দেশ 

নিজামউদ্দিনের তবলিগি মসজিদে ইসতেমা আয়োজনের জন্য দায়ী কে ? নেপথ্য রহস্য কি ? দিন মজুরদের সমস্যার চেয়ে কী বড় সমস্যা নিজামউদ্দিন ? জানতে হলে ক্লিক করুন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরি :  দিল্লির নিজামউদ্দিনের তবলিগি মসজিদের ইসতেমায় হাজির  ছিলেন দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা । এই ইসতেমা ঘোষিত ছিল পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি । বড় কর্মসূচি । তাই দায় ও দায়িত্ব ইসতেমার আয়োজকদের যে ছিল তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । করোনা ভাইরাস সমগ্র বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে । তাই এই পরিস্থিতিতে এতবড় আন্তর্জাতিক ইসতেমার আয়োজন করা উচিত হয়নি । তবে এক্ষেত্রে সরকারও দায় এড়িয়ে যেতে পারে না । কারণ দিল্লি সরকার যখন দিল্লি জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করল ঠিক তখনই ওখানে ইসতেমা চলছিল । অরবিন্দ কেজরিওয়াল কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার সবাই জানত দিল্লিতে বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসেছে । তাদেরকে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়াটা ছিল মূল কাজ সরকারের । তা না করে ২২ মার্চ জনতা কারফিউয়ের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী । আর জনতা কারফিউকে সম্মান জানিয়ে ইসতেমার আয়োজকরা মসজিদ থেকে কাউকে বাইরে যেতে দেননি ।

এরপরেই কোনো পরিকল্পনা না করেই ২৫ মার্চ থেকে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হল । পরিকল্পনাহীন লকডাউনে কী সমস্যা হয়েছে তা তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৩২ জন মারা গেছে , অথচ দিন মজুর মানুষ নিজের বাড়িতে ফিরতে গিয়ে সরকারের উদাসিনতায় ২৪ জন মারা গেছে । এর দায় নেবে কে ?

Advertisement

আসলে দেশের বিরাট অংশের দিন মজুরদের প্রতি সরকারের বিশেষ করে কেন্দ্র সরকারের যে অবহেলা সেটা আড়াল করার জন্যই নিজামউদ্দিনের ইসতেমাকে তুলে ধরা হয়েছে । এমন একটা ভাব তৈরি করা হচ্ছে যেন নিজাউদ্দিনের তবলিগের ইসতেমায় এদেশে করোনা সংক্রমণের জন্য দায়ী । কেন্দ্র সরকার এবং একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল জাতির এই সংকটের দিনেও বিভেদের রাজনীতি করার চেষ্টা করছে ।

জন্ম-মৃত্যুতে মানুষের কোনো হাত নেই । এটা বড় বড় চিকিৎসকরাও স্বীকার করে নিয়েছেন । তাই নিজামউদ্দিনের ইসতেমায় গিয়ে যে সাত জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে তা সত্যিই আশংকার এনিয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।  কিন্ত  ওই সম্মেলনের জেরেই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই আংশকা সত্যি হল তো এটা স্পষ্ট কয়েক দিন আগে দিল্লির আনন্দ বিহার বাসস্ট্যান্ডে যে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক এক সঙ্গে জড় হয়েছিল তাতে তো প্রধানমন্ত্রী ডাকা লকডাউন কর্মসূচিই বিনষ্ট হয়েছে । তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের উদ্বেগ চোখে পড়ছে না কেন ? নাকি একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে আসামী কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা চলছে ।

গতকাল সোমবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ওই মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, আগে দিল্লিতে এবং পরে গোটা দেশে লকডাউনের জেরে ওই অনুষ্ঠানের পরে গন্তব্যে ফিরতে পারেননি অতিথিরা। তার জন্যেই মসজিদে ছিলেন। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে দিল্লির নিজামউদ্দিন মসজিদে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তবলিগি জামাত। তাতে দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার মানুষ ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তাইল্যান্ড, নেপাল, মায়ানমার, বাংলাদেশ, কিরঘিজস্তান, আফগানিস্তান, আলজিরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, কুয়েত থেকে প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। ওই অনুষ্ঠান শেষে তাঁরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েছিলেন। যেমন ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন তেলঙ্গানায়। এখন এই বিপুল সংখ্যক মানুষ কোথায় কোথায় গিয়েছেন, কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের খুঁজে বের করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারগুলির কাছে।

এই ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে দিল্লি সরকার ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ওই অনুষ্ঠানে অন্তত ১২০০ মানুষ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফিরে গেলেও ছ’তলা ওই মসজিদে থেকে গিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের অন্তত সাড়ে আটশো প্রতিনিধি। ডরমিটরিতে থাকছিলেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই ওই মসজিদ সিল করে দিয়েছে প্রশাসন। সবাইকেই হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর, গত কাল সোমবার তাঁদের প্রায় ৩০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৪ জনের রিপোর্ট পজিটিভ।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিষয়টি নিয়ে তদারকি করা মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই জমায়েতে যোগ দেওয়া লোকজনের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তবে সেটা বিরাট কঠিন কাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রতিদিন বিষয়টির নির্যাস জানানো হচ্ছে। তিনিও নজর রাখছেন। শ্রীনগর ও হায়দরাবাদ মিলিয়ে এই জমায়েতে যোগ দেওয়া কয়েক জনের মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।

অন্য দিকে নিজামউদ্দিন কর্তৃপক্ষের তরফে একটি বিবৃতিতে সাফাই দেওয়া হয়েছে, ‘‘সারা দেশে লকডাউন ঘোষণার অনেক আগেই দিল্লিতে লকডাউন জারি হয়েছে। তাই ওই প্রতিনিধিরা আটকে পড়েছিলেন। ট্রেন ও বিমান পরিষেবা আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ফিরতে পারেননি। সেই কারণেই ওই মসজিদেই থাকছিলেন তাঁরা।

নিরপেক্ষ বিচারে বলা যেতে পারে এটা তো ঠিক যে হঠাৎ করে লকডাউন করে দেওয়া হয় । রাত্রী ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মাত্র চারঘন্টা সময় দিয়েছিলেন লকডাউনের । ১৩০ কোটি ভারতবাসীর কাছে এই চার ঘন্টার সময় কোনো সময়ই নয়। এরফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় আটকে পড়েছেন । তার প্রমাণ মিলেছে দিল্লির রাস্তায় । ১১০০ কিমি পথ হেঁটে বাড়ি ফেরার স্বপ্ন দেখছেন দিন আনা মানুষরা । নিজাউদ্দিনে তবলিগি মসজিদে বাইরে থেকে আসা মানুষদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে মাত্র ! এটা কী খুব বেশি অপরাধ ! সাধারণ মানুষ কী বলেন ?


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

twenty − 10 =