কলকাতা 

এনআরসি ও সিএএ বিরোধী মহামিছিল প্রমাণ করল,মমতা এখনও সাধারণ মানুষের কাছে মমতাময়ী হয়েই বিরাজ করছেন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : বাংলা এবং বাঙালি জাতির উপর নিরব আক্রোশ রয়েছে হিন্দিভাষীদের । একথা আমাদেরকে স্বীকার করতেই হবে । ইতিহাস বলছে , চিত্তরঞ্জন দাসের জাতীয় নেতার হওয়ার সব কিছু গুণ থাকা সত্তে তিনি হতে পারেননি , কারণ তিনি বাঙালি ছিলেন । নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নানাভাবে হিন্দীভাষীরা অপদস্ত করেছিলেন । কেন ? কারণ বাঙালির যে মেধা আছে তার যদি বিকাশ হয় তাহলে ভারতের অন্য জাতিগুলি বাঙালিদের ধারে কাছে আসতে পারবে না । সেই কারণে ইতিহাসে দেখা যায় বাঙালিদের সব সময় দাবিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে । কিন্ত শেষ পর্যন্ত হার স্বীকার করতে হয়েছে । রাজা রামমোহন রায় থেকে শুরু করে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সবার কাছে হারতে বাধ্য হয়েছে হিন্দীভাষীরা । আর ব্রিটিশরা তো বাংলাকে ভাগ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের আতুর ঘরকে ভেঙে দিতে চেয়েছিল । কিন্ত পারেনি । একা রবীন্দ্রনাথ রাস্তায় নেমে ব্রিটিশের সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছিল । বাঙালি জাতীয়তাবাদকে এমন ভাবে জাগিয়ে ছিলেন যে শেষ পর্যন্ত পরাক্রান্ত ব্রিটিশ শাসকও নতজানু হয়ে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়েছিল ।

কিন্ত ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় ধর্মীয় মেরুকরণ থেকে বাংলা ভাগ করার বিরোধী ছিল অনেকেই । কিন্ত শেষ পর্যন্ত বাংলা ভাগ হয়ে যায় । হিন্দু-মুসলমান দুটি ধর্মের ভাগে ভাগ হয় বাংলা । ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা ভাগ যে ঠুনকো ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । কারণ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে এই দাবিতে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্থানে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল । তার শেষ পরিণতি হল আজকের বাংলাদেশ ।

Advertisement

একইভাবে আমাদের ভারতেও বাঙালি জাতির উপর আঘাত এসেছে বারবার । কিন্ত মজার ব্যাপার হল স্বাধীনতার পর থেকে তা কেউ টের পায়নি । কারণ , সেই সময় বাঙালি জাতির যেসব নেতা ছিলেন , বিধান রায় , জ্যোতি বসু , সিদ্ধার্থ শংকর রায় , সৈয়দ বদরুদ্দোজা , গণি খান চৌধুরি মত মানুষ । এদের ব্যক্তিত্বের সামনে কথা বলার কিংবা বাঙালি জাতিকে ছোট করার ক্ষমতা কোনো হিন্দিভাষীর ছিল না । তবে ইন্দিরা গান্ধীর মত নেতারা বাঙালি জাতিকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করত । এমনকি সোনিয়া -মনমোহনের মত ব্যক্তিরাও বাঙালিকে গুরুত্ব দিয়েছেন । প্রণব মুখার্জির মত ব্যক্তিকে তাঁরা রাষ্ট্রপতিও করেছেন । কিন্ত ২০১৪-র পর দিল্লিতে যাঁরা ক্ষমতায় গেলেন তারা কেউ বাঙালি জাতিকে সম্মান দেননি । বরং প্রতি নিয়ত বাঙালি জাতিকে অবহেলা করে চলেছেন । আর তারই পরিণতি আজকের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন । এটা আসলে বাঙালি জাতির মেরদন্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে ।

কিন্ত মোদী -অমিত শাহরা বুঝতে পারেননি বাংলায় আজও একজন নেত্রী আছেন যার কথা এবং কাজের মধ্যে কোনো তফাৎ থাকে না । তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । গত তিনদিন ধরে রাজ্যজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছে তাতে অনেকে বলছিলেন মমতা সরকার অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গেল ।

কিন্ত না আজ কলকাতার ময়দানের আম্বেদকরের মূর্তির সামনে থেকে তৃণমূল নেত্রী যে এনআরসি ও সিএএ বিরোধী মহামিছিল শুরু করলেন বেলা ১ টায় তা দেখে স্পষ্ট হয়েছে বাংলায় মমতার বিকল্প আর কেউ নেই । দিলীপ ঘোষ ! মুকুল রায় ! করতে পারবেন এই রকম মহামিছিল । মমতা পারেন । কারণ মানুষ এখনও মমতার পাশেই আছে । ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জোঁড়াসাকো থেকে যে মিছিল করেছিলেন সাংকেতিকভাবে হলেও আজ মমতা সেই মিছিল শেষ করলেন জোঁড়াসাকোতেই । অর্থাৎ তিনি দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করলেন ।

কারণ তিনি খুব ভাল করেই জানেন কেন্দ্রের পাশ করা আইনের বিরোধিতা করা মানে আগুন নিয়ে খেলা । কিন্ত তিনি খেলছেন সাধারন মানুষ স্বার্থেই । এখানেই মমতা অনন্য । তাই মমতাকে ওই মঞ্চ থেকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা হিংসা সমর্থন করি না। আমার কাছে প্রমাণ আছে, কেউ কেউ বিজেপির টাকা খেয়ে এ দিক ও দিক আগুন জ্বালাচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেউ দয়া করে ট্রেনে আগুন জ্বালাবেন না। বার বার বলছি, ট্রেনে আগুন দেবেন না। পোস্ট অফিসে আগুন দেবেন না। রাস্তায় আগুন দেবেন না। যাঁরা আপনার পক্ষে রয়েছেন, তাঁদের সমস্যা ফেলছেন কেন?’’

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের মতোই এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  মিছিল রেড রোডে বি আর অম্বেডকরের মূর্তির সামনে থেকে রওনা হওয়ার আগে তিনি সকলকে দিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করান, ‘‘আমরা সবাই নাগরিক। সর্ব ধর্ম সমন্বয়ই আমাদের জীবন আদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। নিশ্চিন্তে থাকব। শান্তিতে থাকব। বাংলায় এনআরসি ও ক্যাব করতে দিচ্ছি না। দেব না। শান্তি রাখতে হবে।’’

মিছিল শেষে আত্মবিশ্বাসী মমতাকে দেখে মনে হল এবারও তিনিই জিতবেন । কারণ বাঙালি জাতিসত্ত্বার নাভিমূলে তিনি প্রবেশ করেছেন । বাঙালি হতে পারে বিস্মৃত জাতি , কিন্ত বিপদের দিনে যে বাঙালির পাশে থাকে তাঁকে কোনোদিন বাঙালি ভুলে যাবে না । এনআরসি ও সিএএ বিরোধী মিছিলের মুখ সেটাই প্রমাণ করল,মমতা এখনও সাধারণ মানুষের কাছে মমতাময়ী হয়েই বিরাজ করছেন ।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

12 − one =