্রন্টের আমলে মুসলমানরা ভাল নেই।


শেয়ার করুন
  • 26
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

2 × 3 =