কলকাতা 

সংসদ কিংবা সুপ্রিম কোর্ট নয় , ভারতের সার্বভৌমত্ব রয়েছে সাধারন মানুষের কাছে , জনশক্তি-ই গণতন্ত্রের শেষ বিচারালয় দিল্লির নির্বাচন প্রমাণ দিল : সরদার আমজাদ আলী

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : আজ বিকেলেই দিল্লির নির্বাচনের ফল স্পষ্ট হয়ে যায় । বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় অরবিন্দ কেজরিওয়াল । কিন্ত এবারের নির্বাচন ২০১৫-র মত এত সহজ ছিল না । যেনতেন প্রকারণে জিততে হবে এটাই ছিল কেন্দ্রের শাসক বিজেপির মূল মন্ত্র। তাই তারা বিভাজনের রাজনীতিকে হাতিয়ার করে ফেলে । কিন্ত শেষ পর্যন্ত সাধারন মানুষ বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সজাগ হয়ে নিরবে ব্যালটে প্রতিবাদ জানিয়েছে । হেরে গেছে বিজেপি । বলা যেতে পারে গোহারা হেরেছে । এই প্রেক্ষাপটে আমরা কথা বলেছিলাম প্রবীণ আইনজীবী ও প্রাক্তন সাংসদ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক সরদার আমজাদ আলীর সঙ্গে

প্রশ্ন : দিল্লি বিধানসভার ফল নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া ?

Advertisement

আমজাদ : সাধারন মানুষ হিংসা বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে । সংবিধান বাঁচানোর রায় দিয়েছে । ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষা করার জন্য রায় দিয়েছে । বিজেপি যদি এ থেকে শিক্ষা না নেয় তাহলে তাকে মানুষই আস্তাকুড়ে ফেলে দেবে ।

প্রশ্ন : আপনার কি মনে হয় দিল্লিতে এই জয়ের নেপথ্যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের উন্নয়ন কাজ করেছে ?

আমজাদ : অবশ্যই । এটা তো ঠিক কেজরিওয়ালের আমলে উন্নয়ন হয়েছে । তবে দিল্লির উন্নয়নের মূল করিগর শীলা দীক্ষিত । তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলিকে সমাপ্ত করেছে অরবিন্দ কেজরিওয়াল । মূলত চারটি মৌলিক বিষয়ে নজর দিয়েছেন কেজরিওয়াল শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পানীয়-বিদ্যুৎ- জল-পরিবহণ । বাস মেয়েদের জন্য ফ্রি করে দিয়েছেন , ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ফ্রি। শিক্ষার মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন করেছেন কেজরিওয়াল । তবে বিজেপি যেভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাধ্যমে দিল্লিতে ভোট করাতে চেয়েছিল তা মানুষই আটকে দিয়েছে । মানুষ বিভাজন নয় , সম্প্রীতির পক্ষে , বহুত্ববাদের পক্ষে রায় দিয়েছে।

প্রশ্ন : সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলন কি এই ভোটে প্রভাব ফেলেছে বলে আপনার মনে হয় ?

আমজাদ : দেখ ! সিএএ করে অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী যে আস্ফালন দেখাচ্ছিলেন তা চুপসে গেছে । কারণ তাঁরা ভেবেছিলেন এটা করলে সব হিন্দুরা এক হয়ে যাবে । কিন্ত তা হয়নি । বরং সবাই মিলে গেছে । হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ-জৈন সবাই এক হয়ে গেছে । বলা যেতে পারে সংবিধান বাঁচানোর প্রশ্নে ভারতের জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলেই এক হয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে । আর একটা কথা মনে রাখা দরকার । সিএএ পাশ হওয়ার পর কিছু মানুষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে । কিন্ত সুপ্রিম কোর্টও এই আইনের উপর কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি । ফলে সাধারন মানুষ বুঝে নিয়েছে আদালত নয় , গনতন্ত্রের শেষ কথা মানুষ বলবে । আর সুপ্রিম কোর্ট যদি কোনো কারণে এই আইনের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে দিত তাহলে হয়তো আমার দিল্লির শাহিন বাগ দেখতে পেতাম না । দেখতে পেতেম না ডি এস বান্দ্রের উদারতা । যিনি নিজের ফ্লাট বিক্রি করে শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের খাবার জুগিয়ে যাচ্ছেন । আর সেই সঙ্গে শাহিন বাগের মত সমগ্র দেশে কয়েকশো শাহিন বাগের জন্ম হয়েছে । সিএএ না হলে ভারতবাসীর এই একতাবোধ প্রকাশ পেত না । সিএএ বিরোধী আন্দোলন থেকে নয়া দিশার জন্ম হয়েছে যা সমগ্র দেশবাসীকে পথ দেখাচ্ছে । সেই পথ বলছে , সংসদ-আদালত নয় গনতন্ত্রে সার্বভৌমত্ব সাধারন মানুষের হাতে । দিল্লি নির্বাচনে তা হাতে-নাতে প্রমাণ দিয়েছে জনতা।

প্রশ্ন : দিল্লির নির্বাচনের ফল দেখে আপনি কী মনে করেন ?

আমজাদ : দিল্লির নির্বাচন থেকে বিজেপিকে শিক্ষা নিতে হবে । যে পাকিস্থানের রাজনীতির সঙ্গে ভারতের রাজনীতির অনেক তফাৎ আছে । এখানে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য আছে , বিবিধের মাঝে মিলন আছে , এখানে বহুত্ববাদ আছে । তাই এখানে কোনো বিশেষ ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করতে গেলে সফল হওয়া যাবে না । মোদী-শাহ যদি এখনও মেরুকরণের রাজনীতির পথ ধরে থাকেন তাহলে আগামী দিনে দেশের গণ-আদালতেই বিজেপিকে শাস্তি দেবে । সেদিন খুব দেরি নেই ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

twelve − 6 =