প্রচ্ছদ 

সাত বছরে একটি নতুন মাদ্রাসার অনুমোদন হয়নি,পাঁচ বছর মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, মমতা সরকারের আমলে রাজারহাটে হজ হাউস এবং আলিয়ার ক্যাম্পাস ছাড়া কিছুই হয়নি অভিযোগ প্রাক্তন সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রীর

শেয়ার করুন
  • 2.7K
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

ড. আব্দুস সাত্তার – বামফ্রন্ট সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন(২০০৬-১১)। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের আমূল পরিবর্তন হয়। তিনি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তর এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন গঠনসহ রাজ্যের ৬১৪টি মাদ্রাসাকে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দিয়েছিলেন।সংখ্যালঘু উন্নয়নে আব্দুস সাত্তার সাহেব অনেক কাজ করলেও বাংলার সংখ্যালঘু সমাজ ২০১১র বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টকে সমর্থন করেনি।এমনকি আব্দুস সাত্তারকেও আমডাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্রে হেরে যেতে হয়েছিল।

তারপর কেটে গেছে  সাত বছর ড. আব্দুস সাত্তার অভিমানে সিপিএম দলের সদস্য পদ নবীকরন করাননি।নীরবে নিঃশব্দে দলের যাবতীয় কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে এখন কলেজে পড়াচ্ছেন এবং স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে বাস করছেন।ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে কাজে লাগিয়ে সংবিধানে প্রদত্ত সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট সংখ্যালঘুদের পক্ষেই রায় দিয়েছে।সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে।আশা করা হচ্ছে কয়েকমাসের মধ্যেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংখ্যালঘুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে  সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে চূড়ান্ত রায় প্রদান করবে।এক সময়কার সিপিআইএম এর সংখ্যালঘু মুখ কেন দল ত্যাগ করলেন? বর্তমান রাজ্য সরকার সংখ্যালঘুদের সার্বিক উন্নয়নে কতটা কাজ করেছে এবং তাঁর গঠিত মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন কেন সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জের মুখে ?এ নিয়ে বাংলার জনরবের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন সেখ ইবাদুল ইসলাম । কয়েকটি কিস্তিতে তা প্রকাশ করা হবে আজ দ্বিতীয় কিস্তি।

Advertisement

 প্রশ্ন : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন সংখ্যালঘু উন্নয়নের ৯৯% শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলেছেন।  এ প্রসঙ্গে

আপনার প্রতিক্রিয়া ?

আব্দুস সাত্তার : কোথায় কাজ হয়েছে ? রাজারহাটে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, তৃতীয় হজ হাউস ছাড়া আর কিছুই হয়নি। ২০১১সালে আমরা যখন ক্ষমতা ছেড়ে এসেছিলাম তখন রাজ্যের ৬১৪টি সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসা ছিল।আজ  সাত বছর পরেও একটা নতুন মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অথচ আমরা ১০০টি রেগুলার মাদ্রাসা অনুমোদনের ফাইল ঠিক করে এসেছিলাম । এই  ১০০টি নতুন মাদ্রাসার জন্য শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী মিলিয়ে ৯০০টি পদ ঠিক করা হয়েছিল। বাজেটে আমরা অর্থ বরাদ্দ করে রেখে এসেছিলাম তা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার তা কার্যকর করেনি।আমরা এম এস কে ,এস এস কে নিয়ে ৯০০টি মাদ্রাসা করেছিলাম। এর মধ্যে ৪৯৪টি  এম এস কে , এস এস কে কে অনুমোদন দিয়েছিলাম।মা মাটি মানুষের সরকারের আমলে হাইকোর্টের নির্দেশে একটি এম এসকে কে অনুমোদন দিয়েছে সরকার।কিন্তু বাকী ৪০৫টি এম এস কে ও এস এস কে যদি সরকারি অনুমোদন পেত কম পক্ষে ৩৬০০পদ সৃষ্টি হতো। ১০০টি নিউ সেট আপ মাদ্রাসার জন্য ৯০০।আর এম এস কে ও এস এস কে-র ৩৬০০পদ যুক্ত হলে প্রায় ৪৫০০সংখ্যালঘু ছেলে মেয়ে চাকরি পেত, কিন্তু তা হয়নি।এটা কি উন্নয়ন?
প্রশ্ন: এগুলির জন্য মুখ্যমন্ত্রী কিংবা তাঁর দপ্তর দায়ী হতে পারে না। দায়ী অফিসারেরা। তারা হয়তো এই সব তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনছেন না?

 আব্দুস সাত্তার : এটা তোমার ঠিক ধারণা নয়। আসলে অফিসাররা নির্দেশ কার্যকরী করে মাত্র। পলিসি মেকার হল মন্ত্রী কিংবা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল।

প্রশ্ন:সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব কি হতে পারে?

আব্দুস সাত্তার : বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার কিছু দিন পর বিচারপতি রাজিন্দার সাচ্চারকে নিয়ে এক বৈঠক করেছিলেন।পরে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন সাচ্চার সাহেবের পরামর্শ নিয়ে সংখ্যালঘুদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ হবে। কিন্তু তারপর আর কিছুই দেখা গেল না। সংখ্যালঘুদের সমান অধিকারের কথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতা থাকাকালীন সময়ে বলতেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর দেখা গেল রাজ্যের স্বশাসিত সংস্থাগুলোর মাথায় কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে বসানো হয়নি (সংখ্যালঘু দপ্তর ছাড়া) কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মুসলিমদের সমান অধিকার দেবে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যতিক্রমী হতে পারতেন তা তিনি করেননি।এক্ষেত্রে তাঁর করতে তো কোনো বাধা ছিল না।

তবে একথা ঠিক পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির স্তরে কোনো জেলায় জেলা পরিষদে মুসলিম ব্যক্তিকে প্রশাসনিক পদে বসানো হয়েছে।তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৬জন মারা গেল তাদের মধ্যে ১৪ জনই মুসলিম। এই সংকটে একটাই পথ সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। কোটা সিস্টেমের বাইরে গিয়ে কাজের সুযোগকে বাড়াতে হবে।  জেলায় জেলায় সংখ্যালঘু অফিস মাদ্রাসা শিক্ষা অধিকর্তা দপ্তর এসব তো আমার আমলেই হয়েছিল। ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় সেটাও আমাদেরই পরিকল্পনা। আমাদের আমলে কলকাতা পুলিশের মুসলিম কর্মী ছিল ৯:১৩ শতাংশ । এখন ১ শতাংশ ও বাড়েনি।পাবলিক সার্ভিস কমিশনে ১০ শতাংশ যে চাকরিটা পাচ্ছে সেটা ওবিসি কোটাতেই।


শেয়ার করুন
  • 2.7K
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

four × two =