অন্যান্য 

৭১ তম সাধারনতন্ত্র দিবসে সংবিধানকে রক্ষার শপথ নিতে হবে ; ৭৪ বছর ধরে আমরা যে স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম তা আজ বিপন্ন!

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : ২৬ জানুয়ারি ২০২০ । সময়ের বিচারে আমাদের দেশের সংবিধান মেনে শাসন ব্যবস্থা ৭১ বছরে পড়ল । এই ৭১ বছরে আমরা সমগ্র বিশ্বের সামনে আমাদের সংবিধানের মূল্যবোধ নিয়ে গর্ব করতাম ।ভীম রাও আম্বেদকরের হাতে রচিত সংবিধান সমগ্র বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল উদাহরণ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে । সমগ্র বিশ্বজুড়ে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের মতামতকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হত । এই ৭১ বছরে আমাদের দেশ সংকটে মধ্যে ছিল না তা নয় । সংকট ছিল , ইন্দিরা গান্ধির জরুরি অবস্থা ছিল । তা সত্ত্বে কেউ বলতে পারবে না দেশের সংবিধান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল । কখনও সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে কোনো কিছু হয়নি । জরুরি অবস্থা সেও ছিল সংবিধানকে মান্যতা দিয়েই । ভারত যখন ফুলে ফলে পল্লবিত হয়ে গণতন্ত্রের বার্তা নিয়ে বিশ্বের দরবারে হাজির , সংহতি , সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে ঠিক তখনই নতুন করে ভারত সংকটে নিমজ্জিত হল ।

আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়ে যারা ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করলেন তাঁরা আজ সংখ্যাগরিষ্ঠের জোরে সাংবিধানিক মূল্যবোধকে অগ্রাহ্য করে একের পর এক বিভাজনের আইন তৈরি করে যাচ্ছে । মানুষের প্রতিবাদকে দেশভক্তির সঙ্গে মেলানো হচ্ছে । সংবিধানে বিক্ষোভ দেখানোর যে অধিকার রয়েছে তাও আজ লুন্ঠিত । বিজেপি শাসিত একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলছেন তা মেনে নেওয়া যায় না ।অথচ আমাদের দেশের সংবিধান যে মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছে তাতে তো এমন হওয়ার কথা ছিল না । রাজনীতি করার অধিকার সকলের আছে । যেকোনো রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি নিতে পারে , তা বলে সংবিধান বিরোধী কোনো কাজ কী করা যায় ? আমাদের দেশের সংবিধান যে মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছে তাতে স্পষ্ট আমরা স্বাধীন । দেশের সরকার হবে মানুষের । জনতা হল আসল সরকার । কিন্ত আজকে ক্ষমতাসীন দল এমন আচরণ করছে মনে হচ্ছে যেন , আমরা ব্রিটিশের যুগে বাস করছি ।

Advertisement

সাংবিধানিক মূল্যবোধকে তোয়াক্কা না করে একের পর এক জনবিরোধী সিদ্ধান্তে দেশের মানুষ কার্যত দিশেহারা । সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন তৈরি করে বিভাজনের রাজনীতিকে মদত দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । সরকারের কোনো দিশা নেই । সংসদে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন , দেশে এনআরসি হবে । আর রামলীলা ময়দানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন , এনআরসি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি । আবার দেশের রাষ্ট্রপতি সংসদের যৌথ অধিবেশনে বলেছেন , এনআরসি হওয়ার কথা । তাহলে কে সত্যি বলছেন ? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । স্বাধীনতার ৭৪ বছর পর সাধারন মানুষকে যদি নাগরিকত্বের প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে হয় তার চেয়ে অপমানের আর কিছু হতে পারে না ।

যে সরকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত । আমার ভোটার কার্ড যদি নাগরিকত্বের প্রমাণ না হয় তাহলে সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়? আর আমাদের ভোটে নির্বাচিত সরকারের কী অধিকার আছে দেশের সাধারন মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করার ? কারণ গণতন্ত্রে দেশের আসল মালিক জনতা । সেই জনতার প্রতিনিধি হয়ে মোদী-অমিত শাহরা দেশের সেবা না করে দেশের মানুষকে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বলছেন এটা অত্যন্ত দূভার্গ্যের বিষয় । আর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সরকার পক্ষ বলছেন এটা নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন কেড়ে নেওয়ার নয় । কিন্ত মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে নাগরিকত্ব আইন রয়েছে , সেই আইনে আমরা সকলকে নাগরিকত্ব দিতে পারি । তাহলে এটা কেন ? প্রশ্ন উঠেছে , পাকিস্থান কিংবা বাংলাদেশে কয়েক কোটি হিন্দুর বাস । তারা যদি সবাই এদেশের নাগরিক হতে চায় তাহলে সরকার কী করবে ? এত মানুষকে জায়গা দিতে পারবে তো ?

আসলে সরকারের মূল কাজ মানুষের সেবা করা । মানুষের স্বার্থে প্রকল্প রচনা করা । সাধারন মানুষের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তাকে জোরদার করা । বেকারের কাজ দেওয়া , শিক্ষার উন্নয়ন ঘটান , সামাজিক পরিকাঠামো তৈরি করা । এসব কোনোটাই মোদী সরকার করেছেন কি ? উত্তর হবে না । সাধারন মানুষকে মূল সমস্যা থেকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভাজনের রাজনীতিকেই হাতিয়ার করেছে মোদী সরকার । আর এজন্য দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়লেও এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন কিছুই হয়নি । আচ্ছে দিনের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে গেছে । বরং বিগত ৭৪ বছর ধরে আমরা যে স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম তা আজ বিপন্ন । তাকে রক্ষা করার জন্য আবার নতুন করে আমাদেরকে পথে নামতে হচ্ছে । সমগ্র ভারত জুড়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনেই সংবিধান বাঁচাও স্লোগানে মুখরিত দেশ । এটাই ৭১ তম সাধারনতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ হোক ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

4 + 17 =