অন্যান্য 

মমতার জনপ্রিয়তা এখনও অটুট , নিচু তলার কর্মীদের দূনীর্তির জন্যই তৃণমূলের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে মানুষ

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোনার চামচ মুখে দিয়ে রাজনীতিতে আসেননি । তিনি লড়াই করে রাজনীতি করেছেন , নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । আজ তিনি পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী । তিনি প্রেসিডেন্সির ছাত্রী নন , তিনি লন্ডন থেকে ব্যারিষ্টার হয়ে আসেননি । তিনি অভিজাত বাড়ির সন্তান নন । সাধারণ পরিবারের মেয়ে । নিম্ন-মধ্যবিত্ত বললে অত্যুক্তি হয় না । স্বাধীনতার পর তিনিই এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যিনি সাধারন পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই তাঁর মধ্যে গরীব-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে ।

তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি শহুরে নেতাদের মত শ্রমিক কিংবা কৃষক নেতা হননি । তিনি সার্বিক অর্থে জনগণের নেত্রী হয়ে উঠেছেন । এনিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । বাংলার রাজনীতিতে তিনি একমাত্র নেত্রী যার এই মুহুর্তে কোনো বিকল্প নেই । তবু যেন কোথায় একটা খামতি চোখে পড়ছে । কেন এই খামতি ? মাত্র ১০ বছর ক্ষমতা থাকার পর এতটা জনপ্রিয়তা কমে যাবে যে তিনি ২০২১-এ জেতার ব্যাপারে আশাবাদী হচ্ছেন , নিশ্চিত নন । অথচ আক্ষরিক অর্থে গ্রাম-বাংলার উন্নতি হয়েছে মমতার আমলেই । আজ যে গ্রামে শহরের ছোঁয়া লেগেছে তার নেপথ্যে রয়েছে মমতার স্বপ্ন ।

Advertisement

কিন্ত এক দূনীর্তিই শেষ করে দিল তৃণমূলকে । গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে যে লাগাম ছাড়া দূনীর্তি চলছে তাতেই ক্ষোভ বেড়েছে সাধারন মানুষের মনে । আমরা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম দূনীর্তি মূল উৎস কি ? বামেদের আমলেও দূনীর্তি হয়েছে তা চোখে পড়ত না । কারণ , বামেরা কখনও পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থী করার জন্য প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিত না । গ্রামের মধ্যে যে মানুষটির জনপ্রিয় -সততা আছে তাঁকে প্রার্থী পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বামেরা প্রস্তাব পাঠাত । তিনি রাজি না হলে , পরের জনপ্রিয় ব্যক্তিটিকে প্রস্তাব পাঠানো হত । তিনি রাজি না হলে গ্রামের মিটিং ডেকে সবার মতামত নিয়ে প্রার্থী করা হত । কিন্ত কোনো সময়ে অন্য দলের ভালো প্রার্থীকে দলে টানা হত না । কিন্ত তৃণমূলের আমলে প্রার্থী পদ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত প্রধান পর্যন্ত নিলামে তোলা হয় । যে বেশি টাকা দেবে তাঁকেই প্রার্থী বা প্রধান করা হয় ।

আর এই প্রবণতার কারণেই নিচু তলার তৃণমূলের নেতারা ব্যাপক দূনীর্তি করার সুযোগ  পেয়ে গেছে । টাকা দিয়ে পঞ্চায়েত সদস্য বা প্রধান হওয়ার কারণে তাদের উপর দলীয় শৃঙ্খলা প্রয়োগ কঠিন হয়ে পড়েছে । এখানেই শুধু নয় , শোনা যায় বিধায়ক পদে প্রার্থী করার জন্য টাকা লেনদেন হয় । এরফলে  জেতার পর এই সব জনপ্রতিনিধিদের লক্ষ্য হয়ে উঠে মানুষের সেবা করা নয় , টাকা কামানো । রাজ্যের সর্বত্র দেখলে এটা স্পষ্ট হবে । এই পরম্পরা তৃণমূল পার্টিতে তৈরি করেছিলেন একজন যিনি এখন বিজেপিতে আছেন । তিনি আবার এই রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে দল ভাঙানোর খেলায় মত্ত হয়ে পড়ে । ফলে কংগ্রেস -সিপিএম ভাঙতে থাকে ।

কংগ্রেস-সিপিএমের এই ভাঙা-গড়ার খেলায় লাভ হয়েছে বিজেপির । মনে রাখতে হবে গনতান্ত্রিক দেশে তো বটেই এমনকি স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের আমলেও বিরোধী শক্তিকে চেপে রাখা যায় । সম্রাট আকরব থেকে শুরু করে ঔরঙ্গজেবের শাসনের সময়েও বিরোধী শক্তি সক্রিয় ছিল । তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সাধারন মানুষের আস্থা থাকলেও বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে এই রাজনীতি রাজ্যের মানুষ মেনে নিতে পারছে না । তারা ধীরে ধীরে গেরুয়া শিবিরের দিকে চলে যাচ্ছে । কারণ কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দলীয় কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে পারছে বিজেপি । ফলে বিজেপির শক্তি এই রাজ্যে অনেকটাই বেড়ে গেছে এটা অস্বীকার করা যাবে না।

অন্যদিকে , আমফান বিপর্যয়ের পর রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত স্তরে যে দূনীর্তির অভিযোগ উঠেছে তাকে সম্বল করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বাম-কংগ্রেস -বিজেপি । এরা তীব্র আন্দোলন করতে শুরু করেছে । ফলে মুখ্যমন্ত্রী বাধ্য হয়ে টাকা ফেরত দিতে আদেশ দেন । এরফলে আবার চটেছে গ্রাম-বাংলায় থাকা তৃণমূলের দূনীর্তি ব্রিগেড । ফলে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মমতা সরকারের জয় নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সংশয় । ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন , যদি আমার ক্ষমতায় আসি তাহলে আজীবন রেশন ফ্রি করে দেব —–।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

nineteen − eleven =