কলকাতা 

আইপিএসরা এখন চাকরি করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করেন,সেবা করার মানসিকতা থাকে না : নাপরাজিত মুখোপাধ্যায়

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

নাপরাজিত মুখোপাধ্যায় দেশের আইপিএস অফিসারদের কাছে ‘মুখার্জিবাবু’ বলে পরিচিত । আপাদমস্তক বাঙালি । ব্যবহার আচরণে মিষ্টভাষী । অল্প বয়সেই আইপিএস হয়েছিলেন , সময়ের বিচারে প্রায় ৩৭ বছর তিনি একটানা আইপিএস হিসাবে কর্মরত ছিলেন । অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর হওয়া সত্ত্বে বেছে নিয়েছিলেন পুলিশ সার্ভিসকেই । মূলত মানুষের সেবা করার জন্য । দীর্ঘ আইপিএস জীবনের উপর একটি বই তিনি লিখেছেন যা কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হবে । ‘ From Lord Sinha to North Block’ নামে তাঁর লেখা এই গ্রন্থটি আক্ষরিক অর্থে এক জীবন্ত ইতিহাস । এই গ্রন্থটির প্রেক্ষাপটে বাংলার জনরবকে একান্ত সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন ডিজিপি ও মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নাপরাজিত মুখোপাধ্যায় । সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সেখ ইবাদুল ইসলাম  ।

প্রশ্ন : শ্যামবাজার থেকে রাজ্য প্রশাসনের অন্দর মহলে ‘মুখার্জিবাবু’ আইপিএস নন , একজন দরদী মানুষ হিসাবে পরিচিত । আইপিএসের ঘেরাটোপ সরিয়ে কীভাবে মানুষের আপনজন হয়ে উঠলেন ?

Advertisement

নাপরাজিত  : আসলে আইপিএসও তো একজন মানুষ । সমাজের অংশ । সমাজকে বাদ দিয়ে তো আমি নই । পুলিশের চাকরি করি বলে মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে তো বাধা নেই । আমি মনে করি একজন সাধারন মানুষের সঙ্গে আমার কোনো তফাৎ নেই । আর আইপিএসের পুরো অর্থ হল ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস । সার্ভিস মানে তো সেবা । তাই চাকরির প্রথম জীবন থেকে আজ পর্যন্ত যে দায়িত্ব পেয়েছি তা মানুষের স্বার্থে কাজ করার চেষ্টা করেছি । আপনাদের কথা মত এটা বলতে পারি আইপিএস হয়ে যে মানুষ আমার কাছে সাহায্য চেয়েছে , আমি চেষ্টা করেছি তাকে সাহায্য করতে । গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালীন সময়ে যে কেউ দেখা করতে চাইলে দেখা করেছি , তাদের অভিযোগ শুনেছি । চেষ্টা করেছি সমাধান করার । তবে সবার সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি এটা বলতে পারব না । এটা বলতেই পারি সমস্যার সমাধানে আমার আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না ।

প্রশ্ন : আপনি কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন , ভাল কাজের সুযোগ সবচেয়ে বেশি কোথায় ?

নাপরাজিত : অবশ্যই কেন্দ্রে । কারণ ওখানে অনেক বেশি স্পেস নিয়ে কাজ করা যায় । বিদেশেও কাজের সুযোগ আছে । কেন্দ্রের কাজ অনেক বেশি অর্গানাইজ । তবে রাজ্যও একটা সময় খুব ভাল কাজ করেছে ।

প্রশ্ন : বামেদের আমলে রাজ্য গোয়েন্দা দফতরে তেমন কাজ ছিল না বলে অভিযোগ , কারণ বামেরা সব খবর সংগঠন মারফত নিত এটা কতটা সঠিক ?

নাপরাজিত : এটা সঠিক নয় । আসলে রাজ্য গোয়েন্দা দফতর ৭২-৭৭ এই সময় মানের দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে । তবে বামেদের আমলেও আমি কাজ করেছি ওদের আমলে গোয়েন্দা দফতর ভাল কাজই করেছিল । এটা ঠিক ইদানিং একটু পারফেরমেন্সের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে রাজ্য গোয়েন্দা । আসলে বর্তমানে সমস্যাটা অন্য জায়গা । আইপিএসরা এখন চাকরি করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে আসেন । সেবা করার মানসিকতা থাকে না । ফলে পদের প্রতি মোহ তাদেরকে সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ করে । আমার মনে হয় রাজ্যের কোনো শাসক দল ধর্ষণ , খুনের মামলায় হস্তক্ষেপ করে না । কারণ সবাই চায় দোষীরা শাস্তি পাক । কিন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো চাপ না থাকা সত্ত্বেও অজানা কারণে দোষীদের সঠিক সময়ে চার্জশিট দিতে পারে না পুলিশ ।

প্রশ্ন : পুলিশের ব্যর্থতার নেপথ্যে কী রাজনৈতিক চাপ কাজ করে ?

নাপরাজিত : দেখুন প্রশ্নটা ওখানে নেই । প্রশ্নটা হল পুলিশের আইপিএস হলেন একজন লিডার । পুলিশের এই লিডারশিপ যদি ঠিকমত কাজ না করে তাহলে সমস্যা হবেই । আসলে বর্তমানে লিডারশিপ কোয়ালিটি কমেছে । এর জন্য আইপিএসদের ট্রেনিং-র মানও দায়ী । ট্রেনিংটা বর্তমানে আগের মত হচ্ছে না ফলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে । আর রাজনৈতিক চাপের কথা মানতে পারলাম না । কারণ আগেই বলেছি , কোনো ধর্ষণ বা খুনের মামলায় কোনো রাজনৈতিক দল বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইবে না । প্রত্যেকে বলবে সত্য বেরিয়ে আসুক , দোষীরা সাজা পাক । তাই পুলিশের লিডার হলেন জেলার এসপি বা ডিএসপি। তিনি যদি বিষয়টিকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেন তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হবে । আর দোষীরা শাস্তি পেলে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে ।

প্রশ্ন : মানবাধিকার কমিশনে পুলিশের লোক থাকলে নাকি মানবাধিকার গুমরে মরে বলে অভিযোগ , এ বিষয়ে আপনার অভিমত ?

নাপরাজিত : না । এটা ঠিক নয় । সুপ্রিম কোর্টের রায়ও আছে মানবাধিকার কমিশনে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএসকে রাখা যেতে পারে । আর আমাকে নিয়ে যারা এই ধরনের অভিযোগ করেন , তাদের কাছে আমার সবিনয় অনুরোধ একটা ঘটনা তারা দেখাক যে পুলিশ বলে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে । এমনকি যখন আমি গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলাম তখন আমার কোনো সহকর্মীর বিরুদ্ধে (আইপিএস হলে) কোনো অভিযোগ এলে তার যথাযথ তদন্ত করা হয়েছে । দোষী হলে অবশ্যই শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে । আর তাছাড়া মানবাধিকার কমিশন শুধু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেখে না , একজন মানুষের মানবাধিকার সংক্রান্ত ( শিক্ষা-স্বাস্থ্য সহ একাধিক বিষয় ) সব বিষয় সে দেখে । সুতরাং এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ।

মমতা ও জ্যোতিবাবু সম্পর্কে তিনি নানা অজানা তথ্য দিয়েছেন । আগামী দিনে তা প্রকাশিত হবে । জানতে হলে বাংলার জনরবকে সাবক্রাইব করুন । বেল-আইকনে ক্লিক করুন ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

four × 2 =