মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবিকতার আধারে প্রশাসন চালান : নাপরাজিত মুখোপাধ্যায়
নাপরাজিত মুখোপাধ্যায় দেশের আইপিএস অফিসারদের কাছে ‘মুখার্জিবাবু’ বলে পরিচিত । আপাদমস্তক বাঙালি । ব্যবহার আচরণে মিষ্টভাষী । অল্প বয়সেই আইপিএস হয়েছিলেন , সময়ের বিচারে প্রায় ৩৭ বছর তিনি একটানা আইপিএস হিসাবে কর্মরত ছিলেন । অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর হওয়া সত্ত্বে বেছে নিয়েছিলেন পুলিশ সার্ভিসকেই । মূলত মানুষের সেবা করার জন্য । দীর্ঘ আইপিএস জীবনের উপর একটি বই তিনি লিখেছেন আগামী ১৭ মার্চ কলকাতা প্রেস ক্লাবে প্রকাশিত হবে । ‘ From Lord Sinha to North Block’ নামে তাঁর লেখা এই গ্রন্থটি আক্ষরিক অর্থে এক জীবন্ত ইতিহাস । এই গ্রন্থটির প্রেক্ষাপটে বাংলার জনরবকে একান্ত সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন ডিজিপি ও মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নাপরাজিত মুখোপাধ্যায় । সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সেখ ইবাদুল ইসলাম । আজ দ্বিতীয় কিস্তি। আগামী কাল জ্যোতিবাবু প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার কারণ সম্পর্কে লেখকের প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হবে ।
প্রশ্ন : আপনার চাকরি জীবনে সাফল্যের রহস্য কি ?
নাপরাজিত : আমার চাকরি জীবনে সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি । সাধারন মানুষ কোনো সমস্যা নিয়ে আসলে তার সমাধানের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করেছি ।
প্রশ্ন : আপনার প্রকাশিত গ্রন্থটিতে কোন কোন দিক আলোচনা করেছেন ?
নাপরাজিত : আমার লেখা বই ‘ From Lord Sinha to North Block’ প্রকৃতপক্ষে সমাজের সবদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । চাকরি জীবনের একটা বড় সময় আমার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর নর্থ ব্লকে কাজ করার সুযোগ হয়েছে । সেই সময় সমগ্র দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের সমস্যাগুলি কী কী ছিল ? তা নিয়ে এই বইয়ে আলোচনা করেছি । বিশেষ করে মাওবাদী বা নকশাল আন্দোলন সহ দেশের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে । একই সঙ্গে রাজ্যেরও আমি গোয়েন্দা প্রধান ছিলাম । সেই সময় কালে ঘটে গেছে , নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের ঘটনা সেসব আমার লেখায় উঠে এসেছে । জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার যে প্রস্তাব ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল , সেই সময়ের ঘটনাবলী আমি খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম । কারণ ওই সময় আমি জ্যোতিবাবুর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম । সেই সব অজানা ঘটনাকে আবার নতুন করে সামনে আনার চেষ্টা করেছি । জ্যোতিবাবু প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব পেয়ে কী বলেছিলেন ? তাও এই লেখায় উঠে এসেছে । এরপর আমি যখন রাজ্য পুলিশের ডিজিপি তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই বিষয়টিও আমার লেখায় এসেছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবিকতার আধারে কীভাবে প্রশাসন চালাচ্ছেন সেদিকটা আমি উল্লেখ্য করেছি ।
প্রশ্ন : রাজ্য পুলিশের কর্তা হিসাবে আপনি খুব কাছ থেকে দুজনকে দেখেছেন জ্যোতি বসু ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদের মধ্যে সেরা কে ?
নাপরাজিত : দুজনই সেরা । জ্যোতিবাবু আবেগকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন না । তিনি প্রশাসনিক কাজকে সবার আগে অগ্রাধিকার দিতেন । আবার মানবিক ছিলেন । কিন্ত রাশভারী লোক থাকার কারণে সেটা প্রকাশ পেত না । আমি ব্যক্তিগতভাবে জ্যোতিবাবুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি । তাঁর সঙ্গে বিদেশ সফরে গিয়েছি । সব দিক বিচার করে বলা যায় জ্যোতিবাবু প্রশাসক হিসাবে দেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রথম সারির প্রশাসক । অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবিক হিসাবে প্রশাসন চালান । তিনি মানবিকতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন । রাজ্য পুলিশের ডিজিপি হিসাবে তাঁকেও খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে ।