অন্যান্য 

জনতার প্রতিবাদ / ৩ : সরদার আমজাদ আলী

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

ভারতের রাজনীতির প্রকৃত নিয়ন্ত্রক কে ? স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনৈতিক উত্থান পতনের প্রকৃত নায়ক কারা ? তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার  প্রাক্তন সাংসদ সরদার আমজাদ আলী । বাংলার জনরব-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে এই বিশ্লেষণ । দেশকালের প্রেক্ষাপটে যা আগামী দিনে ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে চিহ্নিত হবে । আজ শেষ  কিস্তি। প্রকাশিত অংশের পর ….

আমাদের বর্তমান আর্থিক পঙ্গুত্ব ছাড়াও , বিশ্বায়ন পরবর্তী বিশ্বের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মেলবন্ধনের ব্যাপারে আমরা বিশ্ব রাজনীতির রসায়নাগারে পরীক্ষিত হতে বাধ্য হচ্ছি  এবং তাও খুব মসৃণভাবে  অবশ্যই নয় । দেশের বর্তমান শাসককূল এবং তাদের তাঁবেদাররা ছাড়া আর কেউই এ সত্য অস্বীকার করবে না ।

Advertisement

এমতাবস্থায় অত্যন্ত সজীব এবং বির্তর্কিত  মানবিক প্রশ্নগুলির সমাধানের উদ্দেশ্যে নিরস্ত্র জনতা  কোনও রাজনৈতিক  নেতৃত্বের মুখাপেক্ষী না হয়ে  নিজেরাই  কেন অগ্রণী হয়েছে – এ জিজ্ঞাসা যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অগণিত সাধারন মানুষ , বিশেষ করে মহিলা, ছাত্র , যুব  তাদের নিজস্ব গোত্র –ধর্ম-সংস্কারের  উর্দ্ধে উঠে  সমবেত প্রচেষ্টায়,  সমস্ত অত্যাচার , অবজ্ঞা এবং অপমানকে অস্বীকার করে, সংখ্যাধিক্যের  মদমত্ততায় যারা বিরোধী শক্তির  সাথে আলোচনার পথে  কোনও আগ্রহ না দেখিয়ে গণতান্ত্রিক রীতির আব্যশিক আঙ্গিককে আমল দেয় না । সেই অনাচারের  বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। বাস্তব ঘটনা এটাই ।

অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলি সরকারী দর্প এবং অস্মিতা সম্পর্কে বিরোধিতার কোনও অনীহা দেখিয়েছে , তা নয় । কিন্ত তাদের মধ্যে সহমতের অভাব এবং কোনো কোনো দলের সন্দেহ জনক  অবস্থান  এবং অনেকের সম্পূর্ণ নীরবতা, ( যার কারণ সম্পর্কে তারাই তথ্যাভিজ্ঞ ) জনগণ সামগ্রীকভাবে  রাজনৈতিক দলগুলি সম্পর্কে  আস্থাহীনতার  সংকটে পড়তে বাধ্য হয়েছে । ফলে, এই অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক আঁধির  মোকাবিলা করতে জনগণকে নিজেদের  শক্তির উপরেই আস্থবান  হতে হয়েছে ।

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণ  ‘বাপুজি ‘ নির্ধারিত এবং অত্যন্ত নিষ্ঠাসহকারে নেহেরু , প্যাটেল –আজাদ এবং  তাঁদের উত্তরসূরীদের  দ্বারা সমাদৃত অহিংস প্রতিবাদের এক  অশ্রুতপূর্ব রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে সেই ঐতিহাসিক প্রতিরোধে সমবেত হয়েছে । জনগণ  দীক্ষিত হয়েছে সেই এক আন্দোলনের আঙ্গিকে যার বর্ণপরিচয় কোনও রাজনৈতিক তত্ত্বে , মতবাদে বা ধর্মপুস্তকে অমিল , যা পাওয়া গেছে – জাতির  আচার বেদ সংবিধানে , যার মর্যাদা চিহ্নিত হয়েছে  কোনও দলের নয় , জাতীয় পতাকায় , যা অনুপ্রানিত করেছে – ক্ষুধা , রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস , মৌলবাদী ধর্মীয়ও বিভাজনের নক্কারজনক প্রবঞ্চনা এবং সরকারী অধিকারের কবল থেকে ‘ আজাদী’র সংগ্রামে , দেশের বহুত্ববাদ মুক্তকন্ঠের পবিত্রাধিকার, ধর্ম , সংস্কার , বিশ্বাস এবং আচার আচরণের স্বাধীকার সংরক্ষণের নায্য সংগ্রামের কর্তব্যবোধে ; অবৈজ্ঞানিক-জাতীয়তাবাদের  এবং বল্গাহীন কর্তৃত্ববাদের  বিরুদ্ধে এক জাতীয় যুদ্ধ ।

মানুষ উপলদ্ধি করতে পেরেছে এই অনিবার্য সংগ্রাম তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে , যা তাদের নিজেদেরই লড়তে হবে । আদালত কিংবা রাজনৈতিক দলের সাজানো সৈনিকরা তাদের আত্মযন্ত্রনার আপ্ত সহায়ক  হতে এগিয়ে  আসবে না । এই দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে , একটা অবিবেচক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, যাদের  লক্ষ্য প্রতিবাদের , অস্বীকৃতির  প্রত্যয়ী কন্ঠকে স্তব্ধ করা – সমঝোতা- সহমর্মিতার  সভ্য সংস্কৃতির  নির্বাসনে , ঘৃণা –বিদ্বেষ –বৈরিভাবের অঙ্গরাখায়  এক  নব্য ফ্যাসিষ্ট রাজত্বের  সূচনা করা ।

এই বিধ্বস্ত রাজনৈতিক বাতাবরণে রাষ্ট্রসংঘের জন্মলগ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান-এর উক্তি স্মরণ করতে হয় , যখন তিনি বিশ্বকে সচকিত করে বলেছিলেন –

‘‘ Fascism did not die with Mussolini ,Hitler is finished but the seeds spread by his disordered mind have firm root in too many fanatical brains. It is easier to remove tyrants and destroy concentration camps than to kill the ideas that gave them birth.”

## সরদার আমজাদ আলীর এই লেখাটি দিল্লি থেকে প্রকাশিত ইংরেজি সাপ্তাহিক  Mainstreme weekly ( march 14,2020) তে  প্রকাশ হয়েছে । বাংলার জনরব বাংলাভাষীদের কথা ভেবে লেখাটির গুরুত্ব উপলদ্ধি করে মূল প্রবন্ধের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা হল । অনুবাদ করেছেন লেখক স্বয়ং । ( শেষ)।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

18 + 12 =