কলকাতা 

সাইনবোর্ড হয়ে যাওয়া রাজ্য কংগ্রেসকে আবার অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পারেন সোমেন মিত্র

শেয়ার করুন
  • 40
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : রাজ্যকে বিজেপির আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে হলে প্রদেশ কংগ্রেসকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। কারণ সমগ্র দেশেই এই মুহুর্তে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার ক্ষেত্রে কংগ্রেস ছাড়া বিকল্প কোন শক্তি নেই । স্পষ্ট করে বলা যেতে পারে যারা কংগ্রেসকে দূর্বল করতে চাইছে তারা আসলে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়ার জন্য এই কাজ করছে। তবে কংগ্রেস নেতাদেরও অনেক দোষ রয়েছে তারা কেউ তেমন জনসংযোগ গড়ে তুলতে চাননি । বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির মুর্শিদাবাদে জনসংযোগ ছিল চোখে পড়ার মত । তাই তাঁকে যখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হয়েছিল তখন অনেকেই ভেবেছিল এ রাজ্যের কংগ্রেসে মরা গাঙে বান আসতে পারে । কিন্ত বিস্ময়ের বিষয় অধীর চৌধুরি মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে যতটা সাফল্য পেয়েছে তুলনায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে ততটাই ব্যর্থ বললে অত্যুক্তি হবে না। তাঁর আমলে একের পর নির্বাচিত বিধায়করা দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তিনি নিরব নির্বিকার। দলত্যাগ করা এক কংগ্রেস বিধায়ক একান্তে কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রদেশ সভাপতির বিরুদ্ধে। ওই বিধায়কের বক্তব্য,শাসক দল যখন নানাভাবে আমাদেরকে টাইট দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন ঠিক তখনই প্রদেশ কংগ্রেস আমাদের পাশে থাকছে না । দল যখন তার নির্বাচিত বিধায়কের পাশে থাকে না তখন নিজের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছি। একটা রাজনৈতিক দলের নেতা তখনই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন যখন সে কর্মীদের বিপদে পাশে থাকবেন। সম্প্রতি কাকদ্বীপের এক কংগ্রেস নেতা গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোটের প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ এই ভোটে দাঁড়ানোর খেসারত হিসেবে তাঁকে বর্তমান শাসক দল নানাভাবে হেনস্থা করে। শেষ পর্যন্ত সে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন,সেখানে সুবিচার পেয়ে এখন সে বাড়ি ফিরতে পেরেছে । কংগ্রেসের বিধানসভার ওই প্রার্থীর অভিযোগ দল তার পাশে কোন দিন ছিল না। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে, বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব জেলার কংগ্রেস নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ রাখেন না। তার ফলে নিরাপত্তার অভাববোধ কিংবা দলের প্রতি অভিমানে মুসলিম কংগ্রেস কর্মীরা দলে দলে তৃণমূলে চলে যাচ্ছে , আর অমুসলিমদের একটাংশ ‍বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে । পরিনতিতে কংগ্রেস দল এ রাজ্যে সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। খাতায়-কলমে বিধানসভায় দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে কংগ্রেস থাকলেও আন্দোলনের ময়দানে কংগ্রেস কোথায় ? তা দূরবীণ দিয়ে দেখতে হবে । কংগ্রেসের কেন এই হাল ? এপ্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, জনসংযোগহীন নেতারা দলের মাথায় বসে থাকার জন্যই কংগ্রেসের এই সংকট । যদি রাহুল গান্ধী পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসকে চাঙ্গা করার আন্তরিক উদ্যোগ  নিতে চান তা হলে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন নেতাকে রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তা না হলে দলের সাইনবোর্ড থাকবে ঠিকই, কর্মী খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এখন প্রশ্ন,তাহলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে কোন নেতাকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ? যাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা প্রশ্নাতীত তাঁকেই এই পদে বসানো উচিত । একই সঙ্গে রাজ্যের সাধারণ মানুষ এবং কংগ্রেস কর্মীদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা কার ? উত্তরটা সবারই জানা তিনি হলেন,সোমেন মিত্র। যাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কংগ্রেস কর্মীরা কেউ প্রশ্ন তুলবে না । দলের দুঃসময়েও তিনি দলে আছেন । কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন, তিনি কংগ্রেস ছেড়ে দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন । কংগ্রেস দলে এরকম নেতার সংখ্যা অনেক যাঁরা দল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর আবার কংগ্রেসে ফিরে এসে সম্মান পেয়েছেন। প্রণব মুখার্জি থেকে শুরু করে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী,পি.চিদাম্বরম সহ অনেক প্রথম সারির কংগ্রেস নেতারা এক সময় কংগ্রেস ছেড়ে আলাদা দল তৈরি করেছিলেন ,আবার কংগ্রেসে ফিরে এসে সমান সম্মান ও মর্যাদা পেয়েছেন। এটাই কংগ্রেস দলের প্রধান বৈশিষ্ট্য তাহলে সোমেন মিত্র কেন সেই সম্মান ও মর্যাদা পাবেন না ? এটা এখন রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের মূল প্রশ্ন । সোনিয়া -রাহুল যদি এ রাজ্যের কংগ্রেসকে নতুন ভাবে এবং নতুন করে গড়ে তুলতে চান তাহলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে সোমেন মিত্র ছাড়া অন্য কারও নাম বিবেচনা করা উচিত নয়। আর যদি রাহুল গান্ধী চান এরাজ্যের কংগ্রেস অন্যের ঘাড়ে মাথা রেখে চলবে তাহলে অবশ্যই সোমেন মিত্রকে বাদ দিয়ে অন্য কোন কংগ্রেস নেতাকে সভাপতি করতেই পারেন। এবার এআইসিসিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসকে সত্যিই তারা বাঁচাতে চান কি না?

Advertisement

শেয়ার করুন
  • 40
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

sixteen − six =